বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন

অপরূপ মালয়েশিয়া পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪
The Petronas Twin Towers, the tallest twin towers in the world, are clearly visible in and around Kuala Lumpur. At night, they look like glowing spears in the sky, often jutting out of the skyline.
ছবির মতো সুন্দর মালয়েশিয়া। কুয়ালালামপুর বিমান বন্দর থেকে হোটেলে যাওয়ার পথেই তার প্রমাণ পেলাম। সাজানো গোছানো রাজধানী শহরের চিত্র দেখলেই বুঝা যায় গোটা দেশের দৃশ্য।
প্রাকৃতিক পরিবেশ আর সুপরিকল্পিত নগরায়ণ যে কারও নজর কাড়বে। অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী এই নগরের অন্যতম নিদর্শন পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার।
তাই মালয়েশিয়ার যাওয়ার প্রথম দিন বিকালেই সিদ্ধান্ত নিলাম পেট্রোনাস টাওয়ার দেখতে যাব। ট্রেনিং শেষে বিকালে ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের চার বন্ধু নিয়ে হোটেল থেকে বের হলাম।
পেট্রোনাস টাওয়ার কুয়ালালামপুরের জালান আমপাং এ অবস্থিত( Jalan Ampang)। জালান বানসার থেকে পায়ে হেঁটে স্থানীয় রেলস্টেশনে গেলাম। দ্রুতগতির ট্রেনে চড়ে অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে।
পেট্রোনাস টাওয়ারের আশপাশে ভিড় করেছে বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা। অধিকাংশ পর্যটকই ব্যস্ত ছবি তোলা নিয়ে। আমার সাথের বন্ধুরাও ছবি তোলার জন্য অস্থির হয়ে পড়লো। তাদের ছবি তোলার দায়িত্ব পড়লো আমার ওপর। কিন্তু এত বড় টাওয়ার ছোট মোবাইলে ক্যামেরা বন্দি নিয়ে আমি পড়লাম বিপাকে।
একই ফ্রেমে টাওয়ার আর বন্ধুর অস্থিত্ব বজায় রাখতে গিয়ে আমার অস্থিত্ব বিলীন হওয়ার উপক্রম।
প্রথম যে কয়টা ছবি তুললাম সেগুলোতে বন্ধুদের দেখা গেলেও পুরো টাওয়ার দেখা যায় না। আবার টাওয়ার দেখা গেলে তাদের দেখা যায় না। এমন সংকট থেকে মুক্তি পেতে টাওয়ার থেকে অনেক দূরে গিয়ে তাদের ছবি তুলার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু তাতেও তেমন ফল না পেয়ে মোবাইল নিয়ে শুয়ে ছবি তুললাম।
তারপর আসলো আমাকে ফটোসেশনের পর্ব। ছবি তোলার আগেই আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, আমার মতো খাটো মানুষের ছবি যেই তুলবে তাকেই বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে।ইন্দোনেশিয়ার বন্ধুটি মাটি শুয়েও যখন আমাকে ক্যামেরাবন্দি করতে পারছিল না তখন তার বাস্তব প্রমাণ হলো।টাওয়ারের উচ্চতা দেখে মনে হলো ইন্টারনেট থেকে এর সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা প্রয়োজন। তাই ওখানে বসেই ইন্টারনেটে সার্চ দিলাম।
তথ্য মতে, ৮৮ তলাবিশিষ্ট সুউচ্চ দালানটির মোট টাওয়ারের উচ্চতা ১৪৮৩ ফুট। উচ্চতার দিক দিয়ে এই টাওয়ারটি ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ টাওয়ারের তালিকায় শীর্ষ স্থানে ছিল। অপরূপ সুন্দর এই টাওয়ারটির নকশা করেছিলেন আর্জেন্টাইন স্থপতি চেসার পেলী। এই দালান জোড়ার নিচে প্রায় ১২০ মিটারের ফাউন্ডেশন গাঁথুনি আছে। আরএই ফাউন্ডেশন গাঁথুনি করে দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক খ্যাতনামা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ব্যাচি সোল্টাঞ্চ।
বিশাল টাওয়ায়ের বিশাল নানা তথ্য পড়ে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তাই ভাবলাম, একটু ঘুরাফেরা করে আসলে ভাল লাগবে। আমরা টাওয়ারের পাশেই সুরিয়া কেএলসিসি নামের এই শপিং মলে গেলাম। কিছু কেনাকাটার পর ঘুরতে ঘুরতে চলে গেলাম সিনেমা হলের কাছে।
অত্যাধুনিক মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলে সবাই মিলে ছবি দেখে বের হওয়ার সময় এক বাংলাদেশির সাথে দেখা হল। তিনি ওই সিনেমা হলে চাকরি করেন। রাতে আবার আসলাম টাওয়ারের পেছনের দিকে। কারণ সন্ধ্যার পর থেকেই এখানের পরিবেশ অন্যরকম।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় এখানে আয়োজন করা হয় ওয়াটার শো। অনেকে একে ওয়াটার ড্যান্সিং শোও বলে থাকে। বিভিন্ন মিউজিকের তালে পানির ফোয়ারা থেকে পানির নিসঃরন আর রঙিন আলো দেখলে মনে হবে যেন পানির কোমর দোলিয়ে নাচ করছে।
পানির এমন নাচ দেখে অনেক তরুণ-তরুণীও নাচ শুরু করেন। আবার অনেকে ফ্রেমবন্দি করেন এই অপরূপ দৃশ্য।
রাতের টুইন টাওয়ারের সৌন্দর্য দিনের টুইন টাওয়ারের চেয়ে পুরো ব্যতিক্রম। রাতে এই এলাকার পরিবেশ দেখলে মনে হবে নতুন সাজে সেজেছে গোটা এলাকা।
দৃষ্টি নন্দন এমন স্থানে প্রতিদিন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। উঁচু এই টাওয়ারে উঠারও সুযোগ রয়েছে।
দিনের বেলায় অনলাইন কিংবা কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে চড়া যাবে এই টাওয়ারে। কুয়ালামপুর গিয়ে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার না দেখলে জীবনই বৃথা!
পেট্রোনাস টাওয়ার নিয়ে আরওতথ্য: উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কংক্রিট পেট্রোনাস টাওয়ারের মূল উপাদান। এটি আসলে একজোড়া দালান। টাওয়ারটি বাস্তবায়নে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল জাপানভিত্তিক হাজামা করপোরেশন, দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন এবং কোরিয়াভিত্তিক আরেকটি প্রতিষ্ঠান কুকডোং ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন। বিল্ডিং দুটির মধ্যখানে একটি সংযোগ সেতু আছে, যা ৪১ এবং ৪২তম তলায় অবস্থিত।
এই সেতুটি ৫৮ দশমিক ৪ মিটার লম্বা এবং এর ওজন প্রায় ৭৫০ টন। পেট্রোনাস টাওয়ারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১ মার্চ ১৯৯৩ সালে। দুই দফায় নির্মাণ কাজ শেষে ১৯৯৯ সালের ১ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মুহাম্মাদ এটি উদ্বোধন করেন।
পেট্রোনাস টাওয়ার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মালয়েশিয়ার প্রধান তেলভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পেট্রোনাসের অফিস এখানে। এই পেট্রোনাস কোম্পানির নামেই টাওয়ারটির নামকরণ করা হয়েছে। এখানে আলজাজিরা, বোয়িং, আইবিএম, ক্রওলার নেটওয়ার্ক, মাইক্রোসফট, রয়টার্সসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের দফতরের রয়েছে। পুরো টাওয়ারটির নানারকম সুযোগ-সুবিধা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি ঠিকঠাক রাখার জন্য পেট্রোনাস টাওয়ারের পশ্চিম দিকে একটি ‘সার্ভিস বিল্ডিং’ আছে।
বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় এই ‘সার্ভিস বিল্ডিং’ থেকে তদারক করা হয়। এখানে রয়েছে ৮ তলাবিশিষ্ট শপিংমল। এই শপিংমলটির ৫তলা মাটির নিচে এবং বাকি ৩তলা সমতলে অবস্থিত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com