দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার এক মাসের মাথায় সামাজিক মাধ্যমে হঠাৎ নিজেকে ‘রাজা’ বলে দাবি করে বসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট কি সত্যি সত্যি নিজেকে রাজা-বাদশাহ ভাবতে শুরু করেছেন- এমন প্রশ্ন সামনে রেখে একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এএফপি। ট্রাম্পের এই মেয়াদের প্রথম একশ দিনকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বার্তা সংস্থাটি মন্তব্য করেছেÑ ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে প্রায় রাজা-বাদশাহর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
ট্রাম্প নিজেই সম্প্রতি দাবি করেন, ‘আমার মনে হয়, দ্বিতীয় মেয়াদটা আরও বেশি শক্তিশালী।’ তার প্রশাসনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তারা সব কাজ করে ফেলেন… আমি যখন করতে বলি, তারা করে ফেলেন। তাই নয় কি?’
নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হেরে যাওয়ার পর ২০২১ সালে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল ট্রাম্পকে। ওই সময় ক্যাপিটল ভবনে সমর্থকদের হামলা ও দাঙ্গার মতো লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ট্রাম্পকে বিদায় নিতে হয়েছিল। কার্যত একটি বিশৃঙ্খল মেয়াদ পার করার অভিযোগের অনুভূতি তাড়িত করেছে ট্রাম্পকে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা নেওয়ার প্রথম দিনেই ক্যাপিটলে হামলায় জড়িত কয়েকশ কারাবন্দিকে মুক্তি দিয়েছেন তিনি।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক ইতিহাসবিদ ম্যাট ডালেক এএফপিকে বলেন, ‘ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ তার প্রথম মেয়াদের চেয়ে অনেক বেশি কর্তৃত্ববাদী। সাংবিধানিক সুরক্ষা ভেঙে দেওয়ার জন্য আমরা আধুনিক সময়ে এমন ধারাবাহিক আঘাত আগে কখনই দেখিনি।’
ট্রাম্প বিচারকদের সঙ্গেও বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে আগে যেসব আইনি সংস্থা ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলায় সম্পৃক্ত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে নানা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে এসেও সংবাদমাধ্যমের ওপর খড়্গহস্ত হয়েছেন ট্রাম্প। তিনি এখনও সংবাদমাধ্যমকে ‘মানুষের শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। হোয়াইট হাউসে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ সীমিত করেছেন।
আইওয়ার গ্রিনেল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বারবারা ট্রিশ এএফপিকে বলেছেন, প্রথম মেয়াদের তুলনায় এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এমন কিছু সহযোগী ঘিরে রেখেছেন, যারা শুধু তার ক্ষমতার বিষয়ে নির্লজ্জ গতিবিধিকে সহজ করছেন না, বরং কিছু ক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা রাখছেন।
কিছু দিন আগে ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনা ও রাশিয়ার প্রতি ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রদেরও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও হতাশা বাড়িয়ে তুলেছে। এরপর ট্রাম্প চীনসহ বিভিন্ন দেশের ওপর বাড়তি আমদানি শুল্কারোপ করেছেন। এ ঘটনা বিশ্ববাজারে অস্থিরতা ছড়িয়েছে। ক্ষমতার ওপর তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ জোরদারের প্রমাণ দিয়েছে। বাড়তি শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত কীভাবে নিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্পের চটজলদি উত্তর ছিলÑ সহজাতভাবে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, ট্রাম্প কি সহজে ক্ষমতা ছেড়ে যেতে পারবেন? কেননা, নিরে মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প নিজেকে ‘একজন রাজা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাই নির্ধারিত সময়ে তার ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন। তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই। তবে এক মেয়াদ বিরতি দিয়ে এরপর টানা দুই মেয়াদে কেউ প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে কিছু বলা নেই। তাই হয়তো এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাইবেন ট্রাম্প। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, যখন বারবার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার বিষয়ে তিনি কথা বলছিলেন, তখন তিনি মোটেও ‘মজা করছিলেন’ না।