সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন

৫২৯ দিনের দুঃসাহসিক অভিযানে ধরা পড়ল ‘ভ্যালেরি’

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

অস্ট্রেলিয়ার একটি দ্বীপে ৫২৯ দিন নিখোঁজ থাকার পর বাড়ি ফিরল সসেজ কুকুর ভ্যালেরি। ফাইল ছবি : ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
অস্ট্রেলিয়ায় দ্বীপে ৫২৯ দিনের দীর্ঘ দুঃসাহসিক অভিযানের পর অবশেষে ভ্যালেরি নামের একটি ছোট আকারের সসেজ কুকুর উদ্ধার হয়েছে। সে অস্ট্রেলিয়ার একটি দ্বীপে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, যেখানে ক্যাঙারু, পোসাম, কোয়ালা ও পেঙ্গুইনের আনাগোনা রয়েছে।

সিডনি থেকে এএফপি জানিয়েছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙারু আইল্যান্ডে ছোট্ট এই ডাকশুন্ড জাতের কুকুরটি অনুসন্ধানকারীদের ফাঁকি দিয়ে চলেছিল। মাঝেমধ্যে রাতের ক্যামেরায় তার গোলাপি রঙের ঝাপসা ছবি ধরা পড়ত।

এবার শুক্রবার রাতের দিকে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা ক্যাঙ্গালা ওয়াইল্ডলাইফ রেসকিউ জানায়, ‘ভ্যালেরিকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে এবং সে সুস্থ আছে।’

সংস্থাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরো জানায়, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও গভীর স্বস্তি বোধ করছি, ভ্যালেরি শেষ পর্যন্ত নিরাপদ আছে এবং তার ভালোবাসার পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারছে।’

ভ্যালেরি তার মালিক জর্জিয়া গার্ডনার ও তার সঙ্গী জশ ফিশলকের সঙ্গে ক্যাম্পিং সফরের সময় খাঁচা থেকে পালিয়ে ঝোপঝাড়ে ঢুকে পড়ে। চেষ্টা সত্ত্বেও কয়েক দিনের মধ্যে তাকে খুঁজে না পেয়ে তার মালিকরা আশা ছেড়ে দেন।

দ্বীপটির আয়তন প্রায় চার হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার, যেখানে রয়েছে খামার, প্রকৃতি সংরক্ষণ এলাকা ও খাড়া পাহাড়ি উপকূল। তারপর এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তার কোনো সন্ধান মেলেনি। অনেকে ভেবেছিলেন, হয়তো সে আর বেঁচে নেই।
কিন্তু পরে ভিডিও নজরদারি ও স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে দেখতে পায়।

তখন স্বেচ্ছাসেবকরা ধৈর্যের সঙ্গে তাকে ধরার অভিযান শুরু করেন। তবে সে মানুষ ও গাড়ি দেখলে পালিয়ে যেত। গত মাসে বন্য প্রাণী উদ্ধারকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘ভ্যালেরিকে ফাঁদে ফেলা অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।’
ভ্যালেরিকে ধরতে স্বেচ্ছাসেবকরা এক হাজার ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় করেন, পাঁচ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দেন এবং ক্যামেরা, ফাঁদ ও খাবার (প্রলোভন হিসেবে) ব্যবহার করেন। নিয়মিত অনলাইন আপডেটে জানানো হতো, তারা ধীরে ধীরে তার কাছে পৌঁছতে পারছেন।

সাদাকালো ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ভ্যালেরি প্রায়ই একটি ফাঁদ এলাকায় আসে। সেখানে একটি কুকুরের খাঁচা, কম্বল ও খেলনা রাখা ছিল। যদিও ওই জায়গাটি পোসামদেরও আকৃষ্ট করেছিল।

অবশেষে মালিক জর্জিয়ার পরা একটি জামার ছেঁড়া টুকরার গন্ধের টানে ভ্যালেরি খাঁচায় প্রবেশ করে। ক্যাঙ্গালা সংস্থার পরিচালক জ্যারেড প লিসা কারান এক ভিডিও আপডেটে এ তথ্য জানান।

জ্যারেড বলেন, ‘সে এখানে-সেখানে খাবারের খোঁজ করছিল। তারপর একেবারে পেছনের কোণে চলে যায়, যেখানে আমরা চেয়েছিলাম। আমি বোতাম চাপি, আর নির্ভুলভাবে কাজ হয়, দূরনিয়ন্ত্রিত দরজা পড়ে যায় এবং খাঁচা বন্ধ হয়ে যায়।’

পালিয়ে বেড়ানো এই চারপেয়ে শিল্পী নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিল। লিসা কারান খাঁচার ওপর দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন, যেন পাশের দরজা খুলতে না হয়।

জ্যারেড বলেন, ‘সেই সসেজ কুকুর আবার আমাদের ফাঁকি দিক—তা আমরা কোনোভাবেই চাচ্ছিলাম না।’

বুনো পরিবেশ থেকে ‘সভ্য’ দুনিয়ায় ফিরে আসার পর ভ্যালেরিকে কুকুরের খাবার ও তার প্রিয় রোস্ট চিকেন খাওয়ানো হয়। ভ্যালেরির আকার নিয়ে জ্যারেড বলেন, ‘ক্যামেরায় তাকে অনেক বড় দেখায়। কিন্তু বাস্তবে সে খুবই ছোট। পেটের নিচে মাত্র এক ইঞ্চি ফাঁক আছে, ছোট্ট ছোট্ট পা।’

আমেরিকান কেনেল ক্লাবের মতে, ডাকশুন্ড প্রজাতির কুকুররা ‘যেকোনো অভিযানের জন্য প্রস্তুত’। বিপজ্জনক শিকারের জন্য স্বতন্ত্র শিকারি হিসেবে গড়ে ওঠায় তারা সাহসী, এমনকি কখনো কখনো বেপরোয়া ও কিছুটা একগুঁয়েও হয়ে থাকে।

ভ্যালেরির মালিক গার্ডনার সামাজিক যোযাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছেন, যারা তার কুকুরকে খুঁজে পেতে সহায়তা করেছেন তাদের প্রতি তিনি ‘অসীম কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরো লেখেন, ‘যারা কখনো তাদের পোষা প্রাণী হারিয়েছেন, তাদের অনুভূতি একেবারে যথার্থ—কখনো আশা হারাবেন না।’

সূত্র : বাসস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com