একটা সময় ছিল, যখন সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন। সেখান থেকে যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি, সেই গল্প অনেকেরই অজানা। ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে অমিতাভের মতো ভয়ানক দুঃসময় খুব কম মানুষই দেখেছে। সেই দিন পার করে এসেছেন বলিউডের শাহেনশাহ অমিতাভ।
আজ কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ের মানুষ অমিতাভ বচ্চন। তার এক একটি সিনেমা থেকে কোটি কোটি টাকা ব্যবসা হতো। অথচ তাকেই দেউলিয়া হয়ে অপমানজনক জীবন কাটাতে হয়েছিল। তাকে ঘিরে ধরেছিল মামলা, ঋণ আর অমানিশার অন্ধকার।
নব্বই দশকে বড় স্বপ্ন নিয়ে অমিতাভ শুরু করেছিলেন নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান অমিতাভ বচ্চন করপোরেশন লিমিটেড (এবিসিএল)। লক্ষ্য ছিল বলিউডকে নতুন রূপ দেওয়া। বড় বড় সিনেমা বানানো, অনুষ্ঠান আয়োজন করা। চেয়েছিলেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দুনিয়ায় নতুন কিছু করা। স্বপ্নটা বড় ছিল, তার হিসাব-নিকাশের ভুলটাও ছিল বড়! ফলাফল হলো ভয়াবহ। সিনেমা চলল না, ইভেন্টে ক্ষতি হলো, আর একের পর এক ঋণ পাহাড়ের মতো চাপতে শুরু করল অমিতাভের ঘাড়ে। এক সময় এলো সেই মুহূর্ত, যখন সব সম্পত্তি, এমনকি মাথা গোঁজার বাড়িটাও বন্ধক দিতে হয়েছিল তাকে।
অভিজ্ঞ নির্মাতা টিন্নু আনন্দ মনে করিয়ে দিলেন সেই সময়ের কথা। ১৯৯৮ সালে অমিতাভ অভিনীত ও তার প্রতিষ্ঠানের প্রযোজনায় তৈরি হচ্ছিল ‘মেজর সাহেব’। কিন্তু অর্থাভাবে নিয়মিত মজুরি দেওয়া যাচ্ছিল না। পুরো ইউনিট এক হোটেলে থাকত, আর প্রতি দু’দিন পরপরই শুটিং বন্ধ হয়ে যেত। কারণ কলাকুশলীরা বেতন চাইত, অথচ টাকা ছিল না। পরিস্থিতি এত খারাপ হয়েছিল যে, পরিচালক টিন্নু আনন্দ পর্যন্ত ইউনিটের কাছে অপমানিত হয়েছেন। অমিতাভ নিজে কিছুই করতে পারছিলেন না। এক সময় মনে হয়েছিল, হয়তো এখানেই শেষ হয়ে যাবে তার ক্যারিয়ার।
এক সাক্ষাৎকারে অমিতাভ নিজেও স্বীকার করেছেন সেইসব দিনের কথা। তিনি বলেছেন, ‘আমার নামে প্রায় ৯০ কোটি রুপি ঋণ ছিল। প্রতিদিন কড়াধারের মতো ঋণদাতারা এসে দাঁড়াত, ৫৫টা মামলা চলছিল একসঙ্গে। অপমানজনক, লজ্জাজনক দিন কেটেছে।’
কিন্তু অমিতাভ বচ্চন হাল ছাড়েননি। ধীরে ধীরে তিনি সেই অন্ধকার থেকে ফিরে আসেন। শুরু করেন নতুন দিন। সিনেমার পাশাপাশি ছোট পর্দায় ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ হয়ে ওঠে তার পুনর্জন্মের সবচেয়ে বড় সহায়ক।
আজ তিনি শুধু ভারতের নয়, বিশ্বের অন্যতম বড় তারকা।