কয়েক বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) শ্রমবাজার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য কার্যত বন্ধ রয়েছে। যদিও এই বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হয়েছে, তবুও এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, শ্রমবাজারটি কেন বন্ধ রয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন গুঞ্জন থাকলেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ইউএই-তে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান বিষয়ে বেশ কয়েকবার উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে, তবুও ইতিবাচক ফলাফল আসেনি। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বড় এই শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রবেশ এখনো অনিশ্চিত।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার পর ইউএই ছিল বাংলাদেশি শ্রমিকদের দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য। বর্তমানে শ্রমবাজার বন্ধ থাকায় হাজারো শ্রমিক অপেক্ষায় রয়েছেন। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকেও বারবার উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
সরকার বলছে, বিষয়টি নিয়ে ইউএই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তবে শ্রমবাজার কবে নাগাদ খুলবে, সে বিষয়ে কেউ সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে শ্রমবাজার বন্ধ থাকায় প্রবাসী আয়েও প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের হস্তক্ষেপে ইউএই সরকার বাংলাদেশীদের স্বল্প পরিসরে ভিজিট ভিসা দিতে রাজি হয়েছে বলে সম্প্রতি জানা গেছে।
যদিও এর আগে দেশটিতে অবস্থান করা হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক ভিসা ট্রান্সফার জটিলতার মধ্যে পড়ে অবৈধ হয়েছেন। এই তালিকায় আরো অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব অবৈধ হওয়া এবং অবৈধ হতে যাওয়া প্রবাসী শ্রমিকরা সম্প্রতি আমিরাতে বাংলাদেশ দূতাবাসে নতুন রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিয়োগ পাওয়া তারেক আহমেদের কাছে কর্মিভিসা ট্রান্সফার জটিলতা থেকে উত্তরণে পথ খুঁজে বের করতে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানান।
শেখ মাহবুব আহসান নামে একজন বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতের উদ্দেশ্য বলেন, ‘আরব আমিরাতের ভিসা কি আর খুলবে না?’
অপর এক প্রবাসী বাংলাদেশী বলেন, আমরা আমিরাত প্রবাসীরা অনেক বেশি সমস্যার মধ্যে আছি। ভিসা ট্রান্সফার নিয়ে এই পর্যন্ত কয়েক হাজার প্রবাসী অবৈধ হয়ে গেছে এবং অসংখ্য প্রবাসী অবৈধ হওয়ার অবস্থায় আছে। শুধু ভিসা ট্রান্সফার না করতে পেরে। দয়া করে আমাদের ভিসা ট্রান্সফার খোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
প্রবাসী কল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গণ-আন্দোলনে দেশ ছেড়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্সপো ২০২০ ঘিরে আয়োজিত ভোটাভুটিতে ইউএইর পরিবর্তে তখন রাশিয়াকে ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরপরই ইউএই সরকার ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয়, যা এখনো অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, দেশটিতে বৈধ অবৈধ মিলিয়ে বর্তমানে ১৫ লাখের মতো বাংলাদেশী অবস্থান করছেন।