1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
বাংলাদেশিদের থাই ভিসা এখন ‘সোনার হরিণ’
সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৪:০২ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

বাংলাদেশিদের থাই ভিসা এখন ‘সোনার হরিণ’

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫

থাইল্যান্ডে ইলেকট্রনিক বা ই-ভিসা চালুর পর বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা দেয়ার হার নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্টিকার ভিসা পদ্ধতিতে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ ভিসা দিতো ঢাকার থাই দূতাবাস। কিন্তু ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ই-ভিসা চালুর পর এই সংখ্যা নেমে এসেছে দৈনিক মাত্র ৩৫০-এ। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১,৭০০ থেকে ১,৮০০ বাংলাদেশি নাগরিক থাই ভিসার জন্য আবেদন করছেন, কিন্তু ভিসা পাচ্ছেন মাত্র ৩৫০ জন—যা আবেদনকারীর মাত্র ১৯.৪%। ফলে, বাংলাদেশিদের জন্য থাই ভিসা এখন ‘সোনার হরিণ’ হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপুল সংখ্যক আবেদন দেখেই আঁচ করা যায় বাংলাদেশিদের কাছে থাইল্যান্ড সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠছিল। বিশেষ করে ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ করে দেওয়ার পর থাইল্যান্ড বিকল্প গন্তব্য হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ই-ভিসা চালুর আগ পর্যন্ত ভিসা পাওয়াও স্বাভাবিক ছিল।

ভিসা পেতে বাংলাদেশিদের ত্রিমুখী ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। প্রথমত, ভিসার জন্য আবেদন করার পর ফলাফল পেতে ৪৫ কর্মদিবস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, দুই মাস অপেক্ষার পরও বহু আবেদনকারী ভিসা পাচ্ছেন না। তৃতীয়ত, ই-ভিসার ক্ষেত্রে আগের তুলনায় বেশি ফি দিতে হচ্ছে। ফলে অনলাইন ভিসা সুবিধা চালুর পর বাংলাদেশিদের ভোগান্তি বেড়েছে, এতে বাংলাদেশিদের কাছে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠা একটি গন্তব্য হাতছাড়া হচ্ছে।

বাণিজ্যক রাজধানী চট্টগ্রামে থাইল্যান্ডের অনারারি কনসাল আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “চিকিৎসা, ভ্রমণ ও কেনাকাটায় থাইল্যান্ড অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক আবেদন জমা পড়লেও সে অনুযায়ী ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিপুল বাংলাদেশি পর্যটক চাইছেন থাইল্যান্ড ভিসার সংখ্যা বাড়িয়ে দিক। আমি নিজেও ভিসা সংখ্যা বাড়ানোর জন্য লিখিত ও মৌখিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছি। দেখা যাক, কোনো সুখবর আসে কি না।”

এখনও থাই কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ভিসা কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে অতীতে তারা ‘কারিগরি ও অপারেশনাল সীমাবদ্ধতা’র কথা বললেও সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এটি ভিসা সীমিত করার কৌশল মাত্র।

“দৈনিক যত আবেদনই জমা পড়ুক, সাড়ে তিনশ’র বেশি আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে অতিরিক্ত আবেদনগুলো পরদিনের জন্য অপেক্ষমাণ থাকে। এটা ভিসা সংখ্যা সীমিত রাখার কৌশল ছাড়া আর কি হতে পারে,” থাই ভিসার সাথে সংশ্লিষ্ট ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর ভাষ্য।

সাফারী পার্কে ডলফিন শো। ছবি : আকাশযাত্রা
সাফারী পার্কে ডলফিন শো। ছবি : আকাশযাত্রা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

থাই দুতাবাসের সাথে কাজ করেন এমন কর্মকর্তা আকাশযাত্রাকে জানান, “সাম্প্রতিক সময়ে থাইল্যান্ড হয়ে অনেক বাংলাদেশি ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া হয়ে তৃতীয় দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বা মানবপাচারের শিকার হয়েছেন। এ প্রবণতা ঠেকাতে থাইল্যান্ড বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ইস্যু কমিয়ে দিয়েছে। যতক্ষণ না এই প্রবণতা কমবে, ভিসা সংখ্যা বাড়ার সুযোগ নেই।”

