আদালতের ডিপোর্টেশন আদেশ পাওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন অবস্থান করা অভিবাসীদের বিপুল অর্থের জরিমানা শুরু করেছেন ইউএস ইমিগ্রেশন এন্ড এনোফোর্সমেন্ট জরিমানা বিভাগ। ইতোমধ্যে ডিপোর্ট আদেশ প্রাপ্ত বিভিন্ন দেশের নাগরিককে দেড় থেকে দুই মিলিয়ন ডলার জরিমানা নোটিশ পাঠিয়েছে ইমিগ্রেশন এন্ড এনোফোর্সমেন্ট কৃর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে ইমিগ্রেশন এন্ড এনোফোর্সমেন্ট নিউইয়র্কে বসবাসরত ৫৫ বছর বয়সী এক অভিবাসী বাংলাদেশীকে ১.৮২০ মিলিয়ন ডলার (যা বাংলাদেশি ২২ কোটি টাকা প্রায়) জরিমানা নোটিশ পাঠিয়েছে। আর এতে ডিপোর্ট আদেশপ্রাপ্ত অভিবাসী বাংলাদেশিরা বিপাকে পড়েছেন।
ইমিগ্রেশন বিশ্লেষকদের ধারণা, আদালতের ডিপোর্ট অর্ডার পাওয়ার পর যারা কোন আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণ করেননি এমন অভিবাসী ব্যক্তিরা এমন জরিমানার মুখোমুখি হতে পারেন। আর জরিমানার এ বিষয়টি আইনী প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি না করলে তার যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হতে পারে আশংকা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশি ৫৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির অ্যাসাইলাম আবেদন ইমিগ্রেশন আদালতে ২০০৫ সালে প্রত্যাখান হয়ে যায়। এতে ডিপোর্ট আদেশ পাওয়ার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যান। এখানে তার পরিবার রয়েছে। তারা সবাই এদেশের নাগরিক। গত সপ্তাহে তাঁর ঠিকানায় ১.৮২০ মিলিয়ন ডলার জরিমানার নোটিশ আসে। ডিপোর্ট আদেশ পাওয়ার পরও এদেশে যতদিন ধরে অবস্থান করছেন সেই দিন হিসেব করে তাঁকে এ জরিমানা করা হয়। ফেডারেল কর্তৃপক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের এ জরিমানা নোটিশ পেয়ে পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। নিরূপায় হয়ে তিনি অ্যাটর্নির দ্বারস্থ হয়েছেন।
২০১০ সালে ইমিগ্রেশন আদালতে অ্যাসাইলাম কেইস প্রত্যাখাত হওয়া এক বাংলাদেশি অভিবাসী যিনি এ খবর শুনে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তিনি জানান, ১৯৯৯ সালে তিনি এদেশে আসেন। এরপর রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে অ্যাসাইলাম কেইস করেন। এর মধ্যে তিনি গ্রিনকার্ডধারী একজন বাংলাদেশিকে বিয়ে করেন। বর্তমানে তাদের দুজন সন্তান রয়েছে যারা এদেশে কলেজে পড়াশুনা করেছে। দীর্ঘদিন পর আদালতের বিচারক সেটি প্রত্যাখান করে ডিপোর্ট আদেশ দেন। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে কোন আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণ করিনি, কারণ এরকম আইন সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলোনা। কোনদিন কোন সমস্যায়ও পড়তে হয়নি।
ওই ব্যক্তি আরো জানান, গত বছর ইমিগ্র্যান্ট সংক্রান্ত বাইডেনের নতুন সুবিধা ঘোষণার পর আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এখন ট্রাম্প প্রশাসন বাতিল করে দিয়েছে। এরকম ঘটনার শুনার পর এটর্নীর কাছে গিয়েছিলাম পরামর্শের জন্য। এটর্নীও আপতত বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার জন্য বলেছেন। এরকম নোটিশ আসলে দ্রত যোগাযোগ করতে বলেছেন। তবে জরিমানা হলে আইনী প্রক্রিয়ায় এরকম জটিল বিষয় থেকে সমাধান পাবো কিনা জানিনা।
ইমিগ্রেশন বিশ্লেষক মইনউদ্দিন নাসের বলেন, বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। ডিপোর্ট আদেশ পাওয়ার পর এরকম যারা কোন আইনী প্রক্রিয়া ছাড়া এদেশে ছিলেন তাদেরকে জরিমানা করার আইন দীর্ঘদিনের পুরোনো। এ আইন এতদির প্রয়োগ করেনি কর্তৃপক্ষ। এখন সেটি প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাই এরকম ঝুঁকিতে যারা আছেন তারা ্এরকম বিষয় ও নিজের স্থাবর সম্পত্তি সবকিছুর আইনীভাবে সুরাহা করা প্রয়োজন। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে আগে থেকে এটর্নীর সাথে পরামর্শ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রেপ্তার হয়ে ডিপোর্ট হওয়া থেকে নিজ থেকে সেলফ ডিপোর্ট এর মাধ্যমে দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। তাহলে ৮ বছর পর আবার বৈধভাবে আবার ফিরে আসার সুযোগ থাকবে। এক্ষেত্রে বুঝেশুনে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার।
ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ও ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী জানান, জরিমানা নোটিশপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তি একজন বাংলাদেশি। তাঁর প্রাইভেসীর জন্য নাম প্রকাশ করা সম্ভব না। ২০ বছর আগে তাঁর অ্যাসাইলাম কেইস আদালতে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যান। এজন্য তাঁকে এ জরিমানা করা হয়েছে।
মঈন চৌধুরী জানান, যারা ডিপোর্ট আদেশ পাওয়ার পরও এদেশে অবস্থান করছেন কোন আইনী পদক্ষেপ ছাড়া তারা এ ধরনের চিঠি এখন পেতে পারেন। এ সংক্রান্ত ইমিগ্রেশন ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের (আইএনএ) ধারায় ১৯৫২ সালের আইনটি ১৯৯৬ সালে আইনটি সংস্কার করা হয়েছিল। সেই আইনের আওতায় এ জরিমানা করা হচ্ছে। আগে এই আইনটি বলবৎ ছিল। কিন্তু কার্যকর ছিল না তেমন। ট্রাম্প প্রশাসন এই আইনের প্রয়োগ করছে। কেউ যদি এরকম জরিমানার চিঠি পান তাহলে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রয়েছে। ইমিগ্রেশন সদয় হলে এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। এজন্য দেরী না করে অ্যাটর্নির সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
Like this:
Like Loading...