ইউরোপে বৈধভাবে কাজ করার জন্য রোমানিয়া এখন অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। দেশটি দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি করছে, ফলে শ্রমবাজারে বিদেশিদের জন্য অনেক সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই রোমানিয়ায় কাজের জন্য আগ্রহী হচ্ছেন।
এই ব্লগে আমরা জানবো বাংলাদেশিরা কীভাবে রোমানিয়ায় কাজের সুযোগ নিতে পারেন, ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া কী, এবং কীভাবে সহজ উপায়ে ইউরোপে বৈধভাবে কাজ করা সম্ভব।
কেন রোমানিয়ায় কাজ করবেন?
রোমানিয়া অনেক সুবিধা দেয় যা বাংলাদেশিদের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে:
সহজ ওয়ার্ক পারমিট: অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় রোমানিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া তুলনামূলক সহজ।
কম খরচে জীবনযাত্রা: রোমানিয়ার জীবনযাত্রার খরচ পশ্চিম ইউরোপের তুলনায় কম।
ইউরোপে প্রবেশের সুযোগ: রোমানিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) সদস্য, তাই এখানে কাজ করলে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি: নির্মাণ, কৃষি, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, এবং গাড়ি নির্মাণ শিল্পে প্রচুর বিদেশি কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে।
রোমানিয়ায় কোন সেক্টরে বাংলাদেশিদের জন্য কাজের সুযোগ বেশি?
বাংলাদেশিদের জন্য কিছু সম্ভাবনাময় খাত রয়েছে যেখানে নিয়মিত লোক নেওয়া হয়:
১. নির্মাণ ও কারখানা শ্রমিক:
ওয়েল্ডার, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, পেইন্টার, এবং সাধারণ নির্মাণ শ্রমিকের চাহিদা বেশি।
গাড়ি নির্মাণ কারখানায় শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
ফল ও সবজি চাষ, দুগ্ধ খামার এবং মাংস প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে শ্রমিকদের দরকার হয়।
শেফ, ওয়েটার, হাউজকিপিং ও ক্লিনারদের জন্য নিয়মিত কাজ পাওয়া যায়।
রাইড শেয়ারিং (Uber/Bolt), ফুড ডেলিভারি (Glovo) ও ওয়্যারহাউস অপারেটরের কাজের সুযোগ রয়েছে।
নার্স ও কেয়ারগিভারদের জন্য ভালো চাকরির সুযোগ রয়েছে।
রোমানিয়ায় কীভাবে চাকরি খুঁজবেন?
রোমানিয়ায় চাকরি পাওয়ার জন্য কিছু নির্ভরযোগ্য জব পোর্টাল রয়েছে:
এছাড়া, কিছু রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে রোমানিয়ায় চাকরির আবেদন করা যায়। তবে এজেন্সি বাছাই করার সময় সতর্ক থাকতে হবে, যেন প্রতারণার শিকার না হন।
রোমানিয়ার ওয়ার্ক ভিসা পাওয়ার উপায়
রোমানিয়ায় কাজ করতে হলে Romania Work Visa (D-type Visa) নিতে হবে। নিচে ধাপে ধাপে ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা হলো:
১. চাকরি পাওয়া ও স্পনসরশিপ সংগ্রহ:
প্রথমে রোমানিয়ার কোনো কোম্পানির কাছ থেকে চাকরির অফার নিতে হবে।
নিয়োগকর্তা (Employer) আপনার জন্য ওয়ার্ক পারমিট (Work Permit) আবেদন করবে।
২. ওয়ার্ক পারমিটের অনুমোদন:
রোমানিয়ার অভিবাসন অফিস (IGI) ওয়ার্ক পারমিট অনুমোদন দিলে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৩. বাংলাদেশ থেকে রোমানিয়া ওয়ার্ক ভিসার আবেদন:
আপনাকে ঢাকায় অবস্থিত রোমানিয়ান দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদসহ)
চাকরির অফার লেটার
ওয়ার্ক পারমিট কপি
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
মেডিকেল সার্টিফিকেট
ব্যাংক স্টেটমেন্ট (আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ)
এয়ার টিকেট বুকিং (কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়তে পারে)
৪. ভিসা অনুমোদন ও রোমানিয়ায় যাত্রা:
ভিসা অনুমোদিত হলে নির্ধারিত সময়ে রোমানিয়া যেতে পারবেন।
সেখানে পৌঁছে বাসস্থান ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে।
রোমানিয়ায় কাজ করার সহজ উপায়
যারা সরাসরি ওয়ার্ক ভিসা পেতে চান না, তাদের জন্য কিছু বিকল্প উপায় রয়েছে:

স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে পরে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া:
রোমানিয়ায় পড়াশোনা করে পরে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করা সহজ।
পড়াশোনার সময় পার্ট-টাইম চাকরি করার সুযোগ রয়েছে।

টুরিস্ট ভিসা বা বিজনেস ভিসায় গিয়ে চাকরি খোঁজা:
কিছু মানুষ টুরিস্ট বা বিজনেস ভিসায় রোমানিয়া গিয়ে পরে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করেন। তবে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

EU-এর অন্য দেশে কাজ করে অভিজ্ঞতা নেওয়া:
যদি আপনি ইতালি, জার্মানি, বা পর্তুগালে কাজের অনুমতি পান, তাহলে রোমানিয়ায় চাকরি পাওয়া সহজ হবে।
রোমানিয়ায় থাকার সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া সহজ।
কম খরচে থাকা ও খাওয়া সম্ভব।
দীর্ঘদিন কাজ করলে স্থায়ী বসবাসের (PR) সুযোগ মেলে।
রোমানিয়ান ভাষা শিখতে হয়, ইংরেজিতে কাজ পাওয়া কঠিন হতে পারে।
আবাসন ও বেতন ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম।
কিছু ক্ষেত্রে চাকরি নিয়ে প্রতারণার ঘটনা ঘটে, তাই সাবধানে কাজ খোঁজা দরকার।
রোমানিয়া বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপে কাজ করার একটি ভালো সুযোগ হতে পারে। তবে ওয়ার্ক ভিসা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য জেনে, বিশ্বস্ত সোর্স থেকে চাকরির অফার নিয়ে, এবং প্রতারকদের থেকে দূরে থেকে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।
আপনি কি রোমানিয়ায় কাজ করতে আগ্রহী? তাহলে এখনই প্রস্তুতি নিন এবং আপনার ক্যারিয়ারের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করুন!
Like this:
Like Loading...