ঢাকা এয়ারলাইনস ক্লাবের সদস্য সোহেল মজিদ বিষয়টি ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে আকাশযাত্রাকে বলেন, “থাই ভিসা দেয়া একেবারেই কমেছে এটা বলা যাবে না। ভিসা দিচ্ছে কিন্তু ই ভিসা চালুর পর যে আশা করা হয়েছিল সেই পরিমান কাঙ্খিত ভিসা বাংলাদেশিরা পাচ্ছে না। আমরা গত জুনমাসে ব্যাংকক গিয়েছি অলমোস্ট ফুল ফ্লাইট।”

চিকিৎসা, ভ্রমণ ও কেনাকাটার উদ্দেশ্যে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি থাইল্যান্ডে যান। ঢাকা থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টার ফ্লাইট, তুলনামূলক কম বিমান ভাড়া এবং দেশটির পর্যটনবান্ধব পরিবেশ বাংলাদেশিদের আকৃষ্ট করেছিল। কিন্তু ই ভিসা পদ্ধতি চালুর পর সেই আগ্রহে ব্যাপক ভাটা পড়েছে।

পাতায়ার বিখ্যাত আলকাজার শো। ছবি : আকাশযাত্রা
পাতায়ার বিখ্যাত আলকাজার শো। ছবি : আকাশযাত্রা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

থাই কর্তৃপক্ষ দিনে কত ভিসা দিচ্ছে তার হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে না। কিন্তু ট্রাভেল এজেন্সি, থাই দুতাবাস, ব্যাংক অব সিলন এবং এয়ারলাইনসগুলোর সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগে স্টিকার ভিসা পদ্ধতিতে আবেদনকারীরা ভিএফএস বা সাইমনের মাধ্যমে আবেদন করতেন এবং এক মাসের মধ্যে ফলাফল পেতেন। ২০২৪ সালের আগস্টের আগে প্রতিদিন গড়ে ৬০০–৮০০ ভিসা ইস্যু হতো। ১৭০০-১৮০০ আবেদনের বিপরীতে ইস্যু হচ্ছে ৩৫০টির মতো। ই-ভিসার নামে সহজতার প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে আবেদনগুলো যাচাই-বাছাইয়ে ধীরগতি, ফরম পূরণে ভুল এবং ডকুমেন্ট ঘাটতির কারণে অনেক ভিসা বাতিল হচ্ছে।

ট্র্যাভেল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস-এর কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইমাদে রাব্বানি বলেন, “ই-ভিসা চালুর পর অনেকেই নিজে নিজে আবেদন করতে গিয়ে ভুল-ভ্রান্তি থেকে যাচ্ছে। ফলে প্রত্যাখ্যানের হার বেড়েছে। আগে অভিজ্ঞ ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে আবেদন করা হতো—যেখানে ফরম পূরণ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই ও ঘাটতি নিরসন করে আবেদন জমা দেওয়া হতো। জমা নেওয়ার আগে ভিএফএস বা সাইমনও ভালো করে দেখে নিতো, ভুল-ত্রুটি সংশোধন করিয়ে নিতো।ফলে তখন ভিসা প্রাপ্তির হার ছিল অনেক বেশি।”

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে বাংলাদেশিদের জন্য মোট ৬৩,৩৫০টি থাই ভিসা ইস্যু হয়েছে (দৈনিক ৩৫০ টি হিসেবে)। এই হার অব্যাহত থাকলে বছর শেষে সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজারে, যেখানে ২০২৪ সালে মোট ২ লাখ ৯২ হাজার ভিসা ইস্যু হয়েছিল। অর্থাৎ ভিসা সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসছে। আর ২০২৪ সালে স্টিকার ভিসার জন্য ভিসা ফি ও প্রসেসিং ফিসহ মোট খরচ ছিল ৪,৭৬০ টাকা। বর্তমানে অনলাইন ই-ভিসার জন্য নেওয়া হচ্ছে ৫,১৫০ টাকা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com