স্বচ্ছ নীল জলের বুকে চলেছে নৌকা। জেলেরা ব্যস্ত মাছ শিকারে, আর চারপাশে পানকৌড়ি ও গাঙচিলের ওড়াউড়ি। এ যেন প্রকৃতির এক মনোরম চিত্রপট। এ দৃশ্য রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের। হ্রদের জলে জেগে থাকা দ্বীপগুলিতে বসেই এখন পর্যটকেরা উপভোগ করছেন এই নয়নাভিরাম দৃশ্য।
‘দ্বীপ’ বলা হলেও এগুলো আসলে ডুবে থাকা ছোট ছোট পাহাড় ও টিলা, যা কাপ্তাই হ্রদের জলমগ্ন এলাকাগুলোর ভেতর থেকে জেগে উঠেছে। এ ধরনের শতাধিক দ্বীপ রয়েছে হ্রদের বুকে। এসব দ্বীপে এখন গড়ে উঠেছে নানা রকম রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট। বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০টি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে, যা রাঙামাটি ভ্রমণে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ২০০২ সালে রাঙামাটি শহরের কাছেই কাপ্তাই হ্রদের বুকে ‘পেদা টিং টিং’ নামের একটি রেস্টুরেন্ট চালু হয়। এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। পরে, ২০০৫ সালে রাঙামাটি-লংগদু-বরকল ও জুরাছড়ি নৌপথ ঘেঁষে কাউন্দ্যামুখ এলাকায় ‘চাং পাং’ নামের আরেকটি রেস্টুরেন্ট গড়ে ওঠে। এরপর থেকেই দ্বীপকেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবসার প্রসার ঘটে। গত সাত-আট বছরে এই দ্বীপভিত্তিক রিসোর্ট-রেস্টুরেন্ট আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
কাপ্তাই হ্রদ এখন রাঙামাটিতে আগত পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। দিনভর হ্রদে ঘোরাঘুরির পর অনেকেই জেগে থাকা দ্বীপের রিসোর্টে রাত কাটাতে চান। এ ছাড়া হ্রদের ওপর চলাচল করে এমন হাউসবোটেও রয়েছে থাকার ব্যবস্থা। দ্বীপের রিসোর্টগুলোতে তারকা মানের হোটেলের মতো আরামদায়ক কক্ষ এবং পাহাড়ি খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে—যেমন বেম্বো চিকেন, বাঁশকোড়ল, কেবাং এবং কাপ্তাই হ্রদের টাটকা মাছ। বিনোদনের নানা সুযোগও রয়েছে, যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে।
‘নীলাঞ্জনা হাউসবোট ও রিসোর্ট’-এর মালিক দীপাঞ্জন দেওয়ান বলেন, “যানজটের শহর ছেড়ে একটু প্রশান্তির খোঁজে পাহাড়ে বেড়াতে আসেন অনেক মানুষ। তারা নিরিবিলি ও প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকতে চান, আর তাই দ্বীপের রিসোর্টগুলো এখন তাঁদের প্রথম পছন্দ।”
‘চাং পাং রেস্টুরেন্ট’-এর মালিক পল্টু চাকমা জানান, “ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশ থেকে যেসব পর্যটক আসেন, তাঁদের বেশিরভাগই কাপ্তাই হ্রদ ঘিরেই ঘোরাঘুরি করেন। এই কারণে হ্রদের দ্বীপে রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলা হয়েছিল। এখন পর্যটকদের রাতযাপন উপযোগী রিসোর্টও গড়ে উঠেছে।”
‘বার্গী লেক ভ্যালি রিসোর্ট’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমেধ চাকমা বলেন, “গত কয়েক বছরে রাঙামাটিতে পর্যটনের যত উন্নয়ন হয়েছে, তা প্রায় সবই কাপ্তাই হ্রদকে কেন্দ্র করে। এখন হ্রদের প্রতিটি দ্বীপ ও তীরবর্তী এলাকায় রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট ও কটেজ নির্মাণ করা হচ্ছে।” তবে তিনি জানান, পর্যটনে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এখনো পর্যাপ্ত নয়। তাঁর মতে, পর্যটন খাতে কর্মরত কয়েক হাজার মানুষকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে এই খাতের আরও উন্নয়ন সম্ভব।