ছোটবেলা থেকে এক বিশেষ মানসিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছিলেন ক্যামেরুন মোফিড। সমস্যার নাম অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি)। এ ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা একই চিন্তা বা আচরণে বারবার আটকে যান। এটি তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তোলে। এমনই এক বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছিলেন ইরানি-মিসরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ক্যামেরুন। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে মাত্র ২০ বছর বয়সে পৃথিবীর সব দেশ ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
তবে এমন সিদ্ধান্তের আগে এক শর মতো দেশ ঘোরা হয়ে গিয়েছিল ক্যামেরুনের। পড়াশোনা আর টেনিস খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকায় নানা দেশ সফর করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। বাকি দেশগুলো ঘুরে রেকর্ড গড়ার জন্য তৈরি করলেন পরিকল্পনা। ভ্রমণের খরচ জোগাতে শুরু করলেন একটি ইভেন্ট মার্কেটিং কোম্পানি। কীভাবে সবচেয়ে কম খরচে বেশি জায়গায় ঘোরা যায়, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা চালালেন।
২০২২ সালের শেষের দিকে হাতে একটা
ব্যাগ নিয়ে শুরু করলেন নিজের কাঙ্ক্ষিত যাত্রা। প্রতিটি দেশে অন্তত চার দিন অবস্থান করেছেন। তাঁর চেষ্টা ছিল স্থানীয়দের জীবন ঘনিষ্ঠভাবে অনুভব করার। কিছু কিছু জায়গায় একাকিত্ব কুরে কুরে খেয়েছে তাঁকে। আবার কোথাও মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। ভিনদেশি খাবার, সংস্কৃতি আর জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত হয়ে প্রতিদিন একটু একটু করে মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন ক্যামেরুন।
তবে পথটা সহজ ছিল না। আলজেরিয়ায় এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে ১৫ ঘণ্টা বিছানা থেকে উঠতে পারেননি। হতাশা গ্রাস করছিল।
কিন্তু চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার পর সেই দেশ ভ্রমণও তাঁর জন্য স্মরণীয় হয়ে ওঠে। এমনকি যেসব দেশ রাজনৈতিক অস্থিরতায় ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বিবেচিত, সেসব জায়গায় গিয়েও সাধারণ মানুষের আতিথেয়তায় অভিভূত হয়েছেন ক্যামেরুন। সেই ভ্রমণের সূত্রে এসেছিলেন বাংলাদেশেও।
অবশেষে, ২৫ বছর বয়সে উত্তর কোরিয়ার পিয়ং ইয়ংয়ে পৌঁছার পর তিনি অংশ নেন একটি আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে। এর মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ স্বীকৃত ১৯৫টি দেশ ঘোরা সম্পন্ন করেন ক্যামেরুন মোফিড।
বিশ্বভ্রমণ শেষে নতুন এক মানুষ হয়ে দেশে ফিরেছেন ক্যামেরুন। জীবনের নতুন এক উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছেন তিনি। ক্যামেরুন মোফিড এখন জানেন, জীবন যত অনিশ্চিত হোক, সেটাকে আলিঙ্গন করেই এগিয়ে যেতে হয়। আর সেই অজানা পথেই লুকিয়ে থাকে মুক্তির চাবিকাঠি।
সূত্র: সিএনএন