বিমান ভ্রমণ কখনো কখনো দীর্ঘ হতে পারে। এর মধ্যে যাত্রীরা একাধিকবার খাবার খান, একটু ঘুমিয়ে নেন। দীর্ঘ ভ্রমণের সময় কাপড় বদলানো আরামদায়ক মনে হতে পারে। অনেকেই স্বস্তির জন্য ভ্রমণের সময় আরামদায়ক পোশাক পরে নেন। পোশাক পরিবর্তনের এই ভ্রমণসংক্রান্ত দ্বিধা নিয়ে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছেন।
পোশাক পরিবর্তন করবেন কি না
পোশাক পরিবর্তনের প্রয়োজনকে ভদ্রতা ও যত্নের বিষয় হিসেবে দেখেন এটিকেট এক্সপার্ট নামের প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা জো হেইস। জো জানান, তিনি তাঁর সহযাত্রীদের কাছে অগোছালো চেহারা নিয়ে থাকতে চান না। ১০ ঘণ্টার বেশি দীর্ঘ ফ্লাইটে তিনি কী কী সঙ্গে নেন, তার একটি তালিকা জো জানিয়েছেন ওয়াশিংটন পোস্টকে। সে তালিকায় আছে দুই জোড়া অতিরিক্ত মোজা, এক জোড়া আন্ডারওয়্যার, এক জোড়া ট্রাউজার ও একটি টপ। তিনি বাথরুম বা লে-ওভারের সময় নিজের পোশাক পরিবর্তন করে নেন। তিনি একটি টয়লেট্রিজ কিটও ব্যবহার করেন, তাতে ব্রাশ, ময়শ্চারাইজার, ডিওডোরেন্ট এবং তাঁর নিয়মিত রুটিনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস থাকে। জো বলেন, ‘আমরা নিজেদের ও অন্যদের তাঁর প্রাপ্য সম্মান দিয়ে ভালো ব্যবহার করতে পারি।’
ভাঁজবিহীন কাপড়
ওয়াইল্ড ফ্রন্টিয়ার্সের ক্লেয়ার টোবিন দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইটে অতিরিক্ত পোশাক সঙ্গে নেওয়ার বিষয়ে একমত প্রকাশ করেন। তিনি একটি সম্পূর্ণ সেট সঙ্গে রাখেন। তিনি এমন পোশাক বেছে নেন, যাতে কাপড়ে কম ভাঁজ পড়ে। জোর মতো তিনিও টয়লেট্রিজ সঙ্গে রাখেন। তবে তিনি বিমানে নিজেকে ফ্রেশ করতে গিয়ে বাথরুমে বেশি সময় না কাটাতে সতর্ক করেন। কারণ, এটি অন্য যাত্রীদের জন্য বিরক্তিকর হয়ে থাকে।
ব্যক্তিগত পছন্দ
‘এলিভেট এটিকেট’-এর অ্যালিসন চেপারডাকের জন্য পোশাক পরিবর্তন করাটা ভদ্রতা বা এটিকেটের কোনো বিষয় নয়। তিনি যুক্তি দেন, এটি সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার।
দীর্ঘ ফ্লাইটে যা পরতে পারেন
দীর্ঘ ফ্লাইটে আরামদায়ক থাকতে হলে পোশাক নির্বাচনের সময় কয়েকটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে, যা আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে আমূল পরিবর্তন করতে পারে।
স্বস্তিকর পোশাক পরুন
দীর্ঘ ফ্লাইটের জন্য পোশাক বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বস্তিকর পোশাক অপরিহার্য। কটন, লিনেন, সিল্ক, ময়শ্চার-উইকিং (ঘাম শোষক) বা মডালের মতো উপাদানে তৈরি পোশাক বেছে নিন। এই ধরনের উপাদান বাতাস চলাচল বজায় রাখে ও আর্দ্রতা শোষণ করে।
ঢিলেঢালা বা সহজে প্রসারিত হয় এমন পোশাক বেছে নিন
দীর্ঘ ফ্লাইটে ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। এমন পোশাক আপনাকে নড়াচড়া করার এবং আরামদায়কভাবে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ দেবে। এ ক্ষেত্রে ইলাস্টিক কোমরবন্ধ বা ড্রস্ট্রিংযুক্ত লেগিংস বা প্যান্ট উপযুক্ত হতে পারে। টাইট বা আঁটসাঁট পোশাক পরে দীর্ঘ সময় বসে থাকা অস্বস্তির কারণ। এতে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
উষ্ণ, সহজে খোলা যায় এমন স্তর তৈরি করুন
দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইটে আরামদায়ক ভ্রমণের মূল চাবিকাঠি হলো স্তরযুক্ত পোশাক পরা। বিমানের তাপমাত্রা মুহূর্তের মধ্যে ঠান্ডা থেকে উষ্ণ হতে পারে। হালকা শার্ট বা টি-শার্টকে একটি বেস লেয়ার হিসেবে ব্যবহার করুন। তার ওপর একটি আরামদায়ক সোয়েটার, সোয়েট শার্ট বা কার্ডিগান যোগ করুন, যা গরম লাগলে সহজে খুলে ফেলা যায়। পোশাক স্তরে স্তরে পরলে ঠান্ডা ও গরমের সঙ্গে সহজে মানিয়ে নিতে পারবেন। পুরো ফ্লাইটে এমন পোশাক আপনাকে আরাম দেবে।
আরামদায়ক জুতা পরুন
আপনার পায়ের যত্ন নিতে ভুলবেন না! বিমানবন্দরজুড়ে হাঁটা, লাইনে দাঁড়ানো এবং লাগেজ বহন করা, এই সবকিছুর জন্য আরামদায়ক জুতা পরুন। দীর্ঘ ফ্লাইটে ভ্রমণের জন্য সেরা জুতা হলো স্নিকার্স বা স্লিপ-অন জুতা। এগুলোতে সাধারণত রাবার বা অন্যান্য আরামদায়ক উপাদানে তৈরি সোল থাকে। নিরাপত্তা তল্লাশির সময় অনেক যাত্রীকে জুতা খুলতে হয়। তাই সহজে খোলা যায় এমন জুতা বেছে নিন। দীর্ঘ ফ্লাইটে বাতাসের চাপের কারণে পা ও গোড়ালি ফুলে যেতে পারে। এ বিষয়টি জুতা নির্বাচনের সময় মনে রাখবেন।
গন্তব্যের আবহাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখুন
পোশাক স্তরযুক্ত করার কৌশলটি গন্তব্যের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করবে।
কিছু অনুষঙ্গ ব্যবহার করুন
বিমানে ব্যবহার করার জন্য সেরা অনুষঙ্গগুলোর মধ্যে একটি হলো শাল বা ট্রাভেল র্যাপ। এটি আপনাকে উষ্ণ রাখবে এবং প্রয়োজন হলে এগুলোকে বালিশ হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি ছোট আকারের ক্রস-বডি ব্যাগ ভ্রমণের জন্য অপরিহার্য। এটি আপনার হাত খালি রাখবে এবং নিরাপত্তা তল্লাশির সময় অনেক কিছু সহজ করে দেবে।
সূত্র: ডেইলি মেইল, বুকিং ডটকম