উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বেশ দাপটের সাথেই এগিয়ে চলেছে চীন। বহির্বিশ্বের কাছে বিনিয়োগ, উচ্চশিক্ষা, পর্যটন সহ প্রায় সকল ক্ষেত্রেই চীন এক নতুন আকর্ষণের নাম। আর এ সকল কারণেই চীনে বিদেশীদের আগমনও দিন দিন বাড়ছে। তবে প্রথমবারের মত যারা চীনে আসেন তাদের অনেকেই বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হন, আর এ রকম কিছু সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতেই নিন্মে কিছু পরামর্শ উল্লেখ করা হলো।
১) ভাষাগত সমস্যা :
চীনা ভাষা পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় ও কঠিনতম একটি ভাষা। চীনের বিমানবন্দরে পদার্পণ করার পর পরই এ বিষয়টি আপনাকে আবার স্মরণ করিয়ে দিবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলোতে চীনাদের ইংরেজি ভাষায় পারদর্শিতার প্রমাণ পাওয়া গেলেও সাধারণ নাগরিকদের কম সংখ্যকই ইংরেজিতে দক্ষ। তাই প্রথমবারের মত চীনে আসার আগে চীনা ভাষার উপরে প্রাথমিক কিছু দক্ষতা অর্জন করে আসলে সেটা হবে আপনার জন্যে সবচেয়ে উপকারী। সম্ভব না হলে আপনার গন্তব্য-স্থল গুলোর নাম চীনা ভাষায় প্রিন্ট করে সাথে নিয়ে আসুন, তাহলে অন্তত গন্তব্য-স্থল গুলোতে যেতে আপনাকে ভাষাগত দুর্ভোগের শিকার হতে হবেনা।
২) খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা :
গন্তব্যে পৌঁছানোর পর দ্বিতীয় যে বিষয়টি অনেকের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা হলো খাবার। চীনা খাবারের পরিধি অনেক ব্যাপক ও অতি সুস্বাদু হওয়া স্বত্বেও অনেকেই প্রথমদিকে চীনা খাবারে ঠিক অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন না। তাই কেউ কেউ KFC, McDonald, Pizza Hut… এর মত ফাস্টফুড দিয়ে সাময়িক ভাবে চালিয়ে নেন।
মুসলিম ভ্রমণকারীদের ক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যা দেখা দেয় তা হলো হালাল খাবার সনাক্তকরণ। এজন্য সর্বোত্তম উপায় হলো হালাল চিহ্নিত রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া। চীনের প্রায় সব শহরেই হালাল রেস্টুরেন্ট রয়েছে এবং এই রেস্টুরেন্টগুলো সাধারণত চীনা মুসলিমদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে।
আপনি যদি চাকুরী বা পড়াশুনার কারণে দীর্ঘ সময় অবস্থানের উদ্দেশ্যে চীনে আসার প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন একই সাথে আপনি যদি চীনা খাবারে অভ্যস্ত না হন সেক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে কয়েক দিনের জন্য কিছু শুকনা খাবার সাথে নিয়ে আসা। নিজে রান্না করে খেতে চাইলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় দেশী মসলা সাথে আনতে ভুলবেন না।
৩) কেনাকাটা চলাফেরায় সাবধান থাকুন :
চীনারা যে খুবই বন্ধুসূলভ এতে কারোই দ্বিমত থাকার কথা নয়। চলাফেরা, কেনাকাটা ছাড়াও অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেই চীনাদের এই বন্ধুসূলভ আচরণের প্রমাণ মেলে। তারপরেও দামাদামি করে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করুন, কিছু অসাধু বিক্রেতা বিদেশী দেখে অনেক সময় ন্যায্য মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের চেষ্টা করতে পারে।
ট্যাক্সিতে চলাফেরার ক্ষেত্রে প্রথমত মিটার ঠিকমত চলছে কিনা তা খেয়াল রাখুন অন্যথায় প্রতারণার শিকার হতে পারেন। দ্বিতীয়ত, ভাড়া পরিশোধ করে ট্যাক্সি থেকে নামার সময় অবশ্যই রশিদ নিন, এতে ভুল করে ট্যাক্সিতে কিছু ফেলে গেলে সেটা খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
৪) চীনের অভ্যন্তরীণ বিতর্কিত বিষয়গুলো এড়িয়ে চলুন :
অভ্যন্তরীণ শান্তি রক্ষার কৌশল হিসেবে চীন সরকার সংবাদ মাধ্যম, ইন্টারনেট, বই ইত্যাদি বিষয়গুলো কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই চীনে এসে বিতর্কিত চীনা অভ্যন্তরীণ ইস্যুগুলো (যেমন- থিয়ান আন মেন, তিব্বত, তাইওয়ান ইস্যু) নিয়ে যেকোনো আলোচনা থেকে বিরত থাকাই হবে শ্রেয়।
৫) ইন্টারনেট সেন্সরশিপ :
চীনে এসে যদি দেখেন যে আপনার সাধের ফেসবুক একাউন্টটিতে লগইন করতে পারছেন না তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সরকারী পর্যায় থেকে Facebook, Twitter, Youtube, Blogger এর মত জনপ্রিয় সাইট সহ আরও অনেক ওয়েবসাইট ব্লক করে রাখা হয়েছে (তবে বিকল্প পন্থা বিদ্যমান)।
WhatsApp, Viber, Line, imo এর মত মোবাইল মেসেঞ্জার গুলো চীনে ভালভাবে কাজ করে না এবং চীনারাও এগুলো ব্যবহার করে না বললেই চলে। তাই বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার জন্য আগে থেকেই মোবাইলে WeChat এ্যাপ ইন্সটল করে একাউন্ট এ্যক্টিভেট করে রাখুন। চীনে আসার পর এই এ্যাপ আপনার জীবন অনেকটাই সহজ করে দিবে।
৬) আবহাওয়া :
বেইজিং সহ চীনের অনেক শহরের আবহাওয়া বেশ শুষ্ক তাই চীনে আসার সময় ভ্যাসলিন, ময়েশ্চরাইজার, লিপজেল, লোশন ইত্যাদি সঙ্গে রাখা মোটেও বোকামি হবে না।
৭) ঔষধ-পত্র :
প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য যেসব ঔষধ পত্র যেমন প্যারাসিটামল, খাবার স্যালাইন, ব্যান্ড এইড ইত্যাদি সাথে রাখুন।
৮) মুদ্রা/টাকা :
চীনে ডলার বা ইউরো খুব সহজেই বিনিময়যোগ্য, তা স্বত্বেও অহেতুক ঝামেলা এড়াতে সম্ভব হলে কিছু চীনা মুদ্রা সাথে রাখুন।
আপনার চীন ভ্রমণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে আশা করা যায় আপনি বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বিড়ম্বনা এড়াতে সক্ষম হবেন।