বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

পদ্মা সেতু দিয়ে ৩ ঘণ্টায় বরিশাল ৫ ঘণ্টায় কুয়াকাটা

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২

স্বপ্নের পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার প্রথম দিন রোববার রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টায় বরিশালে পৌঁছেছে যাত্রীবাহী বাস। শনিবারও যেখানে সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশাল পৌঁছতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লাগতো সেখানে মাত্র ৩ ঘণ্টায় একই পথ পেরুনোয় যাত্রীরা অবাক হয়েছেন। এছাড়া ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে মাত্র ৫ ঘণ্টায় পৌঁছানো যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর কল্যাণে সড়ক পথের যোগাযোগে এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তনে আনন্দে ভাসছে বরিশালসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যাত্রীবাহী বাস কত সময়ে বরিশালে পৌঁছায় তা দেখতে নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে বেশকিছু উৎসুক জনতা ভিড় করে। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ টার্মিনালে প্রবেশ করে সাকুরা পরিবহণের একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস। বাসের সুপারভাইজার মো. নাসির বলেন, সব কিছু যেন স্বপ্নের মতো। মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর টোলে ভিড় থাকায় খানিকটা দেরি হলেও ৩ ঘণ্টার মধ্যে আমরা বরিশালে পৌঁছেছি। ঢাকা থেকে ভোর সাড়ে ৬টায় ছেড়ে সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে বরিশালে পৌঁছেছি। একই বাসের যাত্রী ইমরান আহম্মেদ বলেন, ভোরে সায়েদাবাদ থেকে সাকুরার বাসে উঠি। মাত্র ৬ থেকে ৭ মিনিটে বাস পদ্মা সেতু পার হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সেতু পার হওয়ার পর প্রাপ্তির আনন্দে চোখে হালকা ঝিমুনি আসে। ভোরের মিঠে কড়া রোদ বাসের কাচ ভেদ করে মুখে লাগছিল।

হঠাৎ ঝাকি আর সুপারভাইজারের ডাকাডাকি। বরিশাল পৌঁছে গেছি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল সাড়ে ৯টা। এ যেন স্বপ্নের মতো। বাসে চড়ে এতো তাড়াতাড়ি বরিশালে পৌঁছানো যাবে তা কখনো কল্পনাও করিনি।’ একই অভিজ্ঞতা ইলিশ পরিবহণের বাসে করে ঢাকা থেকে বরিশালে আসা আরেক যাত্রী নাসরিন খানমের। যুগান্তরকে তিনি বলেন, সায়েদাবাদ থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় ছাড়ে ইলিশ পরিবহণের বাস। পরিকল্পনা ছিল সেতু উদ্বোধনের দিন বরিশালে আসব। সাড়ে ৮টার বাসে উঠে সাড়ে ১১টায় যখন বরিশাল বাস টার্মিনালে এসে নামলাম তখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এওকি সম্ভব? এর আগে কখনোই ৭-৮ ঘণ্টার নিচে এ পথ পাড়ি দিতে পারিনি। দৌলতদিয়া হয়ে গেলে তো ১০-১২ ঘণ্টা লেগে যেত। ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেছি। এমনও হয়েছে কুয়াশার কারণে ফেরি না ছাড়ায় সারারাত নদীর পাড়ে বসে থেকেছি। এ রুটে চলা বাসের চালকরা জানান, ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত যে সড়ক তা প্রস্থে মাত্র ২৪ ফুট, সরু সড়ক হলেও যেখানে মাত্র ৩ ঘণ্টায় গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছি। সড়ক প্রশস্ত হলে আরও কম সময়ে পেরুনো যাবে।

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সুদীপ হালদার বলেন, অনেকের কাছে বিষয়টি পদ্মা পাড়ি মনে হলেও আমাদের কাছে পদ্মা সেতু যে কতবড় একটি আবেগের নাম তা কেবল আমরা জানি। বরিশালে অনেক জটিল রোগীর চিকিৎসা করার মতো সুযোগ নেই। আবার সড়ক দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কারণে অনেক জরুরি রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠাতে হয়। বহুবার এমন ঘটেছে, সময়মতো ফেরি না পাওয়ায় ঘাটেই রোগী মারা গেছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এরকমটা আর ঘটবে না বলেই আমাদের আশা।

বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, পদ্মা নদী পুরো দেশকে দ্বি-খণ্ডিত করে রেখেছিল। পদ্মা ছিল আমাদের দুঃখের প্রতীক। কুয়াশা কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ সংকেতে নদী পারাপার বন্ধ, বিচ্ছিন্ন আমরা। করোনাকালে ঈদের সময় ঢাকা থেকে সারা দেশের মানুষ গ্রামে গেল। নৌপথে চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার কারণে শুধু আমরা আটকে রইলাম। ফেরিতে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী হয়েও মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়ল অনেকে। এভাবে অনেক কষ্ট আর দুঃখ লেখা আছে পদ্মার সঙ্গে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের। সেই দুঃখ কষ্টের অবসান ঘটেছে। আমরা এখন আর অবরুদ্ধ নই। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে আমরাও সরাসরি সড়ক যোগাযোগের নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত।

কেবল বরিশালে নয়, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সড়ক পথে বিপ্লবের এ আনন্দে এখন ভাসছে পুরো দক্ষিণাঞ্চল। কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন বিপ্লব বলেন, রোববার ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো মোটামুটি ৫ ঘণ্টার মধ্যে কুয়াকাটায় পৌঁছেছে। এটা যে আমাদের জন্য কতবড় প্রাপ্তি তা বলে বোঝানো যাবে না। এখন রাজধানীর সবচেয়ে কাছের সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। কেউ চাইলে দিনে দিনে ঢাকা থেকে এসে ঘুরে যেতে পারবে কুয়াকাটার সাগর পাড়।

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ঢাকা থেকে বলতে গেলে হাতের কাছে ছিলাম আমরা। কেবল পদ্মা পাড়ি দেওয়ার ঝামেলার কারণে আমরা ছিলাম দূর দিগন্তের বাসিন্দা। সেই দুঃখ ঘুচে গেছে। রোববার আমাদের বাসগুলো মোটামুটি ৩ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা-বরিশাল রুটে যাতায়াত করছে। এক সময় এটা অকল্পনীয় আর অবিশ্বাস্য ছিল। দেশের খ্যাতনামা বাস কোম্পানিগুলো ঢাকা-বরিশাল রুটে তাদের সার্ভিস চালু করেছে। এছাড়া ইউনিক, ঈগল, এনাসহ আরও বেশ কয়েকটি বাস কোম্পানি খুব শিগগির এ রুটে বাস সার্ভিস চালু করবে বলে জানা গেছে।

গ্রিন লাইনের বরিশালের কর্মকর্তা হাসান সরদার বাদশা বলেন, প্রথম দিন এ রুটে গ্রিন লাইন পরিবহণের ৪০ ও ২৭ সিটের ১২টি বাস চলাচল করেছে। গাড়ি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা রুটের চলছে আমাদের বাস। বিআরটিসি বরিশাল ডিপোর ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ রুটে প্রথম দিন আমাদের ১৪টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস চলাচল করেছে। যাত্রীপ্রতি ভাড়া ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com