মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ০৪:৪৬ অপরাহ্ন

কৃষ্ণচূড়া: দুপুর রোদে ঝরছে যেন আগুনরঙা জ্যোৎস্না

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০২৫

ঢাকার ব্যস্ত রাজপথের মাঝে হঠাৎই চোখে পড়ে আগুনরঙা কোনো জ্যোৎস্না। সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে যেতে যেতে বা জিয়া উদ্যানের ফটকে দাঁড়িয়ে থাকা কেউ যদি হঠাৎ থেমে যায়, দোষ দেওয়ার কিছু নেই। কারণ চারপাশে তখন শুধু কৃষ্ণচূড়া। ফুল নয়, যেন আগুন ফুঁড়ে ওঠা এক একখণ্ড আবেগ।

এই সময়টা যেন ঢাকাকে একটু রঙিন করে তোলে। গাড়ির হর্ন, ধুলাবালি, ক্লান্ত দুপুর-সব কিছু মুছে দেয় একচিলতে কৃষ্ণচূড়া। কৃষ্ণচূড়ার ছায়াঘেরা পথে দাঁড়িয়ে এক তরুণ বলছিলেন, ‘আমি প্রেমে পড়েছি কি না জানি না, কিন্তু এই ফুলটা দেখলে বুকের ভেতর কেমন যেন ধ্বনি বাজে।’

জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে বসন্তের শেষ ভাগে ও গ্রীষ্মের মধ্যভাগে যে দৃশ্য তৈরি হয়, তা যেন রংতুলির আঁচড়ে আঁকা এক চিত্রশিল্প। নকশা করা ল্যান্ডস্কেপ, সবুজ ঘাস, সাদা-স্বচ্ছ পানির লেক আর তার মাঝে গাঢ় লাল ফুল। পাশ দিয়ে হাঁটছেন অনেকে, কেউ থেমে ছবি তুলছেন, কেউ বা সেলফির আবেশে বিভোর।

কৃষ্ণচূড়া: দুপুর রোদে ঝড়ছে যেন আগুনরঙা জ্যোৎস্না

ছবি: সাদিক খান

সেখানে এক দম্পতি এসেছেন সন্তানের হাত ধরে। তারা জানালেন, ‘তারা আগেও এখানে এসেছেন, তবে মনে হচ্ছে এবার বেশি ফুল উঠেছে। আর দর্শনার্থীদের পরিমাণও এবার অনেক বেশি’।

জিয়া উদ্যানের ভেতরেও দেখা মেলে বিস্তৃত কৃষ্ণচূড়ার সারি। কৃত্রিম লেকের পাশে ছায়া ফেলে রেখেছে ফুলেরা। হাঁটার পথ ধরে প্রেমিক যুগল, একা ভ্রমণকারী কিংবা পরিবারের সদস্যরা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। মনে হয়, যেন একটা মৌন কবিতা চারদিকে লেখা হচ্ছে।

কৃষ্ণচূড়া শুধু বসন্তের রং নয়, আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনাও বয়ে আনে। কবি শামসুর রহমান এই কৃষ্ণচূড়াকে তুলনা করেছিলেন শহীদদের রক্তের সঙ্গে। বলেছিলেন, ‘কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনার রং’। ঠিক তাই। বাংলা সাহিত্যে, গান-গল্পে কৃষ্ণচূড়া এসেছে প্রেমের প্রতীক হয়ে, প্রত্যাশার প্রতিধ্বনি হয়ে।

শহরের রূঢ় বাস্তবতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া যেন এক কবিতা। সেই কবিতা পড়ে ফেলেন পথচারীরা—চোখের তারায়, ক্যামেরার ফ্রেমে, কিংবা মনে মনে প্রিয় কাউকে মনে করে।

এমন রঙিন দিনে শুধু ফুল নয়, সংসদ ভবনের সামনের পথ আর জিয়া উদ্যানের আশপাশে খাবারের মেলাও বসে যেন। হকাররা বিক্রি করছেন শসা, আমড়া, কাঁচা আম মাখা। কেউ ঠোঙ্গা খুলে দিচ্ছেন ঝাল-মুড়ি। আবার কারো ভ্যানে থরে থরে সাজানো ফুচকা, চটপটি, ভেলপুরিসহ অন্যান্য মুখরোচক খাবার। কেউ ঠান্ডা আইসক্রিমে ঠোঁট ভিজিয়ে বলছে, ‘এইটা ঢাকা! ফুলও আছে, ফুডও আছে!’

এই গাছের নিচে শুধু প্রেম নয়, ইতিহাসের নানা মোড়েও আছে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া। কোনো একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তে বসে কেউ হয়তো স্বাধীনতা চাইছিল, কবিতা লিখছিল, প্রতিবাদ করছিল। কৃষ্ণচূড়া তার সাক্ষী ছিল।

কৃষ্ণচূড়া: দুপুর রোদে ঝড়ছে যেন আগুনরঙা জ্যোৎস্না

ছবি: সাদিক খান

আজও সেই ফুল ফুটে, তার নিচে দাঁড়িয়ে কেউ হয়তো ফোনে বলছে, ‘তুমি আসো, একদিন কৃষ্ণচূড়ার নিচে বসে তোমাকে মুগ্ধ হয়ে দেখতে চাই।’

ঢাকা শহরের এই কৃষ্ণচূড়া যেন এক আত্মজ স্মৃতি। বসন্তের আগুনরঙা ঢেউয়ে ভাসা এক শহরের চেনা প্রেম।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com