রূপবৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ প্রাকৃতিক লীলাভূমি বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ঢাকায় অতটা প্রাকৃতিক রূপ বৈচিত্র পরিলক্ষিত হয় না। তথাপি ইট-পাথর ও কংক্রিটে গড়া এই নগরীর বিরামহীন খেটে খাওয়া মানুষদের খানিক বিশ্রাম ও স্বচ্ছ নিঃশ্বাস গ্রহণের সুবিধার্থে কিছু কিছু স্থানে এখনো প্রকৃতির ছোঁয়া বিরাজমান। ধানমন্ডি লেক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা, মৈনট ঘাট, সাদুল্লাপুর গ্রাম, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, ক্রিসেন্ট লেক, বলধা গার্ডেনসহ আরো কিছু জায়গা সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। ছুটির দিন কিংবা অবসর সময়ে নগরীর সিংহভাগ মানুষ তাদের ক্লান্তি ঘোঁচাতে অথবা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে এসব স্থানসমূহে প্রশান্তির আশায় দলবেঁধে ছুটে আসেন।
তবে এ সকল প্রাকৃতিক স্থান ছাড়াও ঢাকা শহরের মূল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে কিছু প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার মাধ্যমে। এ সকল স্থাপনা আমাদেরকে মুঘল, আর্মেনীয়, নবাব, কিংবা ব্রিটিশদের কথা মনে করিয়ে দেয়।
তাহলে চলুন দেখা যাক ঢাকার সেরা দর্শনীয় স্থান গুলোর তালিকা ও তাদের ইতিহাস ! :-
বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ঢাকায় নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ হলো আহসান মঞ্জিল। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। হাজার ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মান কাজ সমাপ্ত হয়। নবাব আব্দুল গনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ এর নামানুসারে এর নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল। তৎকালীন সময়ে এই প্রাসাদটিকে রংমহল বলা হত। ১৯০৬ সালে এখানে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়।
এই প্রাসাদটির ছাদের উপর সুন্দর একটি গম্বুজ আছে। এর ত্রি-তোরণ বিশিষ্ট প্রবেশদ্বারটিও অনেক সুন্দর। তেমনিভাবে উপরে উঠার সিঁড়িগুলোও দৃষ্টিনন্দন। এর সবচেয়ে সুন্দর দিক হলো পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের মনোরম দুটি খিলান। যা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এর অভ্যন্তরে রয়েছে বৈঠকখানা, পাঠাগার, নাচঘর, আবাসিক কক্ষ। রয়েছে বলরুম, গোলঘর, ড্রয়িংরুম, কার্ডরুম, লাইব্রেরি কক্ষ, সিঁড়িঘর, হিন্দুস্থানী কক্ষ, সিন্দুক কক্ষ, বিলিয়ার্ড কর্ড, মুসলিমলীগ কক্ষ, মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ডাইনিং রুম। আরোও আছে ভোজন কক্ষ ও দরবার গৃহ। এর রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা। বারান্দা ও কক্ষগুলোর মেঝে মার্বেল পাথরে শোভিত। এসব ঘরগুলো সাজানো রয়েছে নানা রকম তৈজসপত্র, কাটগ্লাসের ঝাড়বাতি, বড় বড় কাঠের আলমারি, কাঁচ ও চীনা মাটির তৈজসপত্র, বিলিয়ার্ড টেবিল, বৃহদাকার লোহার সিন্দুক, শো-কেস, ক্রিস্টাল চেয়ার, ফুলদানি, খেলার সামগ্রীসহ অনেক দামী দামী আসবাবপত্র। দেয়ালগুলোয় শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের তৈলচিত্র, ঢাল-তরবারী, হাতির মাথার কঙ্কাল, বর্শা, বল্লম, নওয়াবদের আমলের বিভিন্ন জীবজন্তু সিং ও নওয়াবদের বংশ তালিকা ইত্যাদি। এ জাদুঘরে এ যাবত সংগৃহীত নিদর্শন সংখ্যা মোট ৪০৭৭টি। এর দক্ষিন দিকের গাড়ি বারান্দার উপর দিয়ে দোতলার বারান্দা থেকে একটি সুবৃহৎ সিঁড়ি সামনের বারান্দা দিয়ে নদীর ধার পর্যন্ত নেমে গেছে। প্রাসাদের বহিরাংশে রয়েছে প্রশস্ত খোলা জায়গা। আর রয়েছে সুবিস্তীর্ণ আকাশ। যেখানে রয়েছে গল্প আসরের সুন্দর ব্যবস্থা।
এর অপর নাম কিলা আওরঙ্গবাদ। ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত এ দূর্গটি একটি মুঘল স্থাপত্য নিদর্শন। যা সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র সুবাদার মুহাম্মদ আজম শাহ ১৬৭৮ সালের দিকে নির্মাণ শুরু করেন। তার বিদায়ের পর সুবাদার শায়েস্তা খাঁ এর নির্মাণ কাজ শুরু করলেও এর শেষ করেননি। এই দুর্গটিতে ৩টি স্থাপনা রয়েছে।
পূর্ব দিকের এই স্থাপনাটি দ্বিতল বিশিষ্ট। নিচতলায় রয়েছে একটি হাম্মামখানা। উপরের তলায় দরবার হল। ধারণা করা হয় শায়েস্তা খাঁ এই ঘরে বসবাস করতেন। দরবার হল টিতে রয়েছে মুঘল আমলের বিভিন্ন মুদ্রা, অস্ত্রশস্ত্র, হাতে লেখা কোরআন, তৈজসপত্র ইত্যাদি।
শায়েস্তা খাঁর কন্যা ইরান দুখত রাহমাত বানু যাকে পরিবিবি নামেও ডাকা হতো। তার মৃত্যুর পর দিওয়ান-ই- আম ও শাহী মসজিদের মাঝখানের এ স্থাপনাটিতে তাকে সমাহিত করা হয়। মূল্যবান মার্বেল পাথর, কষ্টিপাথর আর বিভিন্ন ফুল ও পাতার নকশা করা টালি দিয়ে মাজারের ৯টি ঘর সাজানো রয়েছে।
সম্রাট আওরঙ্গজেব এর তৃতীয় পুত্র শাহজাদা আজম শাহ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটি মুঘল মসজিদের আদর্শ উদাহরণ। বর্তমানেও মসজিদটি ব্যবহৃত হচ্ছে।
এছাড়াও এখানে রয়েছে একটি বর্গাকৃতির পানির ট্যাংক, দুর্গ প্রাচীর ও একটি রহস্যময় গুপ্তপথ। জনশ্রুতি আছে এ দুর্গ থেকে বুড়িগঙ্গার তলদেশ দিয়ে জিনজিরা প্রাসাদ ও নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা দুর্গের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। ছোটবেলায় আরেকটি কথা শুনেছি যে, কেউ এই সুড়ঙ্গে প্রবেশ করলে সে আর ফিরে আসে না। যদিও ইতিহাসে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।
এটি ঢাকার টিকাটুলি এলাকায় অবস্থিত। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ঋষিকেশ দাস ১৯৩১সালে ২২ বিঘা জমির উপর এ প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি দেউলিয়া হয়ে গেলে খান বাহাদুর আব্দুর রশিদ কিনে নেন। এর চারপাশে দেশি-বিদেশি প্রচুর গোলাপ গাছ থাকায় এর নাম হয় রোজ গার্ডেন প্যালেস। অবশ্য এখন আর সেই গোলাপ বাগান নেই। প্রাসাদটির স্থাপত্যে করিন্থীয়-গ্রিক শৈলী অনুসরণ করা হয়েছে। এর ৬টি থামে লতাপাতার কারুকাজ করা। ডান পাশে একটি শান বাঁধানো ঘাট রয়েছে। বাগানে আছে মার্বেল পাথরের মূর্তি। একটি কৃত্রিম ফোয়ারা। অবশ্য ফোয়ারা দিয়ে এখন আগের মত পানি বের হয় না। ওপরের নাচঘর, নিচের বৈঠকখানা সহ এই প্রাসাদটিতে মোট ১৩টি ঘর আর কিছু শ্বেত পাথরের মূর্তি রয়েছে। নির্মাণশৈলীর অভিনবত্বে এই ভবনটি অনন্য। সামান্য বর্ণনায় এর সৌন্দর্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। রোজ গার্ডেন প্যালেস ১৯৭০ সাল থেকে নাটক ও সিনেমার শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। ১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন এই বাড়িতেই বর্তমান আওয়ামী লীগ গঠনের পরিকল্পনা হয়। গতবছর বাংলাদেশ সরকার ৩৩১ কোটি টাকা মূল্যে এই প্রাসাদটি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অপূর্ব কারুকার্য খচিত মুঘল স্থাপত্য-শৈলীর অনুপম নিদর্শন জিনজিরা প্রাসাদ। ১৬২১ সালে তৎকালীন সুবাদার ইব্রাহিম খাঁ বুড়িগঙ্গার ওপারে এই ‘নওঘরা’ প্রাসাদটি অবকাশ যাপন ও চিত্তবিনোদনের প্রান্ত নিবাস হিসেবে বড় কাটরার আদলে নির্মাণ করেছিলেন।
স্থানীয়রা একে হাভেলি নগেরা বা হাওলি নগেরা বলে। অযত্ন অবহেলায় ক্রমশঃ জৌলুস হারানো এ প্রাসাদটির ৩টি বিশেষ অংশ আজও টিকে আছে। সেগুলো হলো প্রবেশ তোরণ আর পৃথক দুটি স্থানে দুটি প্রাসাদ। একটি ৩ তলা দেখতে ফাঁসির মঞ্চ বা সিঁড়িঘর বলে মনে হয় ও অন্যটি অজ্ঞাত প্রমোদগার। দুটি অষ্টভুজাকৃতির পার্শ্ববুরুজ। পশ্চিমাংশে দুটি সমান্তরাল গম্বুজ। মাঝ বরাবর ঢাকনাবিহীন অন্য আরেকটি গম্বুজ ও পূর্বাংশে চৌচালা কুঁড়েঘরের আদলে পুরো প্রাসাদের ছাদ। প্রাসাদের পূর্বাংশের ছাদ থেকে একটি সিঁড়ি নিচে নেমে গেছে। মাঝখানে অপূর্ব কারুকার্যখচিত প্রকাণ্ড প্রাসাদ তোরণ। এর পূর্বেই সুড়ঙ্গ পথ। যা দিয়ে মুঘল সেনাপতি ও কর্মকর্তারা লালবাগ কেল্লার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতো। জিনজিরা প্রাসাদ এর সাথে অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলার এক বিষাদময় স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর তার পরিবার-পরিজনদের এ প্রাসাদে দীর্ঘ ৮ বছর বন্দী করে রাখা হয়েছিলো।
১৯০৪ সালে লর্ড কার্জন এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯০৮ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। কার্জন হল মূলত নির্মিত হয়েছিল ঢাকা কলেজের নতুন ভবন হিসেবে। প্রথম দিকে এটি ঢাকা কলেজের লাইব্রেরী হিসেবে ব্যবহার হতো। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে এটি ঢাকা কলেজের মূল ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের অধীনে চলে যায়।
এই ভবনটি নির্মাণে ভিক্টোরীয় স্থাপত্যরীতি মুসলিম ও মুঘল স্থাপত্য শৈলী অনুসরণ করা হয়েছে। ভবনের বহির্পৃষ্ঠে কালচে লাল রঙের ইট যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এর খিলান ও গম্বুজগুলোও অসাধারণ। ১৯৪৮ সালের ২৪ শে মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ বক্তব্যের বিরুদ্ধে কার্জন হল থেকেই সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করেছিল।
১৭০৬ সালে নায়েবে নাজিম ফররুখ শিয়ারের শাসনামলে ঢাকার প্রধান কাজী এবাদুল্লাহর আদেশে পুরানো ঢাকার আতশখানায় খান মোহাম্মদ মৃধা এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। লালবাগ কেল্লার অনতিদূরেে ১৭ ফুট প্ল্যাটফর্মের ওপর দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি নির্মিত। সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত দিল্লির লালকেল্লার সাথে এই মসজিদের অল্পবিস্তর সাদৃশ্য রয়েছে। মোহাম্মদপুরের সাত গম্বুজ মসজিদ ও সেই সময়ে নির্মিত মুঘল স্থাপত্যরীতির মত এ স্থাপত্যেও অভিন্ন মুঘল শিল্পকলার সমাবেশ ঘটেছে। তিনটি বড় গম্বুজ ও অল্পকিছু লম্বা মিনার বিশিষ্ট এ স্থাপনাটির চারদিকে প্রাচীর বেষ্টিত। লাল ইট আর চুনাপাথরের মিশ্রণে স্থাপনাটির রং অনেকটা পোড়ামাটির মত।
মসজিদের বহিরাংশে রয়েছে উন্মুক্ত প্রান্তর। ডান পাশটায় শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষের দৃষ্টিনন্দন বাগান। বাগানের পাশেই রয়েছে একটি পরিত্যক্ত কুয়া। আগে এই কুয়া থেকেই মসজিদের পানি সরবরাহ করা হতো। জনশ্রুতি আছে ঢাকার এই প্রাচীন মসজিদে জ্বিনের আনাগোনা রয়েছে। প্রায় সোয়া তিনশ বছর অতিক্রান্ত হলেও খান মোহাম্মদ মৃধার এ স্থাপনাটি মুসল্লিদের পদচারণায় আজও জমজমাট। জৌলুস কমেনি এতোটুকুও। তিলোত্তমা এ ভবনটি নিঃসন্দেহে অপরূপ এক নিদর্শন হয়ে আজও সাক্ষ্য বহন করে চলেছে মুঘল অভিজাত্যের।
কারবালার প্রান্তরে হযরত ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাত বরণ কে স্মরণ করার জন্য ১৬৪২ সালে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের ছেলে শাহ সুজার নির্দেশে সৈয়দ মুরাদ নামে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি বর্তমান পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের নিকটে এই ইমামবাড়া /হোসেনী দালান নির্মাণ করেন। ৯৩৮০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে শিয়া মুসলিমদের উপাসনালয়টি। বিভিন্ন সময়ে সংস্কার করা এই স্থাপনাটি সর্বশেষ ইরান সরকারের উদ্যোগে ২০১১ সালে সংস্কার করা হয়। ফলে ইরানের ধর্মীয় স্থাপনার বাহ্যিক রূপ ও নান্দনিকতা এতে প্রতিফলিত হয়েছে। এটি একটি উঁচু মঞ্চের উপর স্থাপিত।
প্রবেশ পথে রয়েছে বড় বাগান ও দিঘি। পুরো ভবনটি চমৎকার কারুকার্যময়। ভবনের সামনের জলাশয় এর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ভিতর দুটি বড় হলঘর রয়েছে। রয়েছে আরো কয়েকটি কক্ষ। দক্ষিণ দিকের সম্মুখভাগে তিনতলা বহুভুজ ফাঁপা বুরুজ রয়েছে। বুরুজগুলির শীর্ষে রয়েছে গম্বুজ। ইমারতের কোথাও কোথাও পুরানো আমলের স্থাপত্যের চিহ্ন দেখা যায়। দালানটি সাদা বর্ণের। এর ফটক, দেয়াল ও থামগুলোতে ইরান থেকে আমদানি করা নীল রংয়ের টাইলস লাগানো। টাইলস গুলোতে বিভিন্ন সুরা ও আয়াতের ক্যালিগ্রাফি বা লিপিচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। হোসেনী দালানে আরো রয়েছে শিয়াদের কবরস্থান। আঙ্গিনার শেষে রয়েছে মুঘল আমলে নির্মিত একটি ফটক। এর শান্ত ও নিবিড় পরিবেশ মনে প্রশান্তি এনে দেয়। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে হোসেনী দালানের চমৎকার একটি রুপার রেপ্লিকা রয়েছে।
হিন্দু ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী কিংবদন্তি অনুসারে দক্ষ রাজার কন্যা সতী পতিনিন্দা সহ্য করতে না পেরে দেহ ত্যাগ করলে শোকে মুহ্যমান মহাদেব সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন। সেই সময় বিশ্বচরাচর ধ্বংসের উপক্রম হয়। তখন নারায়ণ সুদর্শন চক্র সহযোগে সতীর দেহ খন্ড করতে থাকেন। এভাবে সতীর দেহ ৫১টি খন্ডে পরিণত হয়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে পতিত হয়। এই প্রতিটি স্থানকে এক একটি সতীপীঠ বলে। সতীদেহের উজ্জ্বল কীরিটের ‘ডাক’ তথা উজ্জ্বল গয়নার অংশবিশেষ এই স্থানে পতিত হলে এই স্থানের নাম হয় ঢাকা। আর ঢাকা থেকে ঢাকেশ্বরী।
আরেকটি কিংবদন্তি অনুসারে ১২শ শতাব্দীতে রাজা বল্লাল সেন শৈশবে জঙ্গলে ঢাকা অবস্থায় একটি মূর্তি পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে সিংহাসনে আরোহনের পর সেই স্থানে একটি মন্দির স্থাপন করেন। আর মন্দিরটির নামকরণ করেন ঢাকা+ঈশ্বরী=ঢাকেশ্বরী করে।
অবশ্য ঢাকেশ্বরী মন্দির এর ইতিহাস সম্পর্কে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। তবে বর্তমান মন্দিরটি ২০০ বছরের পুরনো। এবং দেবী ঢাকেশ্বরীর ৮০০ বছরের পুরনো আসল বিগ্রহটি কলকাতার শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী মাতার মন্দিরে রয়েছে। দেশভাগের সময় একে সরিয়ে ফেলা হয়। বর্তমানে মন্দিরে থাকা বিগ্রহটি মূল মূর্তির প্রতিরূপ। বাংলাদেশের জাতীয় এই মন্দিরটি পলাশী ব্যারাক এলাকায় ঢাকেশ্বরী রোডের উত্তর পার্শ্বে একটি অনুচ্চ আবেষ্টনী প্রাচীরের মধ্যে অবস্থিত। প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি সিংহদ্বার। মূল ফটক দুইটি। মাঝখানেও একটি ফটক রয়েছে। রয়েছে নাটমন্দির। যেখানে রয়েছে নানা রকম অলঙ্কার সুসজ্জিত দুর্গা দেবীর প্রতিমা।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরটি কয়েকটি মন্দির ও সংলগ্ন সৌধের সমষ্টি। এখানে রয়েছে কয়েকটি মন্দির, একটি পান্থশালা ও বেশ কয়েকটি ঘর। পশ্চিমে রয়েছে একটি পুরনো দিঘী।একটি প্রাচীন বট গাছ, কয়েকটি সমাধি। রয়েছে মহানগর পূজা মন্ডপ। মূল মন্দিরের ভবনগুলি উজ্জ্বল হলুদাভ লাল বর্ণের। রয়েছে চারটি শিবমন্দির, নিজস্ব লাইব্রেরী। বর্তমানে মন্দিরটিকে আরো সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে। নানা জাতের ফুল গাছ দিয়ে মন্দিরটির অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এর স্থাপত্যরীতি, গঠনবিন্যাস ও শিল্পচাতুর্য মন্দিরটির সামগ্রিক দৃশ্যকে মাধুর্যমন্ডিত করে তুলেছে।
পুরানো ঢাকার আরমানিটোলায় ১৭৮১ সালে ঢাকায় ব্যবসায়ীক কাজে বসবাসরত আর্মেনিয়ানদের জন্য এই চার্চটি নির্মিত হয়। এর নাম দেয়া হয় চার্জ অফ দা হোলি রিজারেকশন। ১৬০৮ সালে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ঢাকাকে সুবহে বাংলার রাজধানী করলে ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের আনাগোনা শুরু হয়। তখন আর্মেনিয়ানরাও ব্যবসার উদ্দেশ্যে ঢাকায় আগমন করেন। এবং বর্তমান আরমানিটোলায় বসবাস করতে থাকেন। তাদের নামানুসারে ঐ জায়গার নাম হয় আরমানীটোলা। এমনকি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ীর প্রচলনও তারাই করেন।
গির্জাটি নির্মাণের পূর্বে এখানে একটি আর্মেনীয় কবরস্থান ও ছোট একটি উপসনালয় ছিল। গির্জার ফটকটিতে চমৎকার কারুকাজ করা। অন্যসব ক্যাথলিক/ব্যাপ্টিস্ট চার্চ থেকে এই চার্চ সম্পূর্ণ আলাদা। আর্মেনীয়দের নিজস্ব স্থাপত্য রীতিতে তৈরী গির্জাটি লম্বায় সাড়ে ৭০০ ফুট। চারদিকে উঁচু প্রাচীর বেষ্টিত। গির্জার চতুর্পাশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য আর্মেনীয় কবর। কবরগুলোতে রয়েছে শ্বেতপাথর, বেলেপাথর, মার্বেলপাথর আর কষ্টিপাথরের তৈরি এপিটাফ। এপিটাফগুলোতে মৃত ব্যক্তির নাম জন্ম ও মৃত্যু সাল ছাড়াও খোদাই করা আছে কাব্যিক ভাষায় আবেগপূর্ণ শোকগাঁথা ও ধর্মগ্রন্থের বাণী।
একটি কবরের উপর আছে অবেলিস্ক। ওবেলিস্কের উপর মার্বেল পাথরের তৈরি মাদার মেরির একটি হাত ভাঙ্গা ভাস্কর্য। গির্জাটি লম্বায় ২৭ ফুট। সম্পূর্ণ গির্জাটিতে রয়েছে ৪টি দরজা ও ২৭টি জানালা। গির্জার তিন দিক ঘিরে রয়েছে বারান্দা। ভবনের শেষ মাথায় রয়েছে একটি ষড়ভুজ আকৃতির টাওয়ার। টাওয়ারের ভেতরে রয়েছে একটি ঘন্টা। অবশ্য ১৮৮০ সাল থেকে ঘন্টা বাজানো বন্ধ হয়ে গেছে। ঘন্টা ঘরের পাশে ক্লক টাওয়ার হিসেবে একটি সুদৃশ্য গির্জাচূড়া ছিল। যা ১৮৯৭ সালে বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ভেঙে যায়। অবশ্য পরবর্তীতে এর সংস্কার করা হয়।
সমগ্র গির্জাটিতে সাদা রং করা। কলাম ও রেলিং এর ধার গুলোতে হলুদ রং দিয়ে নকশা করা। চার্চের ভিতরে রয়েছে সারি সারি ব্যাঞ্চ। রয়েছে একটি বেদি। বেদির ওপর যিশুখ্রিস্টের বিশাল ছবি। উপরে উঠার জন্য সুদৃশ্য প্যাঁচানো একটি কাঠের সিঁড়ি। উপরে নারী ও শিশুদের জন্য সংরক্ষিত গ্যালারি যুক্ত একটি স্থান। চার্চ প্রাঙ্গণের শেষ মাথায় লাল ইটের প্রাচীন একটি বাড়ি রয়েছে। এখানে চার্চের ওয়ার্ডেন থাকতেন। চার্চটির বর্তমান ওয়ার্ডেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত জনৈক আর্মেনীয় আর্মেন আর্স্লেনিয়ান। তিনিই চার্চটির খোঁজখবর রাখেন। তার অনুপস্থিতিতে শংকর ঘোষ নামে এক হিন্দু ৩২ বছর ধরে চার্চটি দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এই চার্চ এখনো পরিচালনা করছেন আর্মেনীয়দের শেষ বংশধররা। এই চার্চে এখন আর নিয়মিত প্রার্থনাসভা বসে না। মাঝে মাঝে অনিয়মিত কিছু অনুষ্ঠান ও প্রার্থনা হয়। তবুও ঢাকার বুকে আর্মেনিয়ানদের স্থাপিত একমাত্র ঐতিহাসিক এই আর্মেনিয়ান গির্জাটি যুগ যুগ ধরে আর্মেনীয়দের ইতিহাস ও স্মৃতি বহন করছে।
পুরানো ঢাকার ফরাশগঞ্জের শ্যামবাজারে অবস্থিত রূপলাল হাউজ। ঢাকার বিখ্যাত আর্মেনীয় জমিদার আরাতুন ১৮২৫ সালে এ ভবনটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে রূপলাল ও রঘুনাথ দুই সহোদর এটি কিনে পুনঃনির্মাণ করেন। এটি ৯১.৪৪ মিটার দীর্ঘ একটি দ্বিতল ভবন। প্রস্থ ১৮.৩০ মিটার। তখনকার যুগের অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই স্থাপত্যটি ইংরেজি E আকৃতিতে তৈরি। এর ডিজাইন করেছিলেন কলকাতার মার্টিন এন্ড কোম্পানীর একজন স্থপতি।
দ্বিতল এই ভবনের স্থাপত্যশৈলী অভিনব। কয়েক ধরনের স্থাপত্যরীতির মিশেলে তৈরি এই ভবন। বাড়ির প্রবেশ পথ আর্মেনিয়ান ধাঁচের। প্রবেশপথের বিশাল কলামগুলো তৈরি ক্লাসিক করিন্থিয়ান স্টাইলে। খিলানের টিমপেনামে রয়েছে রঙ্গীন কাঁচের অলংকরণ। ছাদ আর মেঝেতে অসাধারণ কারুকাজ করা। ছাদটি নির্মিত হয়েছিল করিন্থীয় রীতিতে। এর ওপরে রয়েছে রেনেসাঁ যুগের কায়দায় নির্মিত পেডিমেন্ট। সমতল ছাদের কয়েকটি স্থানে তিনটি চিলেকোঠা আছে। ভবনটির দোতলায় দুটি অংশে বিভিন্ন আয়তনের ৫০টিরও বেশি কক্ষ রয়েছে। রয়েছে কয়েকটি প্রশস্ত দরবার কক্ষ। পশ্চিম দিকে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় নাচঘর। যার মেঝে কাষ্ঠনির্মিত।
পুরো বাড়ি জুড়ে দক্ষিণ আর উত্তর পার্শ্বে বাতাস টেনে আনার জন্য রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা। বারান্দা দুটি ইট নির্মিত সেমি-করিন্থীয় স্তম্ভের ওপর সংস্থাপিত। ভবনের দরজা ও জানালা গুলোতে কাঠের ভেনিসীয় গ্রিল সমন্বিত পাল্লা ব্যবহৃত হয়েছে। জানালার ফ্রেম ফ্রেঞ্চ ক্লাসিক্যাল স্টাইলের রঙিন কাঁচে মোড়ানো। রূপলাল হাউজের পেছনদিকে প্রবাহমান বুড়িগঙ্গা নদী। নদীর দিকে সম্মুখভাগে আরবান স্কেল এর একটি ঘড়ি ছিল।১৮৯৭ সালে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে সেটা ভেঙে যায়। অনেকে দাবি করেন এটি লন্ডনের বিগ ব্যান থেকে অনুপ্রাণিত ছিল। একসময় ভবনের আঙিনায় ছিল দুটি প্রশস্ত পাকা করা উঠান। বাড়ির তিনদিকে ছিল বিস্তৃর্ণ জায়গা। ভবনের এক পাশে ছিল রঘুবাবুর বাগান আরেক পাশে ছিল শ্যামবাজার পুল। কালের বিবর্তনে অযত্ন-অবহেলায় দখলদারদের করালগ্রাসে এগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। রূপলাল বাবু তার সৌখিন, বিলাসী ও সৃষ্টিশীল চিত্তের সুনিপুণ প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন রূপলাল হাউজের মাধ্যমে।
জানা যায় একদা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রানী আলেক্সান্দ্রিনা ভিক্টোরিয়ার কলকাতা ও ঢাকায় অতিথি হিসাবে আসার কথা ছিল। সে উপলক্ষে কলকাতায় নির্মাণ করা হয় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল। ঢাকায় নতুন করে কিছু বানানো হয়নি। তবে সেই সময় ঢাকায় নবাব পরিবারের আহসান মঞ্জিল ও দাস পরিবারের রূপলাল হাউজ এ দুটি ভবন ছিল সবচেয়ে বিলাসবহুল। বলা হয়ে থাকে নবাবদের সাথে দাস পরিবারের প্রতিপত্তির প্রতিযোগিতা সব সময় লেগে থাকত। সুতরাং রানীকে আতিথ্য দেয়ার ক্ষেত্রেও এই দুই প্রাসাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও ভোটাভুটি হয়।
সে উপলক্ষে ১৯৮৮ সালে তৎকালীন ভারতের ভাইসরয় লর্ড ডাফরিন কিছু ব্রিটিশ সাহেব নিয়ে সরেজমিনে দুটি বাড়ি দেখে গিয়েছিলেন। এ সময় তার সম্মানে রুপলাল হাউজে একটি বল নাচবল নাচের আয়োজন করা হয়। লর্ড ডফরিন রুপলালের বিলাসবহুল বাড়ি ও তার আয়োজনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। ফলে ভোটাভুটিতে রূপলাল হাউজ জিতে যায়। অবশ্য পরে রানী ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল কিংবা রূপলাল হাউজ কোনটিতেই আসেননি।
রুপলাল ছিলেন সংস্কৃতমনা। তার বিখ্যাত জলসাঘরে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত ও নৃত্য শিল্পীরা আসতেন। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ ওয়ালীউল্লাহ খাঁ, লক্ষ্মী দেবীর সুর-তালে ও শান শওকতে ঝংকৃত হতো বুড়িগঙ্গার দিকে মুখ করা এই জলসাঘর। অবশ্য এসবই এখন ইতিহাস। দেশভাগের পর দাস পরিবার ঢাকা ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমান। আস্তে আস্তে রুপলাল হাউজ তার জৌলুস হারাতে থাকে। একসময় তা চলে যায় সবজি ও মসলা ব্যবসায়ীদের দখলে। তবে কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশ সরকার দখলদারদের হাত থেকে রূপলাল হাউজটি উদ্ধার করে সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রেখেছে।
পুরানো ঢাকার সদরঘাটের সন্নিকটে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক। এর পশ্চিমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তর পশ্চিমে জেলা আদালত অবস্থিত। পূর্বে এর নাম ছিল ভিক্টোরিয়া পার্ক। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবে শহীদ বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে সিপাহী যুদ্ধের ঐক্যের প্রতীক বাহাদুর শাহ জাফরের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক।
ওয়ারীতে অবস্থিত এটি একটি উদ্ভিদ উদ্যান। বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ৩.৩৮ একর জমির ওপর ১৯০৯ সালে উদ্যানটি নির্মাণের কাজ আরম্ভ করেন। যা শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ৮ বছর। বিরল প্রজাতির ৮০০ গাছসহ বাগানটিতে প্রায় ১৮ হাজার গাছ রয়েছে। বর্তমানে এখানে ৬৭২ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বাগানটিতে এমনও অনেক প্রজাতির গাছ রয়েছে, যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই।
জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ওয়ারী, টিকাটুলী ও নারিন্দার ঠিক মাঝখানে দু’টি ভাগে বলধা গার্ডেন তৈরি করেছেন। বলধা গার্ডেনের এক পাশের নাম সাইকি এবং অপর পাশের নাম সিবিলি। বলধা গার্ডেনের সাইকি অংশটিতে সবার যাওয়ার অনুমতি নেই। এটা বন্ধ করে রাখা হয়। কারণ এমন কিছু দুর্লভ প্রজাতির গাছ রয়েছে যা মানুষের আনাগোনায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাইকিতে রয়েছে নীল, লাল ও সাদা শাপলাসহ রঙ্গিন পদ্মা, তলা জবা, অপরাজিতা, ক্যাকটাস, পামগাছ, জবা, প্রভৃতি। এখানে আরো রয়েছে ‘সেঞ্চুরি প্লান্ট’ নামক শতবর্ষে একবার ফোটা ফুলের গাছ।
সপ্তাহের প্রতিদিনই এটি সকাল ৮টা থেকে ১১টা এবং ২টা থেকে ৫টা খোলা থাকে।
১৭ শতকে সম্রাট জাহাঙ্গীর ঢাকায় বাংলার রাজধানী স্থাপন করলে রাজধানী ঢাকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে বেশ কিছু কামান তৈরি করা হয়। এসব কামানের মধ্যে “কালে খাঁ জমজম” ও “বিবি মরিয়ম” বিশালত্বে, নির্মাণ শৈলীতে ও সৌন্দর্যে ভারতখ্যাত হয়ে ওঠে।
“কালে খাঁ” বুড়িগঙ্গা নদীতে তলিয়ে গেলে বিবি মরিয়ম হয়ে ওঠে দর্শনীয় বস্তু। বিবি মরিয়মের দৈর্ঘ্য ১১ ফুট। মুখের ব্যাস ৬ ইঞ্চি। ঢাকার কামান তৈরীর কারিগর জনার্ধন কর্মকার অত্যন্ত শক্ত পেটানো লোহা দিয়ে কামানটি তৈরী করেন।
সুবাদার মীর জুমলা ১৬৬১ সালে আসাম অভিযানের সময় ৬৭৫ টি কামান ব্যবহার করেন তার মধ্যে বিবি মরিয়ম ছিল সর্ববৃহৎ। যুদ্ধ বিজয়ের স্মারক হিসেবে তিনি বিবি মরিয়মকে বড় কাটরার দক্ষিণে সোয়ারীঘাটে স্থাপন করেন। তখন কামানটি মীর জুমলার কামান নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৮৪০ সালে তৎকালীন ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট ওয়ালটারস ঢাকার চকবাজারে এটিকে স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ১৯২৫ সালে বিবি মরিয়মকে সদরঘাটে স্থাপন করা হয়। গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে বিবি মরিয়মকে সদরঘাট থেকে এনে শহরের শোভাবর্ধনের জন্য ঢাকার কেন্দ্র স্থল গুলিস্থানে স্থাপন করা হয়।
১৯৮৩ সালে বিবি মরিয়ম কে গুলিস্থানের মোড় থেকে উঠিয়ে এনে ওসমানী উদ্যানের প্রধান ফটকের পেছনে স্থাপন করা হয়।
মিরপুরের চিড়িয়াখানা আর বোটানিক্যাল গার্ডেন পাশাপাশি অবস্থিত। বিশাল জায়গা নিয়ে অবস্থিত এই গার্ডেনে ৮২.৯ হেক্টর অংশে আছে শুধু গাছপালা। আরো আছে পুকুর খাল ও সরু রাস্তা। সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে দেখা যাবে গোলাপ বাগান, রাস্তার পাশে আকাশমনি, শাপলাপুকুর, বাঁশঝাড়, পাদ্মপুকুর, ইউক্যালিপটাসের বাগান, গ্রিনহাউজ, ক্যাকটাসঘর ও গোলাপ বাগান। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন খোলা থাকে।
শিশু পার্কের উল্টো পাশেই এই রমনা পার্ক অবস্থিত। এটি প্রতি দিন খোলা থাকে, কোনো প্রবেশ মূল্য নেই। এর ভিতরে আছে চমৎকার খাল, সরু পায়েচলার রাস্তা, অসংখ্য গাছ আর সবুজ ঘাসের লন। এর ভেতরে আছে চাইনিজ রেস্তোরা।
এই লেকটি সারা ধানমন্ডি এলাকা ঘুরিয়ে- পেঁচিয়ে প্রায় ১০ কি.মি পর্যন্ত চলে গেছে। ৫০মিটার চওড়া এই লেকটির গভীরতা ৮ থেকে ৯ মিটার পর্যন্ত। এর বিভিন্ন অংশের উপরে রয়েছে সেতু পারাপারের জন্য, রয়েছে পথচারি বসে বিশ্রামের জন্য বসার ব্যবস্থাও। ৮নং সেতুর কাছে রয়েছে একটি ডিঙ্গি নামক ক্যাফে।
গুলশানের লেকের পার ছুয়ে এটি বিস্তৃত। ২.৪১ হেক্টর জায়গা নিয়ে এর আধিপত্ত।
পুরান ঢাকার বড় কাটরার দক্ষিন দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর অপর তীরে জিনজিরা প্রাসাদ অবস্থিত। মুঘল সুবহাদার দ্বিতীয় ইব্রাহিম খান তাঁর প্রমোদ কেন্দ্র হিসেবে জিনজিরা প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা’র পতনের পর ঘসেটি বেগম, আমেনা বেগম, সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী লুত্ফুন্নেছা বেগম এবং তাঁর কন্যাকে জিনজিরা প্রাসাদে এনে বন্দী রাখা হয়। আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে শহর থেকে জিনজিরার মধ্যে চলাচলের জন্য একটি কাঠের পুল ছিল। প্রাসাদটির পূর্বাংশ তিনতলা সমান, মাঝ বরাবর প্রকাণ্ড প্রাসাদ তোরণ। তোরণ প্রাসাদকে দুই ভাগ করে অপর প্রান্তে খোলা চত্বরে মিশেছে। প্রাসাদ তোরণের পূর্বাংশেই ছিল সুড়ঙ্গপথ।
শহরের পান্থপথের অভিজাত বিপণি বসুন্ধরা সিটির লেভেল-৮এ টগী ওয়ার্ল্ড অবস্থিত। চীনের প্রাচীর, স্টাচু অফ লিবার্টি, তাজমহল, পিরামিড, আইফেল টাওয়ারের আদলে সাজানো হয়েছে এখানকার ১০টি রাইড।
রমনা পার্কের উল্টো পাশে এর অবস্থান। কম-বেশী ১৪টি রাইড এখানে রয়েছে বাচ্চাদের জন্য। বুধবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিনামূল্যে পথশিশুদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়। রবিবারে শিশুপার্কটি বন্ধ থাকলেও সপ্তাহের বাকি দিনগুলি বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সকলের জন্য খোলা থাকে।
বড় কাটরা ঢাকায় অবস্থিত মুঘল আমলের নিদর্শন। সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজার নির্দেশে ১৬৪১ সালে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে এই ইমারতটি নির্মাণ করা হয়। এটা নির্মাণ করেন আবুল কাসেম যিনি মীর-ই-ইমারত নামে পরিচিত ছিলেন। প্রথমে এতে শাহ সুজার বসবাস করার কথা থাকলেও পরে এটি মুসাফিরখানা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।এক সময় স্থাপত্য সৌন্দর্যের কারনে বড় কাটরার সুনাম থাকলেও বর্তমানে এর ফটকটি ভগ্নাবশেষ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। এক সময় বড় কাটরার তোরণে ফার্সি ভাষায় শাদুদ্দিন মুহম্মদ সিরাজী লিখিত একটি পাথরের ফলক লাগানো ছিল। যেখানে এই মুসাফির খানার নির্মাতা এবং এর রক্ষনাবেক্ষনের ব্যয় নির্বাহের উপায় সম্পর্কে জানা যায়।
ফলকে লেখা ছিলঃ
সুলতান শাহ্ সুজা সব সময় দান-খয়রাতে মশগুল থাকিতেন। তাই খোদার করুণালাভের আশায় আবুল কাসেম তুব্বা হোসায়নি সৌভাগ্যসূচক এই দালানটি নির্মাণ করিলেন। ইহার সঙ্গে ২২টি দোকানঘর যুক্ত হইল যাহাতে এইগুলির আয়ে ইহার মেরামতকার্য চলিতে পারে এবং ইহাতে মুসাফিরদের বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা হইতে পারে। এই বিধি কখনো বাতিল করা যাইবে না। বাতিল করিলে অপ্রাধী শেষ বিচার দিনে শাস্তি লাভ করিবে। শাদুদ্দিন মুহম্মদ সিরাজি কর্তৃক এই ফলকটি লিখিত হইল।
ছোট কাটারা শায়েস্তা খানের আমলে তৈরি একটি ইমারত। আনুমানিক ১৬৬৩ থেকে ১৬৬৪ সালের দিকে এই ইমারতটির নির্মান কাজ শুরু হয় এবং তা ১৬৭১ সালে শেষ হয়। এটির অবস্থান ছিল বড় কাটারার পূর্বদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। ইমারতটি দেখতে অনেকটা বড় কাটারার মত হলেও এটি আকৃতিতে বড় কাটারার চেয়ে ছোট এবং এই কারণেই হয়তো এর নাম রাখা হয়েছিল ছোট কাটারা। তবে ইংরেজ আমলে এতে বেশ কিছু সংযোজন করা হয়েছিল। ১৮১৬ সালে মিশনারি লিওনার্দ ঢাকার প্রথম ইংরেজি স্কুল।বর্তমানে ছোট কাটারা বলতে কিছুই বাকি নেই শুধু একটি ভাঙা ইমারত ছাড়া। যা শুধু বিশাল তোড়নের মতন সরু গোলির উপর দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে অসংখ্য দোকান এমন ভাবে ঘিরে ধরেছে যে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এখানে মুঘল আমলের এমন একটি স্থাপত্য ছিল।
শায়েস্তা খানের আমলে ছোট কাটরা নির্মিত হয়েছিল সরাইখানা বা প্রশাসনিক কাজে ব্যবহারের জন্য। কোম্পানি আমলে ১৮১৬ সালে মিশনারি লিওনারদ ছোট কাটরায় খুলেছিলেন ঢাকার প্রথম ইংরাজি স্কুল। ১৮৫৭ সালে এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ঢাকার প্রথম নরমাল স্কুল। উনিশ শতকের শেষের দিকে অথবা বিশ শতকের শুরুর দিকে ছোট কাটরা ছিল নবাব পরিবারের দখলে। এবং তাতে তখন কয়লা ও চুণার কারখানার কাজ চলত।
ছোট কাটরার সাথে বিবি চম্পার স্মৃতিসৌধ অবস্থিত ছিল।এক গম্বুজ, চার কোণা, প্রতিপাশে ২৪ ফুট দীর্ঘ ছিল স্মৃতিসৌধটি। তায়েশ লিখেছেন পাদ্রী শেফার্ড ওটা ধ্বংস করে দিয়েছেন।শেফার্ড বোধহয় কবরটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। বিবি চম্পা কে ছিলেন তা সঠিক জানা যায় নি। তবে কারো মতে তিনি শায়েস্তা খাঁর মেয়ে। তবে বর্তমানে ছোট কাটরাকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এখনও এর ধ্বংসাবশেষ দেখলে বোঝা যায় মোঘল আমলে নদীতীরে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট কাটরাকেও কী সুন্দরই না দেখাত ।
শহুরে যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু বিশ্রামের জন্য বা শারীরিক ক্লান্তি অথবা মানসিক অবসাদ দূর করার জন্য আমরা অনেক জায়গাতেই তো ঘুরতে যাই। তবে সবসময় দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে যেমন সময় লাগে তেমনি খরচও হয় বেশি। খরচের থেকেও সময় ম্যানেজ করাটাই হয়ে উঠে প্রধান প্রতিবন্ধকতা। তাই কম সময়ে কাছে কোথাও ঘুরে আসতে পারবেন এমন অনেক জায়গাই আছে ঢাকার আশে পাশে । তারমধ্যে খুব সুন্দর আর মন ভা) যা ঢাকার অদূরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। ঢাকার খুব কাছেই সাভারের তুরাগ নদীর তীরে সাদুল্লাপুরের অবস্থান। বিশ্বাস রাখতে পারেন, এই গ্রাম আপনার যান্ত্রিক জীবনের অনেকটা ক্লান্তিই দূর করে দিবে।
পুরোটা গ্রামটাই যেন গোলাপের বাগান! উঁচু জমিগুলো ছেয়ে আছে মিরান্ডি জাতের গোলাপে। লাল, হলুদ, সাদা—কত বর্ণের যে গোলাপ তার কোনো ইয়ত্তা নেই। যতদূর যাবেন গোলাপে ঢাকা চারপাশ আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে। সকালের শিশির ভেজা গোলাপে নরম আলোর ঝিকিমিকি। গ্রামের বুক চিরে চলে গেছে আঁকাবাঁকা সরু পথ। তার দু’পাশে বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান। ফুটে আছে টকটকে লাল গোলাপ। গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে গোলাপের সৌরভ। এখানের যেকোনো বাগান থেকে কথা বলে আপনি গোলাপ কিনে নিতে পারেন। তবে ওরা ওখানে ১০০-১৫০ এর কম গোলাপ বিক্রি করতে চায় না।
সাহদুল্লাহপুর পুরো গ্রামটাই নানা রঙের গোলাপ ফুল দিয়ে ঘেরা। এটাকে গোলাপ গ্রাম বলা হলেও এখানে গোলাপ ছাড়াও অনেক ফুল আছে, যেমন- জারভারা, গ্লাডিওলাস। ঢাকার বেশি ভাগ ফুল চাহিদা এখান থেকে মেটানো হয়। শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন ফুলের বাজারগুলোতে গোলাপের প্রধান যোগান দেন এখানকার চাষিরা।
ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদ। ১৯৫৯ সালে ‘বায়তুল মুকাররম মসজিদ সোসাইটি’ গঠনের মাধ্যমে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। পুরান ঢাকা ও নতুন ঢাকার মিলনস্থলে মসজিদটির জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। মসজিদটির নির্মাণ শুরু হয় ১৯৬০ সালে, শেষ হয় ১৯৬৮ সালে। আয়তন ২৬৯৪ বর্গ মিটার। মসজিদটির স্থপতি টি. আব্দুল হুসেন থারিয়ানি। একসঙ্গে ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
চন্দ্রিমা উদ্যান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র সংসদ ভবনের পাশে অবস্থিত। সাবেক রাষ্ট্রপতি বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধি এখানে অবস্থিত। সমাধিকে কেন্দ্র করে এখানে মাজার কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী এই উদ্যানটি এবং লেকটি দেখতে আসেন। শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাতঃভ্রমণকারীদের জন্য এটি একটি উত্তম স্থান। ঢাকা শহরের উদ্যানগুলির মধ্যে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যান।
জিয়া উদ্যানটি শেরে বাংলানগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। জিয়া উদ্যানের দক্ষিণে জাতীয় সংসদ ভবন, উত্তরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও বাণিজ্যমেলার মাঠ, পশ্চিমে গণভবন এবং পুর্বে তেজগাঁও পুরানো বিমানবন্দর অবস্থিত। এটির অবস্থান । এ উদ্যানটি ৭৪ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত।
প্রথম দিকে এই উদ্যানের নামকরণ করা হয়েছিল “চন্দ্রিমা উদ্যান”। এই নামকরণের প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু মতামতও পাওয়া যায়। কারো কারো মতে, এখানে চন্দ্রিমা নামে একজনের বাড়ি ছিল, সেখান থেকেই এই নামের উৎপত্তি। আবার কারো কারো মতে, দক্ষিণপাশে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ক্রিসেন্ট লেকের সাথে মিল রেখে রাষ্ট্রপতি এরশাদ এর নাম চন্দ্রিমা উদ্যান রেখেছিলেন। দীর্ঘদিন একে গবাদিপশুর খামার, খাস জমি এবং চাষাবাদ জমি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৮১ সালে এই স্থানে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে সমাধিস্থ করা হয় এবং এলাকাটিকে পরিষ্কার করে দর্শণার্থীদের জন্য মনোরম স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হয়। পরবর্তী সময়ে মরহুম জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর চন্দ্রিমা উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে একে জিয়া উদ্যান নামকরণ করেন। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার জিয়া উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে আবার চন্দ্রিমা উদ্যান করেছিল। পরে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেটার নাম পরিবর্তন করে জিয়া উদ্যান নাম করে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার আবার নাম পরিবর্তন করে চন্দ্রিমা উদ্যান রেখেছে। এখন এই স্থানটি কারো কাছে চন্দ্রিমা উদ্যান আবার কারো কাছে জিয়া উদ্যান নামে পরিচিত।
চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের সমাধির দক্ষিণ পাশে ক্রিসেন্ট লেক অবস্থিত। এটি বাঁকা চাঁদের মত দেখতে বিধায় ক্রিসেন্ট লেক নাম রাখা হয়েছে। এটির দক্ষিণ পাশে চমৎকার করে সিঁঁড়ি তৈরি করা হয়েছে ও দর্শণার্থীদের বসার স্থান করা হয়েছে চারপাশজুড়ে। ভিতরে প্রবেশের জন্য লেকের মাঝখান দিয়ে তৈরি হয়েছে মনোরম সেতু। ক্রিসেন্ট লেকের মাঝে ঝুলন্ত সেতুর দুই পাশে দুটি ফোয়ারা রয়েছে। সন্ধ্যার পর ফোয়ারাগুলো চালু করা হলে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।
হাতিরঝিল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি এলাকা যা জনসাধারণের চলাচলের জন্য তৈরী করা হয়েছে। এ প্রকল্প এলাকাটি উদ্ধোধন ও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয় ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি। এ প্রকল্প চালুর ফলে ঢাকার তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও মগবাজার এলাকার বাসিন্দাসহ এ পথ দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন। হাতিরঝিল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও তদারকি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘স্পেশাল ওয়ার্কস অরগানাইজেশন’ (এসডব্লিউও)। এ প্রকল্পের অন্যতম মূল লক্ষ্য হচ্ছে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধ, ময়লা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজধানীর যানজট নিরসন এবং শ্রীবৃদ্ধি করা।
ভাওয়ালের রাজার এস্টেটের হাতিরঝিলসহ তেজগাঁও এলাকায় অনেক ভূসম্পত্তি ছিল। এস্টেটের হাতির পাল এখানকার ঝিলে স্নান করতে বা পানি খেতে বিচরণ করত বলে কালের পরিক্রমায় এর নাম হাতিরঝিল হয়।
বাংলাদশের পুরানো ঢাকার আরমানিটোলা-র আবুল খয়রাত সড়কে অবস্থিত ‘তারা মসজিদ’। খ্রিষ্টীয় আঠারো শতকে ঢাকার জমিদার মির্জা গোলাম পীর (মির্জা আহমদ জান) এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। তারা মসজিদের আরও কিছু প্রচলিত নাম আছে, যেমন, মির্জা গোলাম পীরের মসজিদ বা সিতারা মসজিদ।সতের শতকে দিল্লি, আগ্রা ও লাহোরে নির্মিত মোঘল স্থাপত্য শৈলী অনুসরণে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মসজিদের কোথায়ও এর তৈরির সময় উল্লেখ নেই বলে কবে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়, তার সুস্পষ্ট কোনো নথি পাওয়া যায়নি। তবে, মসজিদটি তৈরির পর ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে মির্জা গোলাম পীর মৃত্যুবরণ করেন।
প্রথম থেকেই মসজিটি আয়তাকার ছিল। মির্জা গোলাম পীর তৈরির আদি মসজিদটির পরিমাপ ছিল দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট (১০.০৬ মিটার) এবং প্রস্থে ১২ ফুট (৪.০৪ মিটার), গম্বুজ ছিল তিনটি। এর ভিতরে মাঝের গম্বুজটি অনেক বড় ছিল। সাদা মার্বেল পাথরের গম্বুজের উপর নীলরঙা তারার নকশা যুক্ত ছিল। সেই থেকে এই মসজিদটি তারা মসজিদ নামে পরিচিত হয়ে উঠে। এর পূর্ব দিকে মসজিদে প্রবেশর জন্য তিনটি এবং উত্তর দিকে ১টি এবং দক্ষিণ দিকে ১টি দরজা ছিল।রিকশা বা সিএনজিযোগে পুরানো ঢাকার আরমানিটোলা যাওয়া যায়।
১৯৯৫ সালে মিরপুর বেনারশী পল্লী প্রতিষ্ঠা হলেও ধারণা করা হয় ১৯৯০ সালে এখানে হাতে গোনা দু তিনটি গদিঘর ছিল। এই গদিঘর হল বেনারশী শাড়ি তৈরীর কারখানা এবং খুচরা ও পাইকারী বিক্রয় কেন্দ্র। এই দু-তিনটি গদিঘর সময়ের পরিক্রমায় চাহিদার ভিত্তিতে আরও কিছু গদিঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐতিহ্যবাহী এবং পুরনো গদিঘরগুলোর সাথে নতুন কিছু ব্যবসায়ীরা এসে যোগ হলে এলাকাটি একটি পরিপূর্ণ বেনারশী পল্লীতে পরিণত হয়। পরবর্তীতে কারখানাগুলো স্থানান্তর করে গদিঘরগুলোকে শোরুম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এরপর থেকেই বেনারশী পল্লীর সুনাম ও শাড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। দেশ-বিদেশে রপ্তানী করে বেনারশী পল্লী বেশ ভাল পরিচিতি লাভ করে।
বর্তমানে বেনারশী পল্লীতে ১০৮টি শোরুম আছে। বাংলাদেশ তথা ঢাকা শহরে বেনারশী পল্লী একটাই। আর সেটি মিরপুরে। অবস্থান সেকশন-১০, ব্লক-এ, লেন ১-৪, অরিজিনাল-১০, মিরপুর, ঢাকা-১২২১। সাধারণত সকাল ১০.০০ টা – রাত ৮.৩০ মিনিট পর্যন্ত শোরুমগুলো খোলা থাকে। রবিবার পূর্ণদিবস এবং সোমবার দুপুর ১২.০০ টা পর্যন্ত শোরুম বন্ধ থাকে।
চারতলা ভবন। ঘিয়ে রঙের মধ্যে সোনালি কারুকাজ। ছাদে সুদীর্ঘ দুটি মিনার। জানালার কাচগুলো নীলাভ। সুবিশাল প্রবেশদ্বার। ভেতরে সাদা আর খয়েরিরঙা টাইলসের মেঝে। ভবনের চারপাশে গাছগাছালির ছায়া। ব্যস্ত সড়কের পাশে হঠাৎ ভবনটি দেখলে যে কেউ থমকে দাঁড়ান।
মিরপুর আনসার ক্যাম্প এলাকায় অবস্থিত নয়নাভিরাম এই ভবনটি পাইকপাড়া সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার জামে মসজিদ। গণপূর্ত বিভাগের জায়গায় কুয়েত জয়েন্ট রিলিফ কমিটি (কেজেআরসি), বাংলাদেশ অফিস এই মসজিদটি নির্মাণ করেছে। মসজিদটি তৈরিতে সময় লেগেছে পাঁচ বছর, আর খরচ পড়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। মসজিদ নির্মাণে অর্থায়ন করেছে কুয়েত আওক্বাফ পাবলিক ফাউন্ডেশন (কেএপিএফ)।
নির্বাহী প্রকৌশলী মিরপুর গণপূর্ত বিভাগের কার্যালয়ের প্রবেশপথের পাশে এই মসজিদ অবস্থিত। ২০১১ সালে মসজিদ কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের অত্যাধুনিক স্থাপত্যশৈলীর মসজিদটি নামাজ আদায়ের জন্য খুলে দেওয়া হয় ২০২০ এর ২৫ মার্চ।