বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার এনামুল হক। ১৪ বছর আগে উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় পাড়ি জমান ইতালিতে। তিন ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে স্ত্রী, দুই ছেলে বড় ও ছোট ইতালি চলে আসেন। কিন্তু মেজো ছেলে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী বিধায় সে দেশে থেকে যায়। ইতালিতে আসতে তার ভিসার মেয়াদ দীর্ঘ ছিল। চেষ্টা করেছে পরীক্ষা দিয়ে চলে আসতে।
কিন্তু বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় তিনি এক মাস পর চলতি বছরের মার্চে ইতালি চলে আসেন। এনামুল হক গত ১০ আগস্ট স্ত্রী ও সন্তানসহ টিকা দিতে ভেনিসের একটি ভ্যাকসিন সেন্টারে যান। টিকা নিয়ে বাসায় ফেরার পর তার ১৫ বছরের মেজো ছেলে মুসিউর রহমান তাসফিরের জ্বর, মাথা ব্যথা এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। পরে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে দুদিন পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। তিনি ইতালিতে নতুন।
করোনা পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত ডাক্তারি কার্ড করতে বিলম্বিত হচ্ছিল। তাই তাকে যথাসম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিকিৎসা করতে সক্ষম হয়নি পরিবারের পক্ষ থেকে। সবশেষ তাকে হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা, রক্ত পরীক্ষা করার পর সামান্য ওষুধ দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।
এভাবে চার বার তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে প্রত্যেকবার একই ব্যবস্থা ও ওষুধ দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে চাওয়া হয় তার ডাক্তারি কার্ড।
অবশেষে ২০ দিন যুদ্ধ করে ৩০ আগস্ট ভেনিস মেসরে আঞ্জেল হাসপাতালে মারা যান তিনি।
পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের গাফিলতি ও অবহেলায় অকালে মারা গেছে মুশিউর।
গুরুত্বহীন চিকিৎসা এবং তার মৃত্যুর পর কথা লুকিয়ে তার পিতা-মাতার স্বাক্ষর নিয়ে শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গ নেওয়ার চেষ্টা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে।
কমিউনিটির ব্যক্তিরা এ বিষয়ে ইতালি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য, সমগ্র ইতালিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কথাও বলেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১২ সেপ্টেম্বর ভেনিস মেসরে সেন্টারের ট্রেন স্টেশন থেকে পিয়াচ্ছা বারকে কয়েন মার্কেটের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে র্যালিতে হাজারও বাংলাদেশি নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
সকলের দাবি, মুশিউর রহমান তাসফিরের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করা ও প্রবাসীদের সব প্রকার সেবার অধিকার সঠিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
প্রবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ইতালির সরকারি ও বেসরকারি রাজনৈতিক দলের অনেক নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশি প্রবাসীদের পক্ষে কামরুল সারোয়ার, ইদ্রিস হাওলাদার, মনোয়ার ক্লার্ক রফিক সৈয়াল, মো. বিল্লাল হোসেন, পলাশ রহমান, ইরফান মাস্টার, শাহাদাত হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, প্রিন্স, রাশেদা বেগম, সাহেদা খাতুনসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।
প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি প্রবাসীর বাস ইতালিতে। মানবাধিকার ও জবাবদিহিতা সাংবিধানিকভাবে শক্তিশালী দেশটি। তারপরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন প্রবাসীরা। তবে আদালতে বরাবরই প্রবাসীদের অধিকার রক্ষিত হয়।
বাংলা পত্রিকা