সকালে ঘুম থেকে ওঠেন ঠিক ভোর ৫টায়। এরপর রওনা হন টোকিওর হানেদা বিমানবন্দরের দিকে। কারণ, সকাল ৬টার ফ্লাইট ধরে তাকে পৌঁছতে হয় প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার দূরে ফুকুওকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমনই অদ্ভুত এক দৈনন্দিন রুটিনে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলেছেন জাপানের জনপ্রিয় গার্ল গ্রুপ সাকুরাজাকা ৪৬-এর সদস্য ইউজুকি নাকাশিমা।
গানের কেরিয়ারের পাশাপাশি পড়াশোনাকেও সমান গুরুত্ব দিতে চান ওই তরুণী। সেই কারণেই কোনও সমঝোতায় যেতে নারাজ তিনি। অতএব পড়াশোনাও চলবে, আর চলবে গানের অনুশীলনও।
একটি ইউটিউব ভ্লগে নিজের এই ব্যতিক্রমী জীবনযাত্রা শেয়ার করেছেন ইউজুকি। সেখানে দেখা যায়, ফ্লাইট ধরে সকাল ৯:৩০ নাগাদ পৌঁছে যান ফুকুওকার কিতাকিউশু বিমানবন্দরে। সেখান থেকে বাসে করে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। পুরো যাত্রায় সময় লাগে প্রায় চার ঘণ্টা- দু’ঘণ্টা যাওয়া, দু’ঘণ্টা ফেরা। বাড়ি থেকে তাঁর কলেজের দূরত্বই যে ১০০০ কিমি।
স্কুলে পড়তে পড়তেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন একদিন তিনি তাঁর পছন্দের কলেজে যাবেন। কিন্তু নিজের জায়গা ছেড়ে কোথাও গিয়ে থাকতে চাননি। সেই থেকেই এই দীর্ঘ যাত্রা প্রতিদিনের সাধারণ ঘটনা। ফ্লাইটেই সেরে ফেলেন হোমওয়ার্ক, টেক্সটবুকের পড়াশোনা আর সেই সংক্রান্ত অন্যান্য কাজ। কারণ, সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই এক মুহূর্তও।
স্বাভাবিকভাবেই যথেষ্ট ব্যয়বহুল এই যাতায়াত, তাঁর খরচ কত হয় রোজ?
সংবাদমাধ্যমের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, একদফা যাত্রায় খরচ পড়ে ১৫,০০০ ইয়েনেরও বেশি, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৯,০০০ টাকা। অর্থাৎ, দিনে শুধু যাতায়াতেই খরচ হচ্ছে প্রায় ২০,০০০ টাকা। এত টাকা খরচ হওয়া সত্ত্বেও, ইউজুকির কথায়, ‘এই জীবন আমি নিজেই বেছে নিয়েছি। এটা একদমই আমার নিজের সিদ্ধান্ত।’
দিনশেষে ক্লাস সেরে যখন ফিরে আসেন টোকিওতে, তখনও বিশ্রামের সময় নেই। সন্ধ্যাজুড়ে চলে ডান্স প্র্যাকটিস আর ভোকাল ট্রেনিং। বিগত চার বছর ধরে তিনি এই কঠিন রুটিন মেনে চলেছেন, কখনও তার জীবনের এইদিকটি জনসমক্ষে আনেননি। এবার যখন তার গ্র্যাজুয়েশন বা স্নাতক শেষ হওয়ার সময় হয়ে এসেছে, তখন তাঁর মনে হয়েছে এই গল্পটা এবার প্রকাশ্যে আনা উচিত। তাতে হয়তো অনেকেই অনুপ্রেরণা পাবেন।
খুব স্বাভাবিক নিয়মে, এই তরুণীর গল্প আজ অনেকের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। কীভাবে প্যাশন আর অধ্যবসায়ের মধ্যে ভারসাম্য রেখে জীবনের দুই দিক একসঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, ইউজুকির জীবন তারই কথা বলে।