শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৪:২৯ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

বাংলাদেশে সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছেন প্রবাসীরা

  • আপডেট সময় রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২১
ফ্লোরিডা ও টেক্সাসে অনেকেই কিনছেন বাড়ি, গ্যাস স্টেশন, সুপার মার্কেট শাহাব উদ্দিন সাগর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্জিত অর্থ দিয়ে বাংলাদেশে কেনা সম্পত্তি বহু প্রবাসী এখন বিক্রি করে দিচ্ছেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নতুন প্রজন্মকে দেশমুখী করতে না পারা, সম্পত্তি জবর দখল হয়ে যাওয়া, প্রবাসে নিন্মবিত্তের তালিকা থেকে নাম ঘোচানোসহ নানা কারণে সম্পদগুলো তারা বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, সম্পত্তি বিক্রির টাকা দিয়ে অনেক প্রবাসী নিউইয়র্ক ও আশপাশের এলাকায় পছন্দসই বাড়ি কিনছেন। কেউ যাচ্ছেন বাফেলোতে বাড়ির পর বাড়ি কিনতে। অন্যদিকে অনেকেই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার আশায় যাচ্ছেন ফ্লোরিড়া, টেক্সাসসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে। তারা সেখানে গিয়ে গ্যাস স্টেশন কিনছেন, প্রতিষ্ঠা করছেন সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
গত কয়েক বছর ধরে দেশে প্রবাসীদের সম্পদ বিক্রির বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে অভিমত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মহল। জ্যামাইকার হিলসাইডে দশ বছর ধরে বসবাস করছেন ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সরাইলের আতিকুর রহমান। প্রবাসে এসে তিনি দুই বছর কাজ করেছেন বিভিন্ন স্টোরে। পরে দুই বছর ক্যাব চালিয়েছেন। মাথার ঘাম পা ফেলে চার বছরে অর্জিত অর্থ দিয়ে যাত্রাবাড়ীতে ৬ শতাংশ জমি কিনেছিলেন। জমি কেনার এক/ দেড় বছরের মাথায় জমির উপর বাউন্ডারি ওয়াল দিতে গিয়ে নানা বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে। সেই জমির উপর তিনি দুই রুমের একটি টিনসেট বাড়ীও তৈরি করেছিলেন। গত ডিসেম্বরে বাড়িসহ সেই জমি তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। আতিকুর রহমান সাপ্তাহিক আজকালকে বলেন, কস্টের টাকা দিয়ে দেশে বাড়ি করেছিলাম। সেই বাগিতো আর সুখে বিক্রি করিনি। দেখি এবার এখানে কিছু একটা করা যায় কি না? উডসাইডের প্রবাসী নজিবুর রহমান। বাড়ী কুমিল্লার চান্দিায়। তিন সন্তান নিয়ে দেড় যুগের প্রবাস জীবন।
প্রবাসের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকার ধানমন্ডির ৩/এ এলাকায় দুটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন। একটি ভাড়া দিতেন আরেকটি খালি রাখতেন। মাঝে মধ্যে ঢাকায় গেলে সবাই মিলে সেই অ্যাপার্টমেন্টে উঠতেন। ২০১৪ সালে দেশে গিয়ে রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেই থেকে তিনি দেশের অ্যাপার্টমেন্ট দুটি বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। আগামী ১৩ মার্চ অ্যাপার্টমেন্ট দুটি বিক্রির জন্য পাকাপোক্ত করেছেন তিনি। নজিবুর রহমান সাপ্তাহিক আজকালকে বলেন, আমার সন্তানরা বড় হয়ে গেছে। এখন তারা দেশে যেতে চাইছে না। ঢাকায় থাকার মত আমার কেউ নাইও। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি অ্যাপার্টমেন্ট দুটি বিক্রি করে দেয়ার। সেই অর্থ দিয়ে হলিসে একটি বাড়ি কেনার কথা ভাবছি। অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করবেন কিন্তু দেশ থেকে অর্থ আনবেন কিভাবে সে প্রশ্নের জবাব অবশ্যই দেননি নজিবুর রহমান।
জ্যাকসন হাইটসের বাসিন্দা সিলেটের নাজিফ আহমেদ ম্যানহাটানের একটি রেস্টুরেন্ট চাকুরি করেন। পৈত্রিক সুবাধে ঢাকায় পেয়েছেন কয়েক শতাংশ জমি। যেগুলোর অধিকাংশই প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছেন। গত বছর দেশে গিয়ে সেই জমি উদ্ধারের চেষ্টা করেছেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যারা দখল করে রেখেছিল তাদের সঙ্গে আপোষ করে গত নভেম্বরে ৬ শতাংশ জমি পানির দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন তিনি বাফেলোতে দুটি বাড়ি কিনেছেন। আগামী এপ্রিলে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিউইয়র্ক ছেড়ে চলে যাবেন বাফেলোতে। নাফিজ আহমেদ সাপ্তাহিক আজকালকে বলেন, সম্পদগুলো আমার পৈত্রিক হলেও সেখানে স্থাপনার জন্য প্রবাস থেকে অনেক টাকা পাঠিয়েছিলাম। দেশে সম্পদগুলো দেখার কেউ না থাকার কারণে দখল হয়ে যাচ্ছিল। পরে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছি এগুলো বিক্রির জন্য।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির খুলনার বাসিন্দা এক অতি পরিচিতমুখ বুধবার সাপ্তাহিক আজকালকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমার খুলনার সব সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছি। রাজনৈতিক নেতাদের ‘নজর’ পড়ার কারণে আমাকে সম্পদগুলো বিক্রি করে দিতে হয়েছে। আমি সেই অর্থে এখন ফ্লোরিড়ায় গ্যাস স্টেশন কিনেছি। ভবিষ্যতে সেখানে সুপার মার্কেট বা বাড়ীও বানাবো।
ব্রুকলিনের বাসিন্দা সন্ধীপের নিজাম উদ্দিন কাজ করেন নির্মাণ শ্রমিকের। চট্টগ্রামের আগ্রবাদে রয়েছে তার একটি বাড়ি। মা ছাড়া এখন আর কেউ থাকেন না সেখানে। রাজনৈতিক কারণে গত কয়েক বছর ধরে তিনি দেশে যান না। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাড়িটি বিক্রি করে দেবেন এবং নিউইয়র্কে কিছ একটা করবেন। তিনি সাপ্তাহিক আজকালকে বলেন, আমার অনেক স্বজন টেক্সাস থাকেন। নিউইয়র্কে না হলেও টেক্সাসে কিছু একটা করার কথা ভাবছি। দেশে আর অর্থ পাঠানোর দরকার মনে করছি না। বড় শখ করে এ বাড়িটা সংস্কার করেছিলাম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সেই বাড়ীতেই যেতে পারি নাই। ফলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বিক্রি করে দিব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে সম্পদ বিক্রি করা প্রবাসীদের মধ্যে রয়েছেন অধিকাংশ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক ঘরণার। তারা রাজনৈতিক কারণে দেশে যেতে না পেরে সম্পদগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের অনেকেই সাপ্তাহিক আজকালকে বলেন, আমরা আর দেশে না যাওয়ায় সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রেক্ষিতে দেশের সম্পগুলো বিক্রি বা অন্যজন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছি।
জানা গেছে, গত কয়েকমাস ধরে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস, নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কন্স্যুলেটসহ বাকী কন্স্যুলেটগুলোতে সম্পদ হস্তান্তর বা বিক্রির পাউয়ার অব অটর্ণী (ক্ষমতা অর্পণ পত্র) সত্যায়িতের হিড়িক পড়েছে। প্রবীণ প্রবাসীরা সাপ্তাহিক আজকালকে বলেন, প্রবাসীরা সব সময় চেষ্টা করেন দেশের মাটিতে কিছু একটা করার। আমরা নিজেরাও সেটি করেছি। কিন্তু গত এক দশক ধরে নানা কারণে প্রবাসীরা দেশে সম্পদ করার ব্যাপারে অনীহা দেখাচ্ছেন। এমনকি গত দুই বছর ধরে দেশের সম্পদ বিক্রি করে এখানেই বাড়ি গাড়ী এবং নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করছেন। প্রবাসীরা দেশমুখী না হলে সমস্যা বলেও মন্তব্য করেন তারা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com