শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নসহ সামাজিক অংশীদারদের কাছে নতুন পেশার তালিকাটি পাঠানো হয়েছে৷ শিগগিরই এটি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে৷
গত বছরের জানুয়ারিতে পাস হওয়া ফ্রান্সের নতুন অভিবাসন আইনে প্রথমবারের মতো ‘মেতিয়ের অঁ তনসিওঁ’ বা গুরুতর শ্রমিক সংকটে থাকা খাতগুলোতে কর্মরত অভিবাসীদের বৈধতার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল৷
কিন্তু বিভিন্ন সেক্টরের ট্রেড ইউনিয়ন এবং মালিক সমিতিগুলোর মধ্যে পেশা তালিকা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ছিল৷ তাদের মতে, ২০০৮ সালের তথ্যের উপর ভিত্তিতে করে ২০২১ সালে সবশেষ কর্মী ঘাটতিতে থাকা সেক্টরগুলোর তালিকা করা হয়েছিল৷ যা যুগোপযোগী ছিল না৷
এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার অংশীদারদের কাছে হালনাগাদ তালিকাটি পাঠানো হয়েছে৷ প্রস্তাবিত তালিকাটি ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির সূত্রে ইনফোমাইগ্রেন্টসের হাতে এসেছে৷
নতুন তালিকায় হোটেল-রেস্তোরাঁ, কৃষি, গৃহকর্মী এবং ক্যাটারিংসহ বিভিন্ন নতুন পেশা যুক্ত করা হয়েছে।
ফ্রান্সের ১৩টি রিজিওনের জন্য আলাদা আলাদা পেশাসহ কিছু কিছু পেশাকে জাতীয়ভাবে যুক্ত করা হয়েছে৷
হোটেল-রেস্তোরাঁ সেক্টর যুক্ত করায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা থেকে আসা অনিয়মিত অভিবাসীরা সুযোগ পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ কারণ এই সেক্টরে এসব দেশ থেকে আসা বিপুলসংখ্যক অনিয়মিত অভিবাসী চাকরিতে যুক্ত আছেন৷
ফরাসি শ্রমমন্ত্রী আস্ত্রিদ পানোসিঅঁ-বুভে দেশটির গণমাধ্যম ফ্রান্স ইনফোকে বলেন, ‘‘বিভিন্ন অঞ্চল অনুসারে বিভিন্ন পেশাদার ফেডারেশনের সাথে পরামর্শের পর প্রাপ্ত তালিকায় দেখা গেছে শ্রমিক সংকটে থাকা খাতগুলো বিভিন্ন অঞ্চল এবং ডিপার্টমেন্ট ভেদে ভিন্ন হতে পারে৷’’
যেমন ফ্রান্সের নরমান্দি রিজিওনে ‘জরিপকারী’ দরকার৷ অপরদিকে ১৩টি রিজিওনের মধ্যে সাতটি রিজিওনে মাংস প্রক্রিয়াকরণে নিযুক্ত ব্যক্তি বা কসাই দরকার৷
এছাড়া কৃষক, গৃহকর্মী, রান্না সহকারী, পাঁচক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, উদ্যানবিদ এবং নির্মাণ খাতের কর্মীদের জন্য সারা দেশে অনুসন্ধান করা হচ্ছে৷
ফ্রান্সের যে তিনটি অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি কর্মী ঘাটতি রয়েছে সেগুলো হলো: ইল-দ্য-ফ্রঁন্স বা বৃহত্তর প্যারিস অঞ্চল (৪১টি পেশা), প্রোভন্স-আল্পস-কোত দা’জুর (৩৯টি পেশা) এবং উবেরন-রোন-আল্পস (৩৭টি পেশা)।
বিভিন্ন সেক্টরের মালিকদের সংগঠন ইউএমআইএইচ বলেছেন, আমরা নিয়মিতকরণের শর্ত কঠোর না করার পক্ষে৷
শ্রমমন্ত্রী বলেন, “আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, ট্রেড ইউনিয়ন এবং সামাজিক অংশীদারদের সাথে কাজ করেছি, যাতে বিভিন্ন অঞ্চল অনুসারে কর্মী ঘাটতিতে থাকা পেশার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা যায়৷ চূড়ান্ত করার আগে এমন একটি তালিকা সামাজিক অংশীদারদের কাছে পাঠানো হয়েছে।”
বার্তা সংস্থা এএফপির সূত্র অনুসারে, তালিকাটি রাষ্ট্রীয় জার্নালে ডিক্রি আকারে প্রকাশের আগে এটি নিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন এবং নিয়োগকর্তাদের সংগঠনগুলোর সাথে চলতি সপ্তাহে আলোচনা করা হবে৷
যেভাবে বৈধতা পাবেন অভিবাসীরা
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানা ২০২৪ সালের অভিবাসন আইনে ‘মেতিয়ের অঁ তনসিওঁ’ বা গুরুতর শ্রমিক সংকটে থাকা খাতগুলোতে কর্মরত অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিতকরণের স্বয়ংক্রিয় অধিকারের প্রস্তাব দিয়ে আইনে পরিণত করেছিলেন।
তবে শেষ পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া আইনে ‘স্বয়ংক্রিয়’ বৈধতার পরিবর্তে কেস-বাই-কেস ভিত্তিতে বা ফাইলের উপর নির্ভর করে সংশ্লিষ্টদের এক বছর মেয়াদি রেসিডেন্স পারমিট দিতে দিতে প্রেফেকচুরগুলোকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
এই পদ্ধতিতে রেসিডেন্স পারমিট পেতে একজন ব্যক্তিকে ন্যূনতম তিন বছর ফ্রান্সে নিরবচ্ছিন্ন বসবাস করতে হবে এবং সবশেষ দুই বছরের মধ্যে অন্তত ১২ মাস শ্রমিক ঘাটতিতে থাকা নির্দিষ্ট এলাকায় এবং সেক্টরে কাজে নিযুক্ত থাকতে হবে৷
পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের ফ্রান্সে কোনো অপরাধের সাথে যুক্ত থাকা যাবে না৷ এটির স্বপক্ষে ফরাসি প্রশাসন থেকে পুলিশে ক্লিয়ারেন্স বা সত্যতা প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এছাড়া ওই ব্যক্তির ফরাসি মূল্যবোধের সাথে একাত্মতা ও সমাজে ইন্টিগ্রেশন চেষ্টাকেও আমলে নিবে প্রেফেকচুরগুলো।
তবে পূর্বের মতো অনিয়মিত অভিবাসীদের বৈধতা পেতে তাদের নিয়োগকর্তাদের মুখাপেক্ষী হতে হবে না। শর্ত পূরণ করলে নিজেরাই আবেদন করতে পারবেন৷
বৈধতার এই সুযোগ প্রাথমিকভাবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে৷ ১২ মাস চাকরির শর্তে স্টুডেন্ট জব ও সিজনাল কাজের চুক্তিকেও আমলে নেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷
ফ্রান্সে অনিয়মিত অভিবাসীরা আগে সার্কুলার ভালসের আওতায় বৈধতা পেতেন। নতুন রক্ষণশীল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রোতাইয়ো চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে অভিবাসন সংক্রান্ত নতুন একটি সার্কুলার ইস্যু করে আগের সার্কুলার ভালস বাতিল করে দিয়েছেন।
নতুন সার্কুলারে বিশেষ বিবেচনায় বৈধতার ক্ষেত্রে বসবাসের শর্ত বৃদ্ধি, ফরাসি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার শর্ত যোগ করা হয়েছে।
তবে এটির সাথে ‘মেতিয়ের অঁ তনসিওঁ’ বা গুরুতর শ্রমিক সংকটে থাকা খাতগুলোর সম্পর্ক নেই বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। এটি মূলত ২০২৪ সালের অভিবাসন আইনের মাধ্যমে অনিয়মিতদের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে নিয়মিত করবে।