1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
দেশে গিয়ে কি করব এটা ভেবে প্রবাসে পড়ে আছে বহু মানুষ
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:০৫ অপরাহ্ন

দেশে গিয়ে কি করব এটা ভেবে প্রবাসে পড়ে আছে বহু মানুষ

  • আপডেট সময় সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
দেশে গিয়ে কি করব এটা ভেবে প্রবাসে পড়ে আছে বহু মানুষ। সিলেটি ইয়াংস্টারদের মধ্যে একটি লুকানো মিথ আছে যে ইউরোপ-আমেরিকায় না গেলে সুন্দরী-ভাল মেয়ে বিয়ে করা যায় না।
এজন্য সিলেটি অনেকে বাংলাদেশে ভাল চাকুরি, ব্যবসা, এমনকি প্রচুর সহায় সম্পদ ফেলে জীবনের রিস্ক নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমানোর সুযোগ খুঁজে।
কেউ কেই দীর্ঘ চেষ্টার পরে ইউরোপ-আমেরিকায় চলেও আসে। এরপর সবার শুরু হয় বিদেশে জীবন প্রতিষ্ঠার বাস্তব লড়াই।
সোনার চামুচ মুখে নিয়ে বড় হওয়া বাংলাদেশী কেউ কেউ ইউরোপ-আমেরিকায় এসে যখন উপলব্ধি করে যে বাংলাদেশ থেকে দেখা ইউরোপ-আমেরিকা এবং এখানে এসে দেখা ইউরোপ-আমেরিকার মধ্যে বিশাল ফারাক তখনই কারো কারো শুরু হয় ভীষণ যন্ত্রণা।
ইউরোপ-আমেরিকায় এসে বাংলাদেশী মানুষগুলো যখন নিজেকে এই দেশগুলোয় সেটেল্ডের চেষ্টা করে তখন বাধ্য হয়ে বিভিন্ন জনের কাছে সবারই ছুটাছুটি শুরু করতে হয়। এরপরই বিড়ম্বনা শুরু হয়।
বিদেশে আসার পরে নতুন মানুষগুলোর পরিশ্রমের পর পরিশ্রম শেষে মাস যায়, কারো কারো মাসের পর মাস গিয়ে বছরও যায় কিন্তু সুখপাখি তো অনেকের কাছেই অধরা থেকে যায়।
ইউরোপ-আমেরিকায় এসে সেটেল্ড হতে গিয়ে বাংলাদেশী একেকটি মানুষকে বছরের পর বছর বিভিন্ন প্যারালিগ্যাল এবং ল’য়ারের পিছনে দৌড়তে হয়। এই দৌড়ের শেষ দেখতে গিয়ে অনেকের শরীরের রক্ত পানি হয়ে যায়।
এই দৌড়াদৌড়ির মধ্যে একেকজন মানুষের জীবন থেকে আট-দশ-পনেরো, এমনকি বিশ বছর চলে যায়। এরপরও দেখা যায় কারো কারো জীবনে লিগেলিটির কিছুই হয়ে ওঠে না।
এরপর এই মানুষগুলো ধীরে ধীরে খুব ক্লান্ত হতে শুরু করে। ইউরোপ-আমেরিকায় আসার পরে অনেকেরই পারিবারিক দৈন্যদশা দূর হয়ে যায়। কিন্তু এই দেশগুলোয় লিগ্যাল হতে না পেরে অনেকের জীবনে নেমে আসে কষ্টের ছায়া। এরপর সবাই শুধু ভাবে আমি কবে লিগেল হব? আমি কবে দেশে যাব?
এই কষ্টকর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে থেকে যুবক বয়সে ইউরোপ-আমেরিকায় আসা একেকটি মানুষের জীবন থেকে জীবন যৌবন সবই হারিয়ে যায়। এভাবে যুবক বয়সে আসা কারো কারো কালো চুল-দাঁড়ি পেঁকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পর্যন্ত দুর্বল হতে শুরু করে। কিন্তু এরপরও অনেকের ভাগ্যে সুখ পাখি অধরাই থেকে যায়।
এরপর অনেকে চারপাশে তাকিয়ে দেখে যে জীবন থেকে বেশ সময় চলে গেছে। এই মুহুর্তে সবাই ভাবতে শুরু করে যে আমি দেশে কি ছিলাম? এখানে এসে আমি কি করলাম? আহ, আমি কবে লিগেল হব? আহ, আমি কবেই বা দেশে যাব? আহ, আমি কবেই বা আমার প্রিয়জনদের দেখা পাব?
