মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫২ অপরাহ্ন

দক্ষিণ কোরিয়ায় যেভাবে রোজা পালন করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

রোজা মুসলিমদের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। পবিত্র রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা যেমন ইবাদতে মনোনিবেশ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশা করে, তেমনি তাদের খাবারের মেনুটাও পরিবর্তন হয়ে যায়।

পবিত্র রমজানে মুসল্লিদের পদচারণায় মুখর দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল কেন্দ্রীয় মসজিদ।

বাংলাদেশে ইফতারিতে প্রধান অনুসঙ্গ খেজুর। তবে এর পাশাপাশি ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, চপ, পিয়াজু, বুন্দিয়া ও জিলাপিসহ নানা আইটেম দিয়ে পূর্ণ থাকে।

মুসলিম সংখ্যালঘু দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরাও কি দেশীয় ইফতারের আমেজ পান? নাকি ভিন্ন দেশের ভিন্ন খাবারই খেতে হয় তাদের?

প্রবাসী বাংলাদেশিরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই বসবাস করুক আর যতই প্রতিকূলতাই থাকুক, তারা পবিত্র রমজানে রোজা পালন করার চেষ্টা করেন।

কিছু ব্যতিক্রম হয়তো আছে, তবে তা উল্লেখযোগ্য নয়। ঠিক তেমনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিরাও শত কষ্টের মাঝেও পুরো রমজান মাস রোজা পালন করার চেষ্টা করে থাকের।

রমজানে রোজার মূল বিষয়গুলো ঠিক রেখে বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে পালিত হয়। ইসলামি দেশে তথা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে রমজানের আবহ অন্য ধর্মাবলম্বী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের দেশ থেকে স্বাভাবিকভাবেই ভিন্ন।

বিশেষ করে যারা দক্ষিণ কোরিয়াতে থাকেন, তাদের জন্য রোজার মাস হচ্ছে শুধুই নিজের ইবাদতের জন্য। না আছে মসজিদে আযান, না আছে সেহরির ডাকাডাকি, না আছে ইফতারির আগে মসজিদের কোরআন তেলাওয়াতের সুর।

কার্যদিবসে নিজের ঘড়ি অথবা মোবাইল দেখে সেহরি খেতে হয়। আবার সেই ঘড়ি দেখেই বিসমিল্লাহ বলে কোনোরকমে পানি কিংবা খেজুর মুখে দিয়ে ইফতার করার নামই রোজা। শুনতে যদিও কষ্টদায়ক কিন্তু বাস্তবতা এটাই। কর্মব্যস্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় কারখানায় নির্ধারিত কর্মঘন্টার পাশাপাশি সিয়াম পালন করেন এখানকার প্রবাসী মুসলিমরা।

দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়ার একটি উন্নত দেশ হলেও মুসলিমদের কাছে অমুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় মুসলিমদের সংখ্যা অনেক কম। তবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, মরক্কো ও উজবেকিস্তান থেকে আসা অভিবাসী মুসলিমের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

কাজপাগল দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। এখানে কাকডাকা ভোরে কারখানার মেশিনের শব্দে ঘুম ভাঙে প্রবাসীদের। এদেশে প্রবাসী মুসলিমদের রোজাপালন অনেকটাই কষ্টের। কাজের ফাঁকে সেরে নিতে হয় সেহরি ও ইফতার।

অধিকাংশ প্রবাসীরকাজের ফাঁকে তাড়াহুড়ো করে খেজুর আর পানি দিয়ে ইফতার করতে হয়। তার মধ্যেও আল্লাহর সুন্তুষ্টি অর্জনে রোজা পালন করে খুশি এখানকার প্রবাসীরা।

রমজান এলে বাহির থেকে ইফতারি কেনার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় নিজেদের মতো করে ইফতার সেরে নেন প্রবাসীরা। ভোজনরসিক বাঙালিদের ইফতারে ছোলা-মুড়ি না হলে চলেই না। বাহারি সব ইফতার সামগ্রীর সঙ্গে মুড়ি, ছোটা, পেঁয়াজু, বড়া ও আলুর চপ থাকবেই।

তবে সাপ্তহিক ছুটির দিনে বন্ধুদের নিয়ে চলে নিজেদের তৈরি রকমারি ইফতারের আয়োজন। এ সময় নিজেদের সাধ্যমত কয়েক পদের ইফতার তৈরি করার সময় পান প্রবাসীরা। আবার শনিবার ও রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে কোরিয়ার মসজিদগুলোতে থাকে ইফতারের আয়োজন।

এখানকার প্রবাসীরা বন্ধুদের সাথে নিয়ে এককাতারে আদায় করে তারাবির নামাজও। সময় পেলে কোরআন তিলাওয়াতে মশগুল হতে দেখা যায় অনেককেই। এককথায় প্রবাসীরা যতটুকু সময় পায় কাজের পাশাপাশি রমজানে ইবাদত-বন্দেগিতেই সময়টা কাটানোর চেষ্টা করে।

রমজান উপলক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটিগুলোর পক্ষ থেকে কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কমিউনিটির সাথে প্রবাসীদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ইফতার মাহফিলেরও আয়োজন করা হয়।

মসজিদ থেকে ভেসে আসা আযানের সুর, রমজানের চাঁদ দেখা, তারাবির নামায, সেহরির সময় ডাকাডাকিসহ নানা আয়োজনে দেশে রমজান আসে সবাইকে জানান দিয়ে। পবিত্র ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ চারদিকে। আর দক্ষিন কোরিয়াতে রমজান আসে নিভৃতে শুধু ক্যালেন্ডারে।

সৌদি আরব, ওমান, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রমজানের জন্য কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেয়া হয়, যাতে করে রোজাদাররা সিয়াম পালন করতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে।

কিন্তু অমুসলিম দেশ হওয়ায় রমজানের কোনো ধরনের ছাড় থাকে না কোরিয়ার প্রবাসীদের। কোনো প্রবাসী মুসলিম রমজানে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাসের বিষয়টি জানতে পারলে কোরীয়রা রীতিমতো অবাক হন।

বর্তমানে ৩০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশির বসবাস এই দক্ষিণ কোরিয়াতে। কোরিয়াতে এসব মুসলিমের জীবনযাপন অনেকটাই কষ্টের। একজন মুসলিমের জন্য নামাজ রোজা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, অন্যদিকে খাবারের হালাল-হারামের বিষয়টিও তার চেয়েও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

দেশের মানুষ সাধারণত মাংস থেকে শুরু করে যেকোনো খাবার চোখ বন্ধ করে কিনে নিয়ে অনায়াসে খেতে পারে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়াতে এর একেবারেই ব্যতিক্রম। বাহির থেকে মাংস দুরের কথা একটা চিপসও খেতে চাইলেও চিপসের গায়ে ভালো করে পড়ে দেখতে হয় এটি হালাল নাকি হারাম!

রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে হলেও হিসেব করে খেতে হয়। কারণ কোরিয়ার বেশিরভাগ খাবারে শুকরের মাংস থাকে। তাই একজন মুসলিম হিসেবে জেনেশুনে খাবার খেতে হয়।

১৯২০ সালের দিকে তুর্কি মুসলিমরা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বলশেভিক বিপ্লব থেকে বাঁচতে কোরীয় উপদ্বীপে পালিয়ে আসে এবং কিছু সময়ের জন্য এখানেই থেকে যায়।

এছাড়া যখন কোরিয়ান যুদ্ধ শুরু হয়, তখন জাতিসংঘ বাহিনীর অংশ হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তুর্কি সেনাদের মিশনারি কাজের মাধ্যমে কোরীয়দের মধ্যে ইসলাম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

১৯৬৯ সালে কোরীয় সরকার প্রদত্ত জমিতে গড়ে ওঠে সিউল কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার। বর্তমানে তিন শাতাধিক ছোট বড় মসজিদ রয়েছে দেশটিতে। ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে কোরীয়দের মধ্যে। এতে অনেক কোরীয় ইসলাম ধর্মগ্রহণ করছেন।

কোরিয়া মুসলিম ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় কোরীয় মুসলিম সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার যা কোরিয়ার জনসংখ্যার ০.৪ শতাংশ। আর অভিবাসী মুসলিমের সংখ্যা ৩ লাখেরও বেশি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com