চুক্তি অনুযায়ী- ওমান প্রবাসীর (ধরুন, তার নাম শিমুল) স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া ওই কোম্পানি সম্পন্ন করে দেবে। ২৫০০ মার্কিন ডলার নগদে দিয়েও চুক্তি সম্পাদনের দেড় বছর পরও কোন অগ্রগতি না দেখে শিমুল দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে আমাকে বিষয়টা জানালেন। আমাকে পেয়েছেন পত্রিকায় আমার অভিবাসন সংক্রান্ত লেখাগুলো পড়ে।
তার কাছ থেকে চুক্তিপত্র চেয়ে নিয়ে বিস্তারিত পড়লাম। দেখলাম, ইমিগ্রেশন কনসালটেন্টের পক্ষে ওমানের এক এজেন্ট স্বাক্ষর করেছেন, যা কানাডার ইমিগ্রেশন রেগুলেশনের পরিপন্থী। কানাডার অনলাইন রেজিস্ট্রিতে সার্চ করে দেখলাম চুক্তিতে বর্ণিত ইমিগ্রেশন কনসালটেন্টের অধীনে ওই নামের কোনও এজেন্ট নিয়োজিত নেই। তার মানে, এ এজেন্ট কানাডার অফিসে রেজিস্টার্ড কেউ না। কাজেই ক্লায়েন্টের টাকা মার গেলে এজেন্টকে ধরার কোনও সুযোগ নেই। আমি যে অনলাইন রেজিস্ট্রির কথা বলেছি তা এ লিংকে পাবেন: https://iccrc-crcic.ca/find-a-professional/ ; এটি একটি পাবলিক রেজিস্টার, যা সবার জন্য উন্মুক্ত।
যাক, শিমুলের কাছে জানতে চাইলাম তার কোনও লেটার অব এক্সেপ্টেন্স বা, অফার লেটার আছে কিনা?
তার উত্তর- স্যার, কিসের অফার, চাকরির?
– আরে না, কোন কলেজ বা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির!
– না, তেমন কিছু তো নেই?
– তাহলে ওই কোম্পানি কি দিয়ে আপনার জন্য স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করবে?
– আমি জানিনা, আমাকে ওরা তো তেমন কিছুই বলেনি।
– আচ্ছা, আইইএলটিএস স্কোর আছে?
– আইইএলটিএস লাগবে?’
– অবশ্যই; আপনার নাই?
– না তো! আমি তো আইইএলটিএস লাগবে জানতাম না। ওরাও কিছু বলেনি…
তার সাথে আর কথা বাড়ালাম না। বুঝলাম, ভদ্রবেশী ডাকাতের খপ্পরে পড়েছেন এ প্রবাসী। কারণ, স্টুডেন্ট ভিসা বা, স্টাডি পারমিটের আবেদন দাখিলের জন্য লেটার অব এক্সেপ্টেন্স বা, অফার লেটার একটি অত্যাবশ্যকীয় ডকুমেন্ট, যা শিমুলের নেই। এ লেটার নিশ্চিত করে যে ছাত্রটি কানাডার কোন অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অফার পেয়েছেন। অফার লেটার হাতে পাবার পরই স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনের উদ্যোগ নিতে হয়, তার আগে নয়।
কানাডায় দীর্ঘমেয়াদী পড়াশোনা করতে প্রায় সবক্ষেত্রেই ‘স্টাডি পারমিট’ এর প্রয়োজন পড়ে। একজন প্রার্থী যখন স্টাডি পারমিটের আবেদন দাখিল করেন, তখন কানাডার উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ নিচের বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলে তবেই ওই আবেদনের অনুমোদন দেন
ক. প্রার্থীর আর্থিক স্বচ্ছলতা কেমন? তার মানে, টিউশন ফি, থাকা খাওয়ার খরচ, নিজ দেশ থেকে কানাডায় আসা-যাওয়ার খরচ, ইত্যাদি, প্রার্থী বহন করতে সক্ষম কিনা। আবেদন দাখিলের সময় উপযুক্ত ডকুমেন্ট পেশ করে এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে হয়। এক্ষেত্রে যে সব উৎস হতে অর্থের জোগান দেওয়া হবে তার স্বচ্ছতাও বিবেচনায় আনা হয়।
খ. প্রার্থী কানাডায় পড়াশোনা করতে যাচ্ছেন, না পড়াশোনার অজুহাতে কানাডায় প্রবেশের সুযোগ খুঁজছেন সে বিষয়টি খুব সূক্ষ্ণ বিবেচনায় আনা হয়। কারণ, অতীতে অনেকে কানাডায় পড়াশোনা করতে এসে তা করেননি এবং ভিন্নপথে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের চেষ্টা করেছেন। বিষয়টা বোঝার সুবিধার্থে ভিসা অফিসার এ বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে থাকেন। শিক্ষার্থীর স্টাডি প্রোগ্রামের সাথে তার অতীত পড়াশোনা বা কাজের সম্পর্ক কেমন, ওই স্টাডি প্রোগ্রাম সফলভাবে শেষ করার মতো যোগ্যতা প্রার্থীর আদৌ আছে কিনা, অতীতে এ প্রার্থী কানাডা বা অন্য কোনও উন্নতদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন কিনা, নিজ দেশে তার আর্থিক অবস্থা কেমন, নিজ দেশে তার আত্মীয়স্বজন বা সহায়সম্পদ কেমন আছে বা নেই, ইত্যাদি।
গ. প্রার্থী কোন প্রকার অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে অতীতে জড়িত ছিলেন কিনা তাও পরখ করে দেখা হয়। কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, ইত্যাদি দেশ পরষ্পরের সাথে অপরাধীদের তথ্য শেয়ার করে থাকে। কাজেই, অনলাইন ডাটাবেইজ পরীক্ষা করে ভিসা অফিসার অনেকটা তাৎক্ষণিক নিশ্চিত হতে পারেন আবেদনকারী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বা আছেন কিনা। সোশ্যাল মিডিয়াও পরীক্ষা করে দেখা হয়। কানাডা নিজেদের দেশের মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে সন্দেহজনক কাউকে সে দেশে প্রবেশ করতে দেয় না। এক্ষেত্রে প্রার্থীর উচিত কোন দেশে ইতিপূর্বে ভিসা প্রত্যাখ্যাত হয়ে থাকলে উপযুক্ত দলিলপত্রসহ তা আবেদনের সাথে দাখিল করা। তথ্য লুকানোর বিষয়টি ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে একটি গুরুতর অনিয়ম বিবেচিত হয়।
কিছু বিশেষ ক্ষেত্র আছে যখন স্টাডি পারমিটের আবেদন না করেই একজন ছাত্র কানাডায় পড়াশোনা করতে পারেন। তথাপি আমরা পরামর্শ দেই স্টাডি পারমিটের আবেদন দাখিল করার। কারণ, কোন কারণে কানাডায় পড়াশোনা চলাকালীন পারমিটের মেয়াদ বাড়ানো বা এ জাতীয় পরিবর্তন প্রয়োজন হয়ে পড়লে তা করতে আপনাকে আগে স্টাডি পারমিটের আবেদন করতে হয়। তাই, প্রয়োজন হোক বা না হোক স্টাডি পারমিটের আবেদন কানাডায় প্রবেশের আগেই করে রাখা ভালো।
স্টাডি প্রোগ্রাম শুরুর তারিখের অন্তত পাঁচ-ছয়মাস আগেই স্টাডি পারমিটের আবেদন দাখিলের জন্য আমাদের কোম্পানি, এমএলজি ইমিগ্রেশন, পরামর্শ দিয়ে থাকে। কারণ, আবেদন প্রসেস হতে সচরাচর চার হতে ছয়মাস লেগে যায়। একবার স্টাডি পারমিট অনুমোদিত হলে তা স্টাডি প্রোগ্রাম শেষ হবার পর তিন মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকে।
কানাডায় পড়াশোনার একটা বাড়তি সুবিধা হলো, পরবর্তীতে কানাডায় ইমিগ্রেশনের আবেদন দাখিল করলে অতিরিক্ত বেশকিছু পয়েন্ট পাওয়া যায়, যা বাইরের দেশ, এমনকি আমেরিকায় পড়লেও পাওয়া যায় না। এই বিশেষ পয়েন্টের কারণে ইমিগ্রেশন প্রাপ্তিও সহজ হয়ে যায়।
কানাডার পড়াশোনা দেখলে কানাডীয় নিয়োগকর্তারা চাকরিতে নিয়োগ করতেও অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ফলে, কানাডার ডিগ্রিধারীদের কানাডায় চাকরি পাবার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে বেশি। বলা বাহুল্য, কানাডায় চাকরির অভিজ্ঞতা কানাডা ইমিগ্রেশন আরেকদফা সহজ করে দেয়।
যাক, এ লেখা আর দীর্ঘ না করি। কানাডায় পড়াশোনা, বা ইমিগ্রেশন বিষয়ে কোনও বিশেষ প্রশ্ন থাকলে আমাকে নিচের ইমেইল ঠিকানায় জানাতে পারেন। পরের কোনও লেখায় আপনার আগ্রহের প্রতিফলন ঘটানোর প্রয়াস থাকবে।
তবে, বর্তমান পর্বসহ এ সিরিজের অন্য পর্বগুলোতে কানাডা ইমিগ্রেশন বিষয়ে যে সাধারণ আলোচনা করা হয়েছে তা যেন কোনভাবেই লিগ্যাল অ্যাডভাইজ বা, আইনি পরামর্শ হিসেবে বিবেচনা করা না হয়। কারণ, সুনির্দিষ্ট আইনি পরামর্শ দেওয়া হয় ব্যক্তিগত সাক্ষাতে, সাধারণ আলোচনায় নয়। মনে রাখবেন, প্রত্যেকের ইমিগ্রেশন কেইসই কোন না কোনভাবে আলাদা। তাই, একই ধরনের সমাধান সবক্ষেত্রে সুফল নাও বয়ে আনতে পারে।
এছাড়া, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ নিয়মিত চোখ রাখুন কানাডা ইমিগ্রেশন নিয়ে আমার নতুন নতুন লেখা পড়তে। ভবিষ্যতে আপনাদের সাথে আরো অনেক মূল্যবান তথ্য সহভাগের প্রত্যাশা নিয়ে আজ এখানেই শেষ করি।
লেখক: কানাডীয় ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট, আরসিআইসি।