১। ক্রোয়েশিয়া ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা পায়। ১৯১৮ সালে দক্ষিণ ইউরোপে সার্বিয়া, মন্টেনিগ্রো, স্লোভানিয়া, মেসিডোনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা মিলে গঠিত হয় যুগোস্লাভিয়া। ২৪ বছর পর নাৎসি জার্মানি যুগোস্লাভিয়ায় হামলা চালায়। নিজেদের দখলও কায়েম করে। পরবর্তীতে মার্শাল টিটোর নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি ঝুঁকে যায় যুগোস্লাভিয়া। মার্শাল টিটোর নেতৃত্বে বিদেশি আগ্রাসনকারীদের প্রতিরোধ করে দেশবাসী। পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর যুগোস্লাভিয়ার যৌথবাহিনী সারা দেশকে শত্রুমুক্ত করে। পরে নব্বইয়ের দশকে চারটি যুদ্ধের মাধ্যমে ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া, মেসিডোনিয়া, হার্জেগোভিনা ও স্লোভেনিয়া নামে স্বাধীন দেশগুলোর জন্ম হয়।
২। ৫৬ হাজার ৫৯৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে মাত্র ৪০ লাখ মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১২৪ তম দেশ।
৩। ক্রোয়েশীয় দেশটির সরকারি ভাষা। ভাষাটি রোমান বা লাতিন লিপির একটি পরিবর্তিত সংস্করণে লিখিত হয়। একই ভাষা সার্বিয়াতে সার্বীয় ভাষা, বসনিয়াতে বসনীয় ভাষা নামে পরিচিত, এদের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। ক্রোয়েশিয়ার স্বল্প-প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে রয়েছে ইতালীয়, হাঙ্গেরীয় এবং আলবেনীয় ভাষা। তবে এগুলো সরকারি কাজে ব্যবহার করা হয় না।
৪। ক্রোয়েশিয়ায় খ্রিষ্টান জনসংখ্যা সর্বাধিক, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৮৬ শতাংশ। এছাড়াও দেশটিতে ইসলাম, কোনো ধর্ম পালন করে না এমন মানুষসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে।
৫। জাগরেব ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী ও প্রধান শহর। একইসাথে এটি ক্রোয়েশিয়ার বৃহত্তম শহর। শহরটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে সাভা নদী বরাবর অবস্থিত। শহরটিতে ১৮-১৯ শতকের কিছু অসাধারণ স্থাপনা রয়েছে, যেগুলো দেখার জন্য প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়ে থাকে।
৬। দেশটির জলবায়ু মহাসাগরীয় যা আর্দ্র মহাদেশীয় জলবায়ু অঞ্চলের সীমার কাছাকাছি। এখানে চারটি পৃথক ঋতু আছে। এখানে শীতকালীন গড় তাপমাত্রা -০.৫° সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মে গড় তাপমাত্রা হল ২২° সে।
৭। ক্রোয়েশিয়ার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোতে পরিচালিত হয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী একটি বহুদলীয় ব্যবস্থাতে সরকার প্রধান। এখানে নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে এবং আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ক্রোয়েশীয় সংসদ বা সাবরের হাতে ন্যস্ত। দেশটির বিচার বিভাগ নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন বিভাগ হতে স্বাধীন। ক্রোয়েশিয়ার বর্তমান সংবিধান ১৯৯০ সালের ২২শে ডিসেম্বর গৃহীত হয়।
৮। বল স্পটের ডালমাশিয়ান কুকুর দেখেছেন? সাদা চামড়ার ওপরে কালো বলের স্পট। মনে হবে যেন পেইন্টিং করা। অপরূপ সুন্দর এসব কুকুর কেবল ক্রোয়েশিয়াতেই দেখা যায়। এদের সাধারণত গির্জার ক্রনিকেলে দেখতে পাওয়া যায়। ডালমাশিয়ায় এর উৎপত্তি বলেই এর নাম ডালমাশিয়ান।
৯। গেম অব থ্রোন্সের কল্পরাজ্য ক্রোয়েশিয়া। ‘ওয়েস্টেরস’ নামের কাল্পনিক ওই দেশের রাজধানী ‘কিংস ল্যান্ডিং’-এর অস্তিত্ব যেন আছে ক্রোয়েশিয়ারই একটি শহরে। নাম ডুব্রোভনিক।
১০। পৃথিবীর অন্য কোথাও ‘টাই’ দিবস পালন হয় না। একটি বিশেষ ধরনের টাই – ক্রাভাত। পরা হয় গলার চারপাশে। এটি অনেকটা আধুনিক কালের ‘নেকটাই’ কিম্বা ‘বো টাই’ এর মতো। বহু ভাষাতেই হয়তো এই টাই-এর আদি শব্দ হিসেবে ক্রোয়াতা শব্দটিকে পাওয়া যাবে। সপ্তদশ শতাব্দীতে ‘থার্টি ইয়ার্স ওয়্যার’-এর সময় ফরাসি সেনাবাহিনীতে ক্রোয়েশিয়ানরা গলায় এই কাপড়টি পেঁচিয়ে রাখত। দেশটিতে প্রতিবছর ১৮ই অক্টোবর পালন করা হয় আন্তর্জাতিক ক্রাভাত দিবস হিসেবে।
১১। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ক্রোয়েশিয়ায় ৮টি চমৎকার জাতীয় পার্ক রয়েছে। স্বচ্ছ পানির লেক আছে মন জুড়ানো। তার মধ্যে প্লিভিচ লেক অন্যতম। এটি ক্রোয়েশিয়ার বৃহত্তম লেক এবং ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত।
১২। ক্রোয়েশিয়ার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্লিটভাইসার সিন। এখানে ১৬টি লেক একটির পর একটি ছোট ছোট ঝর্ণা দিয়ে যেন এক সারিতে সাজানো। মনে হবে কাজটি প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে করা হয়েছে। কিন্তু তা পুরোপুরি প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের একটি স্থান। এখানে গিয়ে নৌকায় করে ঘুরতেও পারেন ভ্রমণপিপাসুরা।
১৩। ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। যুগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা লাভের পরেই আধুনিককালের ক্রোয়েশীয় ফুটবল দল ১৯৯১ সালে গঠন করা হয়।
১৪। ক্রোয়েশিয়া জাতিসংঘে উচ্চ আয়ের দেশ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ। দেশটির আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে পর্যটন এবং অবকাঠামো খাত।
১৫। ক্রোয়েশিয়ার সরকারী মুদ্রা কুনা। ১ ক্রোয়েশিয়ান কুনা সমান বাংলাদেশী ১২.৫০ টাকা এবং ১০.৪৮ ভারতীয় রুপি।
১৬। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় ৬১.৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ১৫ হাজার ১৩৭ মার্কিন ডলার।
১৭। ক্রোয়েশিয়ার ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৩৮৫।