বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি) এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যৌথভাবে সিলেট বিভাগের মনোরম খাসিয়া পুঞ্জি, জাফলং-এ কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন (সিবিটি) উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে।
আইএলও’র কানাডা সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত ‘প্রোগ্রেস’ প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আদিবাসী সংস্কৃতি এবং পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড জানায়, সিলেট বিভাগের সৌন্দর্যে ঘেরা জাফলং তার অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্যপট, জীববৈচিত্র্য এবং খাসিয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। নতুন করে চালু হওয়া সিবিটি মডেল একটি পরিবেশবান্ধব এবং জনগণ-নির্ভর পর্যটন ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্যোক্তা বিকাশ এবং সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের মাধ্যমে বিশেষ করে নারী ও তরুণদের জন্য আয়বর্ধক সুযোগ সৃষ্টি হবে।
উদ্বোধনের অংশ হিসেবে অতিথিরা চারটি নির্ধারিত খাসিয়া গ্রাম পরিদর্শন করেন, যেখানে পর্যটকদের জন্য হোমস্টে সুবিধা রাখা হয়েছে— প্রত্যেকটি হোমস্টে সর্বোচ্চ চারজন অতিথিকে গ্রহণ করতে পারে। অতিথিরা স্থানীয় আতিথেয়তা, ঐতিহ্যবাহী খাসিয়া খাবার, এবং খাসিয়া ও চা বাগান সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করেন। তারা কমিউনিটি রেস্টুরেন্টে খাবার গ্রহণ এবং সাইক্লিংসহ বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার কার্যক্রমেও অংশ নেন।
ড. কে এম কবিরুল ইসলাম বলেন,“কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন বাংলাদেশে একটি নতুন ধারণা। তাই আমাদের পর্যটক এবং স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্ক থাকতে হবে। আমি আশা করি পর্যটকরা ডেস্টিনেশন ম্যানেজমেন্ট কমিটি কর্তৃক প্রণীত আচরণবিধি মেনে চলবেন।”
এ সময় আইএলও কান্ট্রি ডিরেক্টর তুয়োমো পউতিয়াইনেন বলেন, “এটি কেবল একটি গন্তব্য নয়—এটি একটি কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন অভিজ্ঞতা। জাফলংয়ে আমরা কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটনের সূচনা করেছি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্থানীয় ব্যবসা উন্নয়ন এবং নারী ও তরুণদের ক্ষমতায়নের জন্য। একই সঙ্গে, এটি পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম এবং কমিউনিটির যত্নের মাধ্যমে প্রকৃতি সংরক্ষণে অবদান রাখবে।”
এই উদ্যোগ পরিচালনা করছে স্থানীয় ডেস্টিনেশন ম্যানেজমেন্ট কমিটি (ডিএমসি), যেখানে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি গ্রামের প্রতিনিধি রয়েছেন। এই কমিটি পর্যটন কর্মকাণ্ডের প্রামাণিকতা, নিরাপত্তা এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
পর্যটকরা এখানে উপভোগ করতে পারেন, পিয়াইন নদীতে নৌকা ভ্রমণ ও মাছ ধরা, চা বাগান, আঁকাবাঁকা পথে সাইক্লিং, মকাম পুঞ্জিতে বন, ঝরনা ও সুপারির বাগান পেরিয়ে ট্রেকিং। এছাড়া স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত খাসিয়া খাবার যেমন : জা দোহ, দোহ ক্লেহ, খাসিয়া চা। সন্ধ্যায় খাসিয়া বয়োজ্যেষ্ঠদের মুখে শোনা যাবে গল্প ও কল্পকাহিনি ও প্রথা সম্পর্কে।