শুক্রবার, ০৭ মার্চ ২০২৫, ০১:১৭ পূর্বাহ্ন

মনোমুগ্ধকর মনপুরা দখিনা হাওয়া সি-বিচ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫

‘দখিনা হাওয়া সি-বিচ’ নাকি ‘মনপুরা সমুদ্রসৈকত’! নামকরণের টানাপড়েনে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। যে যে নামেই ডাকুক- ব্যক্তিগত ও গ্রম্নপ করে প্রচারণা আর মন্তব্যের সুবাদে ‘মনপুরা দখিনা হাওয়া সি-বিচ’র নাম পৌঁছে যায় ভ্রমণউৎসুক মানুষের মনে।

তাইতো বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রকোপ আর লকডাউনের একঘেয়েমি উপেক্ষা করে মন ছুটে যায় পর্যটনে। কক্সবাজার, কুয়াকাটার মতোই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত এখন ভোলার ‘মনপুরা দখিনা হাওয়া সি-বিচ’। সবুজ শ্যামল প্রকৃতি, মায়াবী হরিণ, সোনালি ধান আর ম্যানগ্রোভ বনানী ঘেরা মনপুরায় পর্যটকদের আকর্ষণে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে এই বালুকাময় সমুদ্রসৈকতে। মেঘনাবেষ্টিত দ্বীপ উপজেলার দক্ষিণভাগে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ে বালু জমে গড়ে উঠেছে এক কিলোমিটার লম্বা সমুদ্রসৈকত। এটি উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের সর্বদক্ষিণে রহমানপুর গ্রামে অবস্থিত।

সৈকতটি প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠলেও গত ৫-৬ বছর ধরে কারও নজরে আসেনি। স্থানীয় দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলহাজ অলিউলস্নাহ কাজল ও তার সহধর্মিণী সাথী কাজলের উদ্যোগে শরু হয় এই সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে স্থানীয় যুবকদের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী কমিটি গঠন করে শুরু হয় পদযাত্রা।

প্রথমে চারটি বেঞ্চি, চারটি ছাতা বসিয়ে পর্যটকদের আহ্বান করা হয় সৈকতে। আকৃষ্ট করতে পর্যায়ক্রমে প্রