ভ্রমণ সিঙ্গাপুর সারা বিশ্বের ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে কাঙ্ক্ষিত এক পর্যটন স্থান। সিঙ্গাপুর আধুনিক স্থাপত্য শৈলী আর অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মহাদেশের একটি একটি ছোট্ট দ্বীপ রাষ্ট্র। দেশটি মালয় উপদ্বীপের নিকটে অবস্থিত। সিঙ্গাপুরের পোর্ট বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম বাণিজ্যিক পোর্ট। দক্ষিণ এশিয়ার বিলাসবহুল দেশ এটি। সিঙ্গাপুরের দর্শনীয় স্থান সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ার সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের মধ্যে মেরিনা বে-তে অবস্থিত সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ার কে সিম্বল সিঙ্গাপুর হিসাবে ধরা যায়। ২০০৮ সালে চালু হওয়া সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ার হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু একটি ফ্যারিস হুইল বা নাগরদোলা। এই নাগরদোলা থেকে সম্পূর্ণ সিঙ্গাপুর শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। ২৪০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত বিশালাকৃতির ফ্যারিস হুইলটির উচ্চতা ১৬৫ মিটার। সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ারে সর্বমোট ২৮ টি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ক্যাপসুল রয়েছে এবং প্রতিটি ক্যাপসুলে একত্রে ২৮ জন রাইডে চড়তে পারে। সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ারের মেঝে তিনটি ফ্লোর বা স্তরে বিভক্ত, যার বিভিন্ন অংশ হতে রেস্টুরেন্ট, দোকান এবং অন্যান্য পরিষেবা প্রদান করা হয়। সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ার থেকে দিন বা রাতের ৩৬০ ডিগ্রি দৃশ্য দেখার অপূর্ব সুযোগের পাশাপাশি রাইড চলাকালীন সময়ে চাইলে ৩২৯ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে এখানে বসে ডিনার করার অসাধারণ অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারবেন। সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ার সকাল ৮ টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে। ৩০ মিনিট স্থায়ী প্রতিটি রাইডের টিকেটের মূল্য শিশুদের জন্য ২১ মার্কিন ডলার, প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৩৩ মার্কিন ডলার এবং ফ্যামেলি প্যাকেজের মূল্য ৭৮ মার্কিন ডলার।
মেরিনা বে স্যান্ডস মেরিনা বে স্যান্ডস বা সংক্ষেপে এমবিএস হচ্ছে সিঙ্গাপুরের একটি অত্যাধুনিক রিসোর্ট কমপ্লেক্স। ২০১০ সালে নির্মিত ৫৭ তলা বিশিষ্ট মেরিনা বে স্যান্ডস বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। মেরিনা বে স্যান্ডসে রয়েছে আবাসিক হোটেল, বিশ্বের সেরা সব ব্র্যান্ডের শোরুম, কৃত্রিম আইস স্কেটিং কোর্ট, রেস্টুরেন্ট, কনভেনশন সেন্টার, থিয়েটার, জিমনেসিয়াম, শপিংমল, ক্যাসিনো, আর্টসায়েন্স মিউজিয়াম এবং মেরিনা বে স্যান্ডস স্কাইপার্ক। স্কাইপার্ক থেকে এক নজরে সমগ্র সিঙ্গাপুর দেখা যায়। ২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত জাহাজাকৃতির স্কাইপার্কে আছে পর্যবেক্ষন ডেক এবং ইনফিনিটি পুল। যেকোন দর্শনার্থী স্কাইপার্কের পর্যবেক্ষন ডেকে গিয়ে সিঙ্গাপুর শহর দেখতে পারলেও কেবলমাত্র এখানে আগত হোটেলের অতিথিরা ইনফিনিটি পুল ব্যবহার করতে পারেন। প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারে নির্মিত মেরিনা বে স্যান্ডস যেন শহরের ভেতর আরও একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শহর। মেরিনা বে স্যান্ডস থেকে রাতের সিঙ্গাপুর দেখতে খুবই অসাধারণ লাগে। প্রতি বছর শুধুমাত্র ইনফিনিটি পুলে সাতার কাটার জন্য অসংখ্য পর্যটক মেরিনা বে স্যান্ডসে আসেন। এখানে এক রাতের জন্য সর্বনিম্ন রুম ভাড়া ৪৫০ ডলারেরও বেশি। আবার বুকিংয়ের তারিখ অনুযায়ী রুমের ভাড়া পরিবর্তিত হয়।
সেন্তোসা সিঙ্গাপুরের দক্ষিণে অবস্থিত অসাধারণ জায়গা সেন্তোসা। সময় কখন যে ফুরিয়ে গেছে তা মালুমও করতে পারবেন না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে কাটিয়ে দেওয়া যায়। সেখানে রয়েছে অনেক গ্যালারি, আকর্ষণীয় দেখার জিনিসপত্র, অ্যামিউজ়মেন্ট পার্ক সহ অন্যান্য নানা আকর্ষণ। তাছাড়াও সেখানে রয়েছে অসাধারণ সব রিসোর্ট, ওয়াটার পার্ক, ইউনিভার্সাল স্টুডিও, ক্লাব হাউস। এমনকী, সেখানে গেলে মজা নিতে পারবেন ইন্ডোর স্কাই ড্রাইভিংয়েরও। জুরং বার্ড পার্ক বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে পার্কটি। তা শুধু সিঙ্গাপুরেই নয়, এশিয়ার মধ্যেই সবচেয়ে বড় পার্ক। পার্কতে মোট ৪৯টি ভাগ রয়েছে। যেখানে পাঁচ হাজারেরও বেশি পাখির প্রজাতির বসবাস। সবমিলিয়ে বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র। সেখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ আভাইরি জলপ্রপাত। আশপাশের পরিবেশ এতো সুন্দর, যে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন।
বোটানিক গার্ডেন ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের আওতায় রয়েছে বোটানিক গার্ডেন। অসাধারণ সুন্দর সাজানো গোছানো গার্ডেনটি। ১৮২২ সালে স্যার স্ট্যাম্ফোর্ড রেফলস্ গার্ডেনটি তৈরি করেন। তবে পরবর্তীকালে তার অবশ্য ভোল বদলে যায়। দেশ বিদেশের মানুষের ভিড় লেগেই রয়েছে সেখানে। সিঙ্গাপুরের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এই বোটানিক গার্ডেনের মধ্যেই আছে ‘ন্যাশনাল অর্কিড গার্ডেন অফ সিঙ্গাপুর’। ১৯৯৫ সালে সিঙ্গাপুরের জাতির পিতা প্রেসিডেন্ট লি কুয়ান উদ্বোধন করেন ন্যাশনাল অর্কিড গার্ডেন। তিন হেক্টর জমি নিয়ে এটি অবস্থিত। এতে প্রায় ১০০০ প্রজাতির অর্কিড আছে এবং আছে অসংখ্য হাইব্রিড। এই বাগানের সবচেয়ে নজরকাড়া দিক হল এর বিভিন্ন গাছ এবং অর্কিড এর কালার কম্বিনেশন। অধিকাংশ ভিজিটরই এখানে পায়ে হেঁটে ঘুরে ঘুরে ডিসকভার করতেই পছন্দ করে। তবে দেশ বিদেশের প্রিমিয়াম ট্রাভেলারদের জন্য আছে প্রিমিয়াম বাস যা অর্কিড গার্ডেন এ যাত্রীদের নামিয়ে দেয় এবং এখান থেকে নিয়ে যায়। আছে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট এবং কফি শপ যা এখানকার প্রকৃতি এবং সবুজ পরিবেশের সাথে সুন্দর করে ম্যাচ করে সাজানো হয়েছে যাতে একটুও বেখাপ্পা না লাগে। এমনকি এই বাগানের পাবলিক টয়লেটটিও গাছপালা এবং ফুল গাছ দিয়ে ঢেকে দেওয়া, দেখে মনে হবে যেন টয়লেটটাই আস্তো এক বাগান। পোস্ট ওয়েডিং, প্রি ওয়েডিং ফটোগ্রাফীর জন্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এটা। এখানে বেশ কিছু লের্নিং এবং ইনফরমেশন সেন্টার আছে যা আপনাকে পরিবেশ, প্রকৃতি, অর্কিড, গাছপালা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে জ্ঞান আহরণ করতে সহায়তা দিবে। আর এই সবকিছুই একদমই ফ্রী। চায়না টাউন এখানে দেখতে আর শপিং এর জন্য যাওয়া যেতে পারে। চায়না টাউন এম আর টি স্টেশন থেকে বের হলেই চায়না টাউন। এটুকু নিশ্চয়তা দেয়া যায় যে কিছু না কিছু কেনার মতো অবশ্যই পাবেন।
এখানে রাস্তায় অনেক স্ট্রিট ফুড আছে, যেমন – স্পেশালি বড় চিংড়ি, বিফ কাবাব, সি ফুড, সুপ, মালায়া সাতে, নুডলস, টম ইয়াম সুপ ইত্যাদি আছে। Maxwell Food Centre চায়না টাউন থেকে হেঁটে কিছুটা সামনে গেলে ম্যাক্সওয়েল ফুড সেন্টার। এখানে খাঁটি সিঙ্গাপুরের খাবারের স্বাদ পাওয়া যাবে। এখানে দুই সারিতে স্ট্রিট ফুডের দোকান মাঝে খাবার জায়গা। অনেক টুরিস্ট আসে খেতে, লাইন ধরতে হয় খাবারের জন্য। বিভিন্ন জুস সহ চায়না টাউন এর মতই খাবার। আমরা ছবি দেখে কিছু খাবার অর্ডার দিলাম। স্বাদ মোটামুটি।