বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৪ অপরাহ্ন
Uncategorized

আমার সিঙ্গাপুর ভ্রমন অভিজ্ঞতা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ, ২০২১

আমি শামীম হাসান আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আমার সিঙ্গাপুর ভ্রমনের অভিজ্ঞতা ও ট্রাভেল গাইড। সত্যি বলতে আমি সিঙ্গাপুর ভ্রমন করে বেশ ভালো কিছু অভিজ্ঞতা পেয়েছি। ভ্রমনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো  আমার এক বিজনেস পার্টনার ও একই সাথে আমার ক্লায়েন্টের সাথে দেখা করা।

যাই হোক, সর্বপ্রথম ভিসা নিয়েছি একটা ট্রাভেল এজেন্সী থেকে। আমি সিঙ্গাপুরের সাথে সাথে মালৈশিয়া ও গিয়েছিলাম। ২ দেশের ভিসা পেতে সর্বমোট খরচ হয়েছিলো মাত্র (৭,০০০ + ৬৫০০) ১৩,৫০০ টাকা। কারন আমি সকল কাগজপত্র ঠিকঠাকভাবে সাবমিট করেছিলাম। তো যে যে কাগজপত্র সাবমিট করতে হয়েছিলো ঃ

১। পাসপোর্ট
২। ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি
৩। ম্যাট পেপারে ছাপানো ২ কপি ছবি
৪। সর্বশেষ ৬ মাসের ব্যংক ষ্টেটমেন্ট
৫। ব্যাংক কতৃক প্রদত্ত সলভেন্সি সার্টিফিকেট
৬। ট্রেড লাইসেন্স যে ব্যবসায়ের নামে নিয়েছিলাম সে নামের বিজনেজ প্যাড

এইগুলি ঠিকমতো দিলে খু্ব সহজেই ভিসা পাওয়া যাবে।

যাই হোক, ২৩ তারিখ রওনা দিলাম সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে।  অন্য একজনকে দিয়ে টিকিট কাটিয়েছিলাম  মালৈশিয়া  এয়ারলাইন্স এ। কিন্তু আমি ১০ মিনিট দেরীতে যাওয়ার কারনে ফ্লাইট টি মিস করেছিলাম। কারন ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটে আপনাকে অন্তত ১ ঘন্টা আগে তাদের কাউন্টারে চেক ইন করাতে হবে। যাই হোক, বেশ  অনুরোধ করার পরেও অফিসার আমাকে আর যেতে দিলো না। রাত ৯.২৫ এ ফ্লাইট হবার কথা ছিলো। আমি গিয়েছিলাম ৮.৩৮ এ। পরে সাথে সাথে বসে ল্যাপটপে দেখলাম যে  ঐ দিন অন্য কোন এয়ারলাইন্স এ সিট খালি আছে কিনা। ভাগ্য ভালো ছিলো তাই আমি  এয়ার এশিয়া এয়ারলাইন্স এ একটা সিট পেয়ে যাই। কি আর করার, ৩১ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে নতুন টিকিট করে ঐ দিনই ১২.২৫ মিনিটের ফ্লাইটে চলে যাই মালৈশিয়া। পরে মালৈশিয়া প্রবেশ না করেই ট্রানজিট এর মাধ্যমে চলে যাই সিঙ্গাপুর।

ইমিগ্রেশনে বেশ ভালোই জিজ্ঞাসাবাদ করলো। কেনো এসেছি, কতদিন থাকবো, কার কাছে এসেছি, হোটেল বুক করেছি কিনা ইত্যাদি। তার মধ্যে তারা হোটেল বুকিং, রিটার্ন টিকিট, কেনো এসেছি ,কতদিন থাকবো, ডলার আছে কিনা এইসব এর প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। এর মধ্যে একটাও যদি ঝামেলা থাকে তবে আপনাকে ইমিগ্রেশন পাস করতে দিবে না। তাই এইসকল ব্যাপারগুলি সতর্ক থাকতে হবে।

তার পর চলে গেলাম আমার হোটেলে। আচ্ছা এবার হোটেলের কথা বলি। www.booking.com থেকে আমি পেওনিয়ার মাষ্টারকার্ডের সাহায্যে অনলাইনে হোটেল খুজে বুকিং দিয়েছিলাম। মূলত আপনার যদি মাষ্টারকার্ড থাকে তাহলে আপনি যে কোন ধরনের বুকিং দিতে পারবেন। যা অনেক হেল্পফুল।

সিঙ্গাপুরের Changi Airport থেকে বের হয়েই আমি মুগ্ধ। বেশ সাজানো গোছানো সিঙ্গাপুর। যা দেখছি তাই ভালো লাগছে। গন্তব্য Aqueen Hotel, Balestiar Rd, Novena, Singapore এর দিকে। কিন্তু আমি রাস্তাঘাট কিছুই চিনি না। তাহলে কি করা যায়? এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়েই দেখি MRT Station.  এটি হলো সিঙ্গাপুরের একটি উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা। যা দিয়ে পুরা সিঙ্গাপুরই ভ্রমন করা যায় খুব সহজে। MRT ষ্টেশনে দাড়িয়ে আমি সিঙ্গাপুরের ম্যাপ দেখলাম। বেশ সহজ মনে হলো। তারপর আমি MRT তে করে চলে যাই Novena. কিন্তু সেখানে যেতে হলে আপনার দরকার হবে কার্ড। পাঞ্চ কার্ড। আমি একদম নতুন বলে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পরে কিছুক্ষন খোজার পর পেয়ে যাই কার্ড কেনার অফিস। সেখান থেকে ৩০ ডলার দিয়ে একটা ৩ দিনের জন্য আনলিমিটেড ভ্রমন কার্ড নেই। যা দিয়ে আমি ৩ দিন যেকোন MRT, BUS, LRT এইসব পরিবহনে একদম ফ্রি যত ইচ্ছা তত ভ্রমন করতে পেরেছি।

তার পর Novena তে পৌছানোর পর আমি একটা ট্যাক্সি ক্যাব এর সিরিয়ালে লাইন ধরে একটা ট্যাক্সি নেই। গন্তব্য হচ্ছে Aqueen Hotel. ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ঠিকানা দিতেই সে GPS অন করে গন্তব্যের দিকে যেতে লাগলো। তার পর পৌছালাম হোটেলে। হোটেলে পৌাছানো মাত্রই আমার পার্সপোর্ট দিলাম। যেহেতু আমি আগেই বুকিং দিয়েছিলাম সেহেতু আমার কোন ঝামেল ছিলো না। তবে ঐ হোটেলে ৫০ ডলার সিকিওরিটি বাবদ জমা রাখতে হয়েছিলো। যা হোটেল ত্যাগ করার সময় ফেরত পেয়েছিলাম। আর হোটেলের বিল অনলাইনে  বুকিং এর মাধ্যমে কার্ড থেকে নিয়েছিলো। আমাকে একটা রুম এক্সেস কার্ড দিলো যা দিয়ে রুমে লাইট জ্বালাতে কাজে লাগে। ঐ কার্ড না দিয়ে রুমে কিছুই চালু হয় না। এমনকি লিফটে মধ্যে ও ঐ কার্ড  পাঞ্চ করতে হয়েছে। এটা জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা।

singapore-tour-by-shamim-hasan-2

Peri Peri Chicken – আমার প্রিয় খাবারের মধ্যে একটি

 

singapore-tour-by-shamim-hasan-1

সন্ধার সিঙ্গাপুর এর Novena শহর

 

singapore-tour-by-shamim-hasan-3

দারুন সুস্বাদু একটি খাবার

হেটেলের পাশেই ভালো ভালো কয়েকটা রেষ্টুরেন্ট ছিলো। সত্যি বলতে সিঙ্গাপুরের খাবার দাবার আমার বেশ ভালো লেগেছে। পরদিন ফ্রেশ হয়ে বের হলাম রাস্তা ঘাট দেখার জন্য। বাহ্। কি দারুন রাস্তাঘাট। দারুন সব স্থাপনা। দেখছি আর মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটা শহর। কোন হর্ন এর শব্দে নেই, ভীড় নেই। সবাই লাইনে দাড়িয়ে আছে। লাইন ঠিক করার জন্য কোন লোক ও নেই। কারন কেউই লাইন ভাংছে না। নিয়মের প্রতি কি শ্রদ্ভাবোধ। আমার শুধু মুদ্ধতা বেড়েই চলছে সিঙ্গাপুরের মানুষের প্রতি।

তার পর দিন গেলাম সিঙ্গাপুর এর চিড়িয়াখানাতে। একসাথে Singapore Zoo, Jurong Bird Park, River Safari, Night Safari  এই চারটি বিশেষ রাইড উপভোগ করেছিলাম। এক কথায় বেশ দারুন অভিজ্ঞতা।

singapore-zoo-1

সিঙ্গাপুরের চিড়িয়াখানা

 

singapore-zoo-2

River Safari, Singapore

তার পর দিন চলে গেলাম Marina Bay তে। অত্যন্ত জনপ্রিয় এ স্থানের ছবি হয়তো অনেক জায়গায়ই দেখেছেন। বেশ দারুন। সূউচ্চ একটা  ভবনের উপর সুইমিং পুল রয়েছে। বেশ ব্যয়বহুল এ পুলটি। Marina Bay Sands Casino দেখার সুযোগটাও মিস করিনি।

তার পরদিন গেলাম Santosa Island এ। দারুন এক ছোট একটি বীচ। ভালো লাগার মতো একটি জায়গা। এই আইল্যান্ড এ রয়েছে Southmost point of continental Asia. রাতে লাইটের ঝলকানিতে যে কোন পর্যটকেরই মন ভরে উঠবে।

তার পর দিন আমার ্ক্লায়েন্টের সাথে দেখা করার জন্য স্থান নিধারন করলাম Clarke Quay তে। এখানে Reverse Jumping রাইড আছে। সময় স্বল্পতার কারনে  এই রাইডে চড়া হয়ে উঠেনি। যাই হোক, ক্লায়েন্টের সাথে দেখা হলো পরদিন। আড্ডা হলো, ব্যসায়ের আলাপ সালাপ হলো, তার পর আসার সময় সে আমাকে তার গাড়ি দিয়ে আমার হোটেলে  পৌছে দিলো। আহা! কি দামি গাড়ি। আমি মুদ্ধ হয়ে শুধু তাকিয়ে ছিলাম তার গাড়ির দিকে। রাতের দারুন আবহাওয়া, একটা দামি গাড়ি ও ক্লায়েন্টে সাথে গল্প করতে করতে সিঙ্গাপুরের একটার পর একটা শহর দেখছিলাম। সে এক দারুন অভিজ্ঞতা।

দেখা করার পর আমি Little India নামক স্থানে এসেছিলাম। সেখানে আমার হোটেল বুক করা ছিলো। Little India তে বেশিরভাগ তামিল, ইন্ডিয়ান, ও বাংলাদেশীদের বসবাস। Little India তে Mostafa Center এর আশে পাশে খোজ করলে প্রচুর বাঙ্গালী দোকানপাঠ পাবেন। তবে পুরু সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে নোংরা যায়গা হলো Little India. বুঝতে হবে যে, এইখানে ইন্ডিয়া,  তামিল, ও বাঙ্গালীর থাকে। একমাত্র এখানেই আমি দেখেছি সিগনাল না মেনে মানুষজনতে রাস্তা পার হতে।

সারমর্ম ও কিছু কথাঃ সিঙ্গাপুর হলো পৃথিবীর সপ্তম ব্যয়বহুল দেশ। এইবার বুঝেন কি পরিমান খরচ! ১০০ ডলারের নিচে কোন হোটেল পাওয়া যায়না বললেই চলে। তবে এ দেশের আয়তন খু্ব অল্প। ২ ঘন্টায়ই দেশের  এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে পারবেন কারন এ দেশের যাতায়াত ব্যবস্থা বেশ উন্নত। যে কোন একটা যায়গায় হোটেল নিয়েই চলে কারন আপনি যেখানেই ঘুরেন না কেনো, আপনি আবার খুব সহজেই এই হোটেলে এসে থাকতে পারবেন। তারা খুবই ভদ্র একটি জাতি। নিয়মের বাহিরে কিছুই করে না। আর আপনি ১০০ ভাগ নিরাপদভাবে যে কোন অলিগলিতে হেটে বেড়াতে পারবেন। ছিনতাই হওয়ার কোন প্রকার সম্ভাবনা নেই। এভারেজে আপনাকে প্রতিদিনের জন্য ১৫০ ডলার খরচ করতে হতে পারে যদি আপনি আমার মতো করে খরচ করতে অভ্যস্ত হন আরকি

৬ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আমি বাসে করে মালৈশিয়া চলে যাই। আপাতত এই ছিলো আমার সিঙ্গাপুর ভ্রমনের কাহিনী। অনেক কিছু বাদ দিয়ে লিখেছি। শুধু শিক্ষনীয় ব্যাপারগুলিই লিখলাম। আশাকরি আপনি সিঙ্গাপুর ভ্রমনে গেলে আপনার কিছুটা হলেও সুবিধা হবে। অনেক ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আপনার ভ্রমন শুভ হোক। সেই কামনায় আমি শামীম হাসান বিদায় নিচ্ছি।

শামীম হাসান

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com