দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেক দেশ তাদের সামরিক শক্তির পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু এই যুদ্ধে ক্ষতি হয়েছে অগণিত সৈন্য এবং সাধারণ মানুষ। যার বিবরণ লিখলে ইতিহাসের একটি সম্পূর্ণ বই লেখা যাবে। আর যুদ্ধের কারণ বা ফল সবটাই পাশ্চাত্য ইতিহাসের বই গুলি পড়লে বুঝতে পারবেন। তবে এই যুদ্ধে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কয়েকটি শক্তিশালী দেশ তথা জাপান এবং জার্মানির সাথে সাথে আরো একটি দেশ এই যুদ্ধের কবলে পরে তার নাম পোল্যান্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটি জার্মানির হিটলারের স্বৈরাচারী মনোভাব এবং স্বাসন ব্যবস্থার কাছে সব থেকে বেশি নিগৃহীত দেশ গুলির মধ্যে একটি ছিল। একটা সময় নিগ্রহের পরিমান এতটাই বেশি হয়ে যায় যে যার সেখানকার মানুষের অস্তিস্ত টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে পরে। কিন্তু এই সব প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে, পোল্যান্ড বর্তমানে এক উন্নত দেশ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।
পোল্যান্ডের ইতিহাসে চোখ দেখা যায় দেশটি বেশ কয়েক দশক যাবৎ স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে যাচ্ছিলো। এর ফলে কয়েক বার তারা স্বাধীনতা পেতে সক্ষমও হয়েছিল কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্বের শেষ সময়ে ট্রিটি অফ ভের্সাইল্লিস এর মাধ্যমে দেশটি পুনরায় স্বাধীনতা পায়। কিন্তু এই স্বাধীনতা দিন টিকে থাকে নি। ১৯৩৯ সালে যখন জার্মানির হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করেন এর মাধ্যমেই দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে যা যা ঘটে ছিল তাকে ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায় বললে ভুল হবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটি কোনোরকম স্বাধীনতা পেলেও সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বিশেষ ভাবে থেকেই যায়। কিন্তু এর অবসান ঘটে ১৯৮৯ সালের বিপ্লবের ফলে। সেই সময় বেশ কয়েক বছর কমিউনিস্ট স্বাসনের অবসান ঘটিয়ে পোল্যান্ড একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।
ইউরোপ মহাদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত পোল্যান্ড দেশটিকে আধিকারিক ভাবে পোল্যান্ড প্রজাতন্ত বলা হয়। পোল্যান্ডের সর্বমোট আয়তন ৩ লক্ষ ১২ হাজার ৬৬৯ বর্গকিমি। এবং পৃথিবীর মানচিত্রে ৬৯ তম স্থানে থাকা দেশটি বর্তমানে স্বাশন ব্যবস্থার সুবিধার্থে ১৬ টি প্রশাসনিক উপবিভাগে বিভক্ত। যার চার দিকে রয়েছে ইউক্রেন, স্লোভাকিয়া, জেক অফ রিপাবলিক, জার্মানির মতো দেশ গুলি। ২০১৪ সাল পর্যন্ত পোল্যান্ডের জনসংখ্যা ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ ৮৩ হাজার ৯৫৭ জন এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে ৩৪ তম স্থানে থাকা পোল্যান্ড দেশটির প্রতি বর্গকিমি জায়গায় ১২৩ জন বসবাস করে। পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ। একটা সময় এই জায়গাটি অতন্ত্য সুন্দর ছিল কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের সময় জার্মানির আক্রমণের ফলে জায়গাটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে পোল্যান্ডের এই শহরটি সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হয়। এর কারণ হিসাবে বলতে গেলে দেখা যাবে পোল্যান্ডের কিছু বৈজ্ঞানিক কেন্দ্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর গুলি এই পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে অবস্থিত। এই জন্যই বলা হয় যে ইউরোপের কিছু বিশাল বিশাল ইমারতে ভরা শহর গুলির মধ্যে ওয়ারশ একটি। এই শহরটির প্রাচীন ঐতিহ্য এবং মর্যাদার কথা বিবেচনা করেই হয়তো শহরটির পুরাতন অংশটিকে আজ উনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। এই জায়গাটিকে ওয়ারশ ওল্ড টাউনও বলা হয়।
পোল্যান্ডের নাগরিকদের পলিশ বা পোল বলা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অগণিত মানুষের মৃত্যুর ফলে দেশটির জনসংখ্যা অনেক কমে যায়। তাই হয়তো মনে করা হচ্ছে বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যা যা রয়েছে তার দ্বিগুন হতে অনেক সময় লেগে যাবে। সম্প্রীতি পাশ্চাত্য দেশ গুলি যখন আর্থিক সংকটে ভুগছিল তখন ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলির অর্থনীতি বেশ খারাপের দিকে পৌঁছায়। কিন্তু এর মধ্যেও পোল্যান্ডের অর্থনীতি খুব একটা নিচে নামে নি। কারণ পোল্যান্ডের অর্থনীতি সেই সময় স্থিতিশীল ছিল যার ফলে পোল্যান্ডকে এই সংকটে পড়তে হয় নি।
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশর পর সব থেকে পুরোনো এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো ক্রাকোও। এই সংহতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির অধিকৃত পোল্যান্ডের রাজধানী হিসাবে গণ্য হতো। এবং এই শহরে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ক্রাকোও ঘেটো চোখে পরে। যা সেই সময়ের জার্মানির অত্যাচারের স্বরূপ হিসাবে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। তবে শহরটি প্রাচীনকাল থেকে একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হয়। ঐতিহাসিক স্থান হিসাবেও ক্রাকোও শহরটি খুবই জনপ্রিয়। তাই ক্রাকাও আজ একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থল।
বর্তমানে পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলির বেশিরভাগ টাই ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্গত। তাই এইসব উন্নত দেশ গুলির আধুনিকতা যত বেড়েছে দেশে বড়ো বড়ো শহরও নির্মাণের কাজ তত শুরু হয়েছে। কিন্তু তার সাথে এই দেশ গুলিতে বন্য জন্তু গুলিও জন্য যে বনজঙ্গল রয়েছে তাও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। আর বনজঙ্গলের অংশ কমে যাওয়ায় কিছু ইউরোপীয় বাইসন এবং ব্রাউন বিয়ারের মতো কিছু প্রাণী দিন দিন লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পোল্যান্ডে অবস্থিত বিএলওয়েজা নামক জঙ্গলে এখনো সেই প্রাণী গুলিকে মুক্ত অবস্থায় দেখা যায়।
পৃথিবীতে পোল্যান্ড এমন একটি দেশ যেখানে ড্রাগনের মুখ দিয়ে সত্যি কারের আগুন বের হয়। তবে ব্রোঞ্জ দিয়ে নির্মিত এই ড্রাগনটি কৃত্তিম কিন্তু আগুনটা সত্যিকারের যেটা প্রাকৃতিক গ্যাসের সাহায্যে জ্বালানো হয়। ক্রাকাও তে গিয়ে মূর্তিটির সামনে দাঁড়িয়ে সমস করে বললেও মূর্তিটি দিয়ে আগুন বের হয়। আসলে ড্রাগনের স্ট্যাচুটি স্বাস ফেলার সময় সেই অগুনতি বের হয়। এই স্ট্যাচুটি নির্মাণ করেন পোলান্ডেরই এক মূর্তি প্রস্তুতকারক ব্রোনিসলাও ক্রমী। এবং বর্তমানে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের কাছে এটি খুবই পছন্দের জায়গা।
বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিদ্যাতেও পোল্যান্ড অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। বহুকাল আগে থেকেই পোল্যান্ডের বৈজ্ঞানিকেরা তাদের আবিষ্কারের দ্বারা দেশটিকে বিশ্বের বিজ্ঞান সমাজের শিখরে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে। যেখানে বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক মেরি কুরী জন্মে ছিলেন। রসায়ন বিজ্ঞানে তেজস্ক্রিয়তার অনুসন্ধান কার্যে যার অবদান সবচেয়ে বেশি রয়েছে। এবং পৃথিবীর চারদিকে যে সূর্য প্রদক্ষিণ করে চলেছে এই ধারণাকে সর্বপ্রথম ভুল প্রমান করেন নিকোলাস কোপারনিকাস নামের এক পোল্যান্ডের বৈজ্ঞানিক। তো বুজতেই পারছেন বিজ্ঞানের দিক দিয়ে ইউরোপের অন্য সব দেশ গুলির থেকে পোল্যান্ড কতটা এগিয়ে রয়েছে।