1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
ব্লু ট্রেনের টানে যেখানে আসেন শত শত পর্যটক
শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ০৫:৩০ অপরাহ্ন

ব্লু ট্রেনের টানে যেখানে আসেন শত শত পর্যটক

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

পৃথিবীতে সবচেয়ে বিখ্যাত ও আনন্দদায়ক ট্রেনের নাম ‘ব্লু ট্রেন’ বা প্রাইড অব আফ্রিকা ট্রেন।
এ ট্রেনটি বর্তমানে শুধুমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে। বিলাস বহুল এ ট্রেনে ভ্রমন করতে ইউরোপ, আমেরিকা ও ইংল্যান্ড সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শত শত পর্যটক দক্ষিণ আফ্রিকায় আসেন।

এ ট্রেনটি পর্যটকদের ৯ দিন সময় নিয়ে ভ্রমণ করে প্রিটোরিয়া থেকে কেপটাউন হয়ে নামিবিয়া পর্যন্ত আবার ফিরে আসে প্রিটোরিয়ায়। ট্রেনটি পাড়ি দেয় প্রায় ৪০০০ কিলোমিটার পথ। বিলাসিতার চেয়ে এ ট্রেনের সবচেয়ে আনন্দঘন সময়টি হলো যখন এটি আফ্রিকার এতোশা ন্যাশনাল পার্কের ভেতর দিয়ে ভ্রমণ করে।

নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থিত প্রায় ২২,২৭০ বর্গ কিলোমিটার এ বিশাল পার্ককে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অঞ্চলগুলোর এটি একটি। সিংহ, হাতি, জিরাফ, জেব্রা, মহিষ, হায়েনা, শিয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির সুন্দর সব হরিণ, অস্ট্রিচ, সাদা গন্ডারসহ প্রায় ১০০ প্রজাতির পাখি দেখতে দেখতে সময় কখন পেরিয়ে যায় তা টেরও পায় না ভ্রমণকারীদের।

প্রকৃতি ও প্রাণিজগতের সঙ্গে নিবিড় বন্ধন তৈরির যাত্রাকে উপভোগ করার জন্য ট্রেনের ভেতরে আরও সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। এর প্রথম শ্রেণীর স্যুটগুলো ১৭২ বর্গফুট যা বগির অর্ধেক স্থান জুড়ে রয়েছে। এতে রয়েছে একটি মাস্টার বেড, ড্রয়িংরুম এবং একটি ভিক্টোরিয়া ক্লাসের বাথরুম। জানালাগুলো অনেক বড় ও নিরাপদ করে বানানো হয়েছে যা অন্যান্য ট্রেনে পাওয়া যায় না।

সাফারি পার্কের পুরো দৃশ্য শোবার ঘর হতেই উপভোগ করা যায়। ব্লু ট্রেইন বা প্রাইড অব আফ্রিকার সবচেয়ে বড় গর্ব হচ্ছে এর খাবার তালিকা ও মান। খাবারের মান এবং সঙ্গে অসাধারণ মেনু হতবাক করে দেয় ভ্রমণকারীদের।

দেশ-বিদেশের সেরা মাস্টার শেফদের রাখা হয়েছে এ ট্রেনের রন্ধন সেবায়। ট্রেনের শেষ প্রান্তে রয়েছে দুটি অবজারভেশন বগি। ট্রেন সাফারি পার্কে প্রবেশ করলে এখানে বসে সরাসরি বন্যজীবন উপভোগ করা যায়, যা একটি অবর্ণনীয় অভিজ্ঞতা।

১৯২৩ সালে এই ব্লু ট্রেনটির যাত্রা শুরু। বিলাসবহুল এ ট্রেনটি দাস প্রথার বর্বরতার ইতিহাস নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কেপটাউন থেকে নামিবিয়া হয়ে প্রিটোরিয়া পর্যন্ত। আগে ট্রেনটি জোহান্সবার্গ থেকে ইংল্যান্ডে যাওয়া যাত্রীদের জাহাজঘাট পর্যন্ত বহন করত। এ ট্রেনের যাত্রীরা ছিল আফ্রিকার নিগ্রোদের উপর ছড়ি ঘোরানো ইংরেজরা। কালোদের দাস বানিয়ে তাদের সম্পদ নিয়ে শ্বেতাঙ্গদের বেহিসাবি খরচের নমুনা এ ব্লু ট্রেন।

ট্রেনটির ভেতরের নকশা, কারুকাজ আজও মনে করিয়ে দেয় দেশটির কালো মানুষদের উপর অত্যাচারী ইংরেজদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের কথা।

আজ সেই শ্বেতাঙ্গদের দৌরাত্ম্য নেই, নেই দাস প্রথাও। নেলসন মেন্ডেলার অদম্য বিদ্রোহ ও শ্বেতাঙ্গদের বিলাসিতার চিহ্ন নিয়ে যান্ত্রিক শব্দে তা জানান দেয় এ ট্রেনটি। পার্থক্য এখানেই যে ব্লু ট্রেন এখন সাদা কালো সবার জন্যেই উন্মুক্ত। বিলাসিতায় একটুও ভাটা পড়েনি। বরং যুক্ত হয়েছে আরও প্রযুক্তি ও আধুনিকতা। প্রায় ৪০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়া ট্রেন।

মূলত আপ-ডাউন ভিত্তিতে দুইটি ব্লু ট্রেন চলে। একটিতে ৩৭টি রুমে ৭৪ জন যাত্রী অন্যটিতে ২৯টি রুমে ৫৪জন যাত্রী নেয়। ট্রেনে ইংরেজদের ব্যবহৃত বিছানা ও আসবাবপত্রগুলোই রয়ে গেছে। এর আরামদায়ক খাটগুলো তখনকার সাউথ আফ্রিকার একটা সম্মানের বিষয় ছিল। যা এখনও অনেক ইংরেজের বাসভবনে এই খাটগুলো শোভাবর্ধন করছে। এত পুরোনো আসবাবপত্র রেখে দেয়ার কারণ একটাই শ্বেতাঙ্গদের সেই বিলাসিতা এবং অত্যাচারের কথা পৃথিবীকে বারবার মনে করিয়ে দেয়া।

ট্রেনটির ডাইনিংরুমে একসঙ্গে ৪২জন লোক বসে খেতে পারবে। আরামদায়ক কক্ষগুলোতেও একই রকম ব্যবস্থা তবে এখানে আলাদা ক্লাব বগি, লাউঞ্জ বগি এবং একটি কনফারেন্স বগি রয়েছে। ক্লাব বগিতে রয়েছে ধূমপান, পানীয় গ্রহণের জন্যে বার সুবিধা।

লাউঞ্জ বগিতে রয়েছে খুব উন্নতমানের একটি পাঠাগার যেখানে বসে বইপড়ুয়া ভ্রমণকারীরা হয়ত ভুলেই যাবেন তিনি ভ্রমণে এসেছেন। কনফারেন্স বগিতে অনায়াসে পারিবারিক গালগল্প, জরুরি আলাপের সুবিধা এমন কি জাকজমক পার্টিও চালানো যাবে।

এবার ব্লু ট্রেনে চড়ার খরচটা জানা যাক- এ ট্রেনে ভ্রমণকারীর খরচ পড়বে প্রায় ১৮ হাজার থেকে ২৫ হাজার রেন্ড যা বাংলা টাকায়  ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com