এই পৃথিবীতে ঘড়ির কাঁটা কি কখনো থেমে থাকে? বিদেশে এসে লিগ্যালিটির পিছনে দৌড়তে দৌড়তে কারো কারো বয়স ত্রিশ-চল্লিশ, এমনকি পঞ্চাশের দিকে ছুটতে থাকে।
এরপর একগুঁয়েমির দুশ্চিন্তায় ভোগতে হয় অনেককে। এভাবে একটি সময় পর সবাই ভাবতে শুরু করে যে পরিবারের সবার সবই তো ঠিক আছে, যে যেখানে আছে সবই তো ঠিক আছে, ভালো আছে। শুধু আমি একা বিদেশে অনিশ্চিত জীবনের মধ্যে পড়ে আছি। কিন্তু কেন?
আমার অর্জিত টাকায় পড়ালেখা করে দেশে আপনজনরা ভাল চাকুরি-বাকুরি করছে, কেউ কেউ ব্যবসা-বানিজ্য করে দিব্যি সুন্দর সংসার করছে, কেউ কেউ বিয়েশাদী করে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে সুন্দর জীবন যাপন করছে। শুধু আমি কেন দেশবিচ্ছিন্ন?
আমি বিদেশে এসে দেশ, সমাজ এবং পারিবারিক জীবন থেকে দিনদিন বিচ্ছিন্ন হয়ে দূরে সরে যাচ্ছি কেন? এইসব মুহূর্তে প্রবাসে বসে কেউই আর ধৈর্য্যশীল থাকতে পারেন না। কারন দীর্ঘ প্রবাস জীবনের পর যখন সবার অভাব অনটন দূর হয়ে যায় তখন নিজের কাছে নিজের স্ট্যাটাসটাই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। এইসব মুহূর্তে সবাই শুধু দুশ্চিন্তায় সময় কাটান।
ইউরোপ-আমেরিকায় আসার পরে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে অনেকে দ্রুত সেটেল্ড হয়ে যান। কিন্তু যারা ওয়ান শটে দুচার বছরের মধ্যে লিগেল হতে না পারেন তাদেরকে অনেক সাফার করতে হয় এখানে। এমনকি ইলিগেল স্ট্যাটাসের গ্যাঁড়াকলে পড়ে কাউকে কাউকে সারা জীবন প্রবাসে ইলিগেল সময় কাটাতে হয়।
এইসব মুহূর্তে সবাই একাকি নির্জন স্থানে গিয়ে নিজেকে নিয়ে বারবার শুধু দুশ্চিন্তা করে এবং অশান্তিতে সময় পার করে। কারন দীর্ঘ সময় এসব দেশে ইলিগেল থাকতে থাকতে সবাই নিজেকে সমাজ, দেশ ও কমিউনিটির মানুষ থেকে দূরে সরাতে থাকে।
এই সময়টিতে সবাই বারবার শুধু ভাবে সে যাদেরকে দেশে ছোট রেখে এসেছে তারা বড় হয়ে দিব্যি চাকুরি-বাকুরি করছে, ব্যবসা-বানিজ্য করে সুন্দর জীবন এবং সংসার চালাচ্ছে। সুন্দর ভাবে সমাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ওদের তুলনায় আমি তো সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে এখন দিনদিন বৃদ্ধ বয়সের দিকে এগোচ্ছি।
এইসব মুহূর্তে সবাই ভাবে আমি আর দেশে গিয়ে কি করব? বরং আমি যেখানে আছি সেখানে তো ভাল আছি। এমনিই তো একদিন এই পৃথিবী ছেড়ে সবাইকে চলে যেতে হবে। তাহলে এই বৃদ্ধ বয়সে আমার আর দেশে ফিরেই বা লাভ কি?
এই শেষ বয়সে দেশে ফিরেই বা আমি কি করব? এর চেয়ে বরং আমি যে বিদেশে আছি- হ্যাঁ আমি তো বেশ আছি। আমি তো ভালই আছি। আমি একা আছি তো কি হয়েছে? আমি তো বিদেশে আছি। আমি তো বেশ আছি।
মন্ট্রিল, কানাডা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com