সৌন্দর্যের লীলাভূমি ভুটান। বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ। এ কারণে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে ভুটানে। এ দেশে নেই কোনো দূষণ। কার্বন নেগেটিভ দেশগুলোর মধ্যে ভুটান অন্যতম। দেশের বাইরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভুটানকে বেছে নেন বেশিরভাগ পর্যটকরা।
যেহেতু ভুটান যেতে বাংলাদেশিদের ভিসা লাগে না; তাই প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক ভুটান ঘুরতে যান। সবচেয়ে ভালো খবর হলো, ট্রানজিট ভিসা থাকলে কম খরচেই ভুটান থেকে ঘুরে আসা যায়।
পারো, পুনাখা এবং থিম্পু থেকে ঘুরে আসতে পারেন। ভুটানে জনসংখ্যা খুব কম। মাত্র ৭ লাখ। এ দেশে ঘুরতে গেলে সেখানকার মানুষদের ঐতিহ্য, রীতিনীতি এবং পোশাক দেখে অবাক হবেন। সেখানকার খাবারও সুস্বাদু
যেভাবে যাবেন
সকাল ৯টায় ইমিগ্রেশনের অফিস খুলবে তখন আপনি ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত সব কার্যাদি সম্পন্ন করে ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন। দুই বর্ডারের প্রয়োজনীয় কাজ সমাপ্ত হলে আপনি নির্দিষ্ট বাসে উঠে পড়ুন।
এবার ইন্ডিয়া থেকে ভুটান যাওয়ার জন্য ময়নাগুড়ি নামক জায়গায় নেমে অন্য একটি বাসে আপনাকে উঠতে হবে। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৩০ রুপি। ভুটান-ইন্ডিয়া বর্ডারের কাছাকাছি যাওয়া জন্য এবার আপনাকে সাফারি নামক গাড়িতে উঠে পড়তে হবে।
এরপর ৭ টাকা ভাড়া দিয়ে অটোতে উঠতে হবে। অটোটি আপনাকে জয়গাও ইন্ডিয়ান ইমিগ্রশন অফিসে নামিয়ে দেবে। ইমিগ্রশন অফিসে এক্সিট সীল লাগিয়ে আপনি ভুটানে প্রবেশ করতে পারবেন। মনে রাখবেন, কোনো ধরনের ভুল তথ্য দেওয়া যাবে না।
যেসব স্থানে ঘুরবেন
কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই আপনি ভুটান-ইন্ডিয়া বর্ডার পার হতে পারবেন। ইমিগ্রশন পর্ব শেষ করেই সোজা চলে যাওয়া যায় ভুটানে। সেখানে ঘুরে দেখার মতো আছে থিম্পু, পারু, পোখারা এবং পুনাখা শহর। প্রথমই দিনই থিম্পু থেকে পুনাখা শহরে যাওয়ার পারমিট করিয়ে রাখলে পরবর্তীতে কোনো সময় নষ্ট হবে না।
পরের দিন যাত্রা করুন পুনাখার উদ্দেশ্যে। সকাল ১০টায় রওনা দিলে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন। যাওয়ার পথেই দেখতে পাবেন দুচালা, পুনাখা জং এবং সাসপেনশন ব্রিজ। সারাদিন ঘুরে রাতে আবার থিম্পুতে ফিরে আসাটাই ভালো। পুনাখাতে থাকার মতো তেমন ভালো হোটেল নেই।
তৃতীয় দিন স্বপ্নের শহর পারো দর্শনে বেরিয়ে পরুন। হোটেল ড্রাগনে ভারতীয় সব খাবার পাবেন। পারো হচ্ছে ভুটানের সবচেয়ে সুন্দর শহর। এ শহরেই আছে ভুটানের একমাত্র আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট।
চতুর্থ দিনে ঘুরে আসতে পারেন টাইগার নেস্ট/তাকসিন থেকে। ভুটানের ধর্মীয় এবং পর্যটনের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো টাইগার নেস্ট। ৩০০০ ফুট হেঁটে উঠতে হয় সেখানে। উঠতে সময় লাগতে পারে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার মতো। নামতে সময় লাগে ১ ঘণ্টার বেশি।
ভুটান বেড়ানোর উপযুক্ত সময় হল সেপ্টেম্বর-নভেম্বর। কেননা এই সময়ে বৃষ্টি হয় না, আকাশ পরিষ্কার থাকে, আবহাওয়া সুন্দর থাকে এবং খুব বেশী ঠান্ডা পড়ে না। শীতকালে ভুটানে বরফ জমে রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে যায়।
যারা বরফ উপভোগ কিংবা স্নোফল দেখতে চান তারা চাইলে শীতেও ঘুরে আসতে পারেন। তবে বর্ষাকালে না যাওয়াই ভালো। কারণ বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তবে সেপ্টেম্বর-নভেম্বর ভুটানে পিক সিজন তাই সবকিছুর দাম বেশি থাকে।
কত টাকা খরচ হবে?
জনপ্রতি আপনার খরচ পড়বে ১৬-১৭ হাজার টাকা (গাইড ফি ছাড়া)। মনে রাখা ভালো, সময় স্বল্পতার জন্য আপনি হয়তো হাভেলি ও বুম্থাং-এর মতো আকর্ষণীয় জায়গায় যেতে পারবেন না।
হাভেলি, বুম্থাং ঘুরলে খরচ কিছুটা বাড়বে। আর সব কিছুতে ট্যাক্সি বাদ দিয়ে পাবলিক বাসে ঘুরলে খরচ কিছু কম পড়বে কিন্তু সময় বেশি লাগবে।
যেসব নথিপত্র সঙ্গে রাখা জরুরি-
>> ভারতীয় ভিসাসহ পাসপোর্টের ফটোকপির কয়েক কপি, আর পাসপোর্ট সাইজের ছবি সঙ্গে রাখবেন।
>> ন্যাশনাল আইডি কার্ডের দু-তিনটি ফটোকপি।
>> চাকরিজীবী হলে এনওসি ও স্টুডেন্ট হলে আইডি কার্ডের দু-এক ফটোকপি।
>> ভুটানে সরকারি ছুটি অনেক বেশি, তাই সরকারি ছুটির লিস্ট দেখে ভ্রমণ প্ল্যান করলে ভালো।
>> ভুটানে কোথাও কোনো মসজিদ ও মুসলিম রেস্টুরেন্ট আপনার চোখে পড়বে না। ভুটানিজ ভাত, ডাল, সবজি খুবই মজার। তারপরও আপনার প্রয়োজন মনে হলে, বাংলাদেশ থেকেই কিছু, আচার, চাটনি, বিস্কুট নিয়ে যেতে পারেন।
>> প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ট্যুরডটকম