প্রতি বছর অনলাইন শপিং এর পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে থাকেন ক্রেতাগণ। অনলাইনে শপিং বা কেনাকাটার সুবিধার কথা চিন্তা করলে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু সুবিধার সাথে অসুবিধাও পালা করে আসে – এটা আমাদের সবার জানা। অনলাইন শপিং ও তার ব্যতিক্রম নয়।
অনলাইনে কেনাকাটা বা শপিংয়ের ক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা ইতোমধ্যে সবাই শুনেছেন। অনলাইন শপিং যদি আপনার পছন্দের একটি বিষয় হয়, তাহলে আপনার নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করাও একান্ত জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক অনলাইনে শপিং করার সময় যেসব সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত।
বর্তমানে অনলাইন শপিংয়ের জনপ্রিয়তার জের ধরে প্রতিদিনই দেখা মিলছে নতুন কোনো না কোনো অনলাইন শপিং ওয়েবসাইটের। তবে অনলাইন শপিং এর ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকতে যথাসম্ভব পরিচিত ওয়েবসাইট সমূহ থেকেই কেনাকাটা করা উত্তম।
কোনো একটি প্রোডাক্ট গুগলে সার্চ করলে সার্চ রেজাল্ট হয়ত আপনাকে অপরিচিত কোনো ওয়েবসাইটে নিয়ে যেতে পারে। তবে আপনি যদি পরিচিত ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করেন, সেক্ষেত্রে প্রতারণা কিংবা নিরাপত্তাজনিত সমস্যা নিয়ে ভাবতে হয় না।
ধরুন, আমরা জানি দারাজ ডট কম ওয়েবসাইটিতে অসংখ্য রিটেইল আউটলেট এর অনলাইন স্টোর, প্রতিটি বড় ব্র্যান্ডের নিজস্ব স্টোর, ইত্যাদি রয়েছে। তাই অনলাইন শপিং এর ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই এই সাইটটিকে বিশ্বাস করতে পারি।
এছাড়াও ওয়েবসাইটে প্রবেশের সময় টপ লেভেল ডোমেইন ঠিকঠাক লিখছেন কিনা তাও নিশ্চিত করুন। যেমনঃ ফেসবুক ডট কম আর ফেকবুক ডট কম কিন্তু আলাদা সাইট। অনলাইন শপিং এর ক্ষেত্রে এই সমস্ত আরো গুরুতর হতে পারে ওয়েবসাইট এড্রেস ভুলের কারণে।
অনেক প্রতারণামূলক সাইট অস্বাভাবিক ডিসকাউন্ট বা মূল্যছাড়ের ফাঁদে ফেলে গ্রাহকদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন বা ডিসকাউন্টের কথা শুনে প্রতারিত হবেন না। অস্বাভাবিক মূল্য ছাড় দিয়ে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারেনা। সুতরাং এসব থেকে সাবধান থাকুন!
যেকোনো ওয়েবসাইট থেকে ডেবিট বা ব্যবহার করে কিছু কেনার আগে অবশ্যই এটি নিশ্চিত করুন যে উক্ত ওয়েবসাইটে এসএসএল (সিকিউর সকেট লেয়ার) এনক্রিপশন ইন্সটল করা আছে কিনা। একটি এসএসএল যুক্ত ওয়েবসাইট চিন্হিত করা অত্যন্ত সহজ।
যে ওয়েবসাইটে এসএসএল এনক্রিপশন ইন্সটল করা রয়েছে, সে ওয়েবসাইট এর ইউআরএল অর্থাৎ এড্রেস HTTP দিয়ে নয়, বরং HTTPS দ্বারা শুরু হয়। এটা ব্রাউজারের এড্রেস বারে ক্লিক করে দেখতে হয়। এছাড়াও এসএসএল এনক্রিপশন থাকা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে ব্রাউজারের এড্রেস বারে ইউআরএল এর বাম বা ডান পাশে একটি লক করা প্যাডলক আইকন ও প্রদর্শিত হয়।
তবে এই এসএসএল এনক্রিপশন ডিটেক্ট হবে কিনা তা আপনার ব্যবহৃত ব্রাউজারের উপরও নির্ভর করে। আপনি যদি গুগল ক্রোম ব্যবহার করে থাকেন, তবে এটি তৎক্ষণাৎ HTTP যুক্ত ওয়েবসাইটকে “not secure” বলে বিবেচিত করবে। সবসময় চেষ্টা করুন আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার আপডেটেড রাখতে।
অনলাইন শপিং এর ক্ষেত্রে কিন্তু আপনার এনআইডি নাম্বার কিংবা আপনার জন্মতারিখ জিজ্ঞেস করা অহেতুক বলা চলে। যদি কোনো প্রতারক আপনার ক্রেডিট কার্ড নাম্বার ও এমন দরকারি কোনো তথ্য পেয়ে যায়, তবে তার জন্য বিশাল সমস্যায় পড়তে পারেন।
তাই অনলাইনে শপিং এর ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকতে অতিরিক্ত কোনো তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। যথাসম্ভব কম ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করুন। আপনি যদি প্রতারণার ফাঁদেও পড়েন, তবুও প্রতারকের কাছে আপনার যথাযথ যথেষ্ট তথ্য না থাকলে বেচেঁ যেতে পারেন।
শুনতে ভাংগা রেকর্ডের মত মনে হলেও অনলাইন শপিং এর ক্ষেত্রেও আপনার পাসওয়ার্ড কতটা শক্তিশালী তার উপর অনলাইন স্টোরে আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নির্ভর করে। তাই অনলাইনে শপিং করার আপনার প্রিয় ওয়েবসাইটে থাকা অ্যাকাউন্টটির পাসওয়ার্ড শক্তিশালী কিনা তা নিশ্চিত করুন।
অনলাইনে ব্যাংকিং বা শপিং করার ক্ষেত্রে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা একান্ত জরুরি। যদিওবা সকল পাসওয়ার্ড ক্র্যাক করা সম্ভব, তবুও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি বাড়তি নিরাপত্তা পাবেন। এছাড়াও আপনার গুগল একাউন্টে পাসওয়ার্ড সেভ করে রাখতে পারেন। এর ফলে যখনই কোনো ডাটা ব্রিচে আপনার অ্যাকাউন্টের তথ্য ফাঁস হবে, আপনি খুব সহজে তা সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।
অধিকাংশ মানুষ শুধুমাত্র কোনো কিছু কিনলে কিংবা মাস বা বছর শেষে তার ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড বা অন্য অনলাইন পেমেন্ট মেথড এর স্টেটমেন্ট চেক করেন। তবে এটি নিরাপদ নয়। যথাসম্ভব নিয়মিত এসব অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট যাচাই করুন।
নিয়মিত স্টেটমেন্ট যাচাই করার সময় এটি নিশ্চিত করুন যে আপনাকে কোনো প্রতারণার আদলে অর্থ চার্জ করা হচ্ছে কিনা। এছাড়াও অনলাইনে সকল ট্রানজেকশন যথাসম্ভব ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে করার চেষ্টা করুন। কোনো সেলার যদি হঠাৎ ওয়্যারড মানি এর মত অন্য কোনো পেমেন্ট মেথড ব্যবহার করতে বলে, তবে প্রতারণা আশংকা থেকেই যায়।
আপনি যে ডিভাইস ব্যবহার করে অনলাইন শপিং করছেন, সেটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও কিন্তু অন্যতম সাবধানতার মধ্যে পড়ে যা অবশ্যই আপনার অবলম্বন করা উচিত।
অনেক ক্ষেত্রে প্রতারকরা সবসময় আপনি কবে ভুল করে তাদের তথ্য প্রদান করবেন, তার অপেক্ষায় থাকেনা। হতে পারে আপনার মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারে ইতিমধ্যেই ম্যালওয়্যার পৌছেঁ দিয়েছে প্রতারকরা যা আপনি অনলাইনে কিছু কিনলে আপনার ক্রেডিট কার্ড এর তথ্য চুরি করে নিবে। তাই সবসময় কম্পিউটারে সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। এছাড়া মোবাইল ফোনেও অপরিচিত বা সন্দেহজনক অ্যাপ ইনস্টল থেকে বিরত থাকুন। এন্ড্রয়েডে প্লে স্টোর এর বাইরের অ্যাপ ইনস্টল না করাই ভালো। চালালে তাতেও অপরিচিত বা সন্দেহজনক অ্যাপ থেকে দূরে থাকুন।
এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার শুধুমাত্র ম্যালওয়্যারকেই রুখে দেয়না, বরং স্পাম, ফিশিং অ্যাটাক, ফিশিং মেইল, ইত্যাদি থেকেও আপনাকে সুরক্ষা প্রদান করে। তবে শুধুমাত্র এন্টিভাইরাস ইন্সটল করেই আপনার কাজ শেষ নয়। সবসময় এন্টিভাইরাস আপডেটেড রাখুন যাতে নতুন কোনো থ্রেট আপনার জন্য সমস্যার কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।
পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে অনলাইন শপিং এর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পরিচিত ওয়াইফাই নেটওয়ার্কসমুহ ব্যবহার করুন। অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা থাকতে পারে, যার ফলে এসব ব্যবহার করে অনলাইন শপিং করা নিরাপদ নয়।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলোর তুমুল জনপ্রিয়তার ফলে অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যবহার করে পেমেন্ট করার বিষয়ট সাধারণ হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও দেশের অধিকাংশ অনলাইন স্টোর এসব মোবাইল ব্যাংকিং দ্বারা পেমেন্ট সাপোর্ট করে।
তাই অনলাইন পেমেন্ট এর ক্ষেত্রে সম্ভব হলে ক্রেডিট কার্ড এর বদলে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করুন। মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পেমেন্ট এর ক্ষেত্রে বাড়তি নিরাপত্তার পাশাপাশি দ্রুত ট্রানজেকশন করা যায়। এছাড়াও ওটিপি কোড দ্বারা প্রতিটি লেনদেন সম্পন্ন হয় বলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
অনলাইন শপিং এর ওয়েবসাইটগুলোতে সেলারের কাছ থেকে অনেক ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট কতৃপক্ষ প্রোডাক্ট নিজে কিনে যাচাই করে থাকেনা। যার ফলে কোনো সেলার থেকে কিছু কেনার আগে যাচাই এর দায়িত্ব যিনি অনলাইন শপিং করছেন তার উপরেই থাকে।
যেকোনো সময় যেকোনো প্রোডাক্ট অর্ডার দেওয়ার আগে ওই প্রোডাক্টের রিভিউ যাচাই করুন। এছাড়াও একই সেলারের অন্যান্য প্রোডাক্ট নিয়ে গ্রাহকরা কি বলছে তা চেক করতে পারেন। এছাড়াও উক্ত সেলারের ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইট ঘুরে আসতে পারেন বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করতে।
বেশিরভাগ অনলাইন শপিংয়ে প্রতারণার ক্ষেত্রে ডেলিভারির সময় প্রতারণা করা হয়। এমন কোনো ঘটনার শিকার হলে যত দ্রুত সম্ভব ওয়েবসাইট কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন ও আপনার অভিযোগ যথাযথভাবে তুলে ধরুন।
অনলাইন শপিং এর ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনের মাধ্যমে অনেক সময় সম্ভাব্য প্রতারণার হাত থেকে বাচাঁ যায়। তাই অনলাইনে শপিং করার সময় সবসময় উল্লেখিত বিষয়সমুহ অনুসরণের মাধ্যমে সাবধানতা অবলম্বন করুন।