গত ৮ মার্চ, বুধবার সন্ধ্যায় অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট ভবনের বোর্ডরুম ৩৫১’তে পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় নেতা মেরিট স্টিলস এবং উপনেতা ডলি বেগম এর উদ্যোগে আড়ম্বরের সাথে ‘বাংলাদেশী হেরিটেজ মান্থ’ উদযাপিত হয়। এ অনুষ্ঠানে বর্তমান অন্টারিও’র বিরোধী দল এনডিপি’র বার জন এমপিপি ছাড়াও টরন্টোতে বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্ক্যারবরো সাউথওয়েস্ট এর এমপিপি ডলি বেগম উপস্থিত সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, মার্চ মাস বাংলাদেশীদের জাতীয় জীবনে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। সেই মাসকে অন্টারিও’র পার্লামেন্ট কর্তৃক ‘বাংলাদেশী হেরিটেজ মান্থ’ ঘোষণা নিঃসন্দেহে কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশীদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এই ঘোষণা এটাই প্রতীয়মান করে যে, কানাডায় বাংলাদেশীদের অবদান ও অবস্থান অন্টারিও’র সরকার অতি গুরুত্বের সাথে দেখে। ডলি বেগম তাঁর বক্তব্যে বলেন, এনডিপি পার্টি সব সময় সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে এবং সাধারণ মানুষের মঙ্গলের জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করে। তিনি আরও বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠানে এনডিপি’র বেশ কয়েকজন এমপিপি উপস্থিত আছেন, যাদের সাথে বাংলাদেশী কমিউনিটির বিভিন্ন স্তরের সদস্যদের সাথে একটা পরিচয় ও মত বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
নিঃসন্দেহে আমাদের সবার সার্বিক উন্নয়নে এমন একটা পরিবেশ খুবই বেশি প্রয়োজন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, জনগণ এনডিপি’র সাথে থাকবে, কারণ এনডিপি সব সময় সাধারণ মানুষের কথা ভাবে ও তাদের কষ্টটা উপলব্ধি করে। সেজন্য এনডিপি সব সময় চায়, কিভাবে অভিবাসী ও সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটানো যায়। ডলি বেগম এনডিপি’র উপস্থিত অন্যান্য এমপিপি’দের সাথে বাংলাদেশীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার সাথে সাথে উচ্ছ¡াসের সাথে জানান, অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টকে এখন বাংলাদেশীদের ‘হাউস’ বলা যেতে পারে।
ডলি বেগমের বক্তব্যের পর উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন ডেভানপোর্ট থেকে নির্বাচিত এমপিপি ও অন্টারিও এনডিপি’র প্রধান এবং প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় নেতা মেরিট স্টিলস। এমপিপি মেরিট স্টিলস এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে এনডিপি’র পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, কানাডা একটি বহুজাতিক দেশ। এই দেশের সার্বিক উন্নয়নে অভিবাসীদের এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কানাডায় বসবাসরত অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশীরা এক উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশীদের যেমন খুবই উন্নত মানের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে, তেমনি কানাডার বহুজাতিক সংস্কৃতিতে অতি স¤প্রীতির সাথে বসবাসের এক সুন্দর মানসিকতা রয়েছে, যা এই সমাজ ব্যবস্থাকে প্রতিনিয়ত সুন্দরতর করে তুলেছে।
বাংলাদেশীদের পরিশ্রম এবং নিজেদের জীবনকে প্রতিনিয়ত সুন্দর করার অদম্য প্রচেষ্টা স্মরণ করার মত। মেরিট স্টিলস আরও বলেন, তাঁর দল সাধারণ মানুষের কথা ভাবে এবং সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে অন্টারিও’র সাধারণ মানুষের মূল প্রয়োজন স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং বাসযোগ্য স্থান। এনডিপি এগুলোকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে এবং নতুন নতুন কার্যকরী কর্মসূচী গ্রহণ করছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এনডিপি অবশ্যই অন্টারিওবাসীর সার্বিক মঙ্গলের জন্য সব সময় কাজ করে যাবে। বাংলাদেশী হেরিটেজ মান্থ’ এর অনুষ্ঠানে মেরিট স্টিলস এবং ডলি বেগম ছাড়াও এনডিপি’র যে সকল এমপিপি উপস্থিত ছিলেন তাঁরা হচ্ছেন, হ্যামিল্টন মাউন্টেন এর মনিক টেইলর, নাইগ্রা ফলস এর ওয়েন গেটস, স্প্যাডাইনা- ফোর্ট ইয়র্কের ক্রিস গ্লোভার, সাডবারির জেমী ওয়েস্ট, টরন্টো সেন্টারের ক্রিস্টিন ওং-টাম, থান্ডার বে-সুপিরিয়র নর্থ এর লইসে ভোএগিয়স, লন্ডন-ফ্যান্সো’র তেরেসা আর্মস্ট্রং, ওয়াটার লু’র ক্যাথরিন ফিফে, ইউনিভার্সিটি-রোজডেলের জেসিকা বেল এবং সেন্ট ক্যাথরিনের জেনী স্টিভেন্স।
উপস্থিত এমপিপি’দের মধ্যে স্প্যাডাইনা-ফোর্ট ইয়র্কের ক্রিস গেøাভার ‘বাংলা কাগজ’ এর সম্পাদক মনিস রফিকের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কানাডার অর্থনীতিতে বাংলাদেশীদের অবদান আমি সব সময় শ্রদ্ধার সাথে স্বীকার করি। বাংলাদেশীরা এমন এক কমিউনিটি, যারা খুবই পরিশ্রমী এবং প্রতিনিয়ত এই সমাজ ব্যবস্থাকে আরও সুন্দর করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই মার্চ মাসকে বাংলাদেশী হেরিটেজ মান্থ হিসেবে ঘোষণা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশীদের প্রতি অন্টারিও’র একটা বড় স্বীকৃতি। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এনডিপি আগামীতে অন্টারিও’তে সরকার গঠন করতে পারলে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, গৃহায়ন এবং মজুরী নিয়ে ইতিবাচক কাজ করবে, যাতে সাধারণ মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে পরিবার নিয়ে বসবাস করতে পারে। অনুষ্ঠানে দোতারায় বাংলাদেশের সঙ্গীত পরিবেশন করেন জোনায়েদ আনোয়ার। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট বিল ৪৪ এর মাধ্যমে মার্চ মাসকে ‘বাংলাদেশী হেরিটেজ মান্থ’ হিসেবে ঘোঘণা দেয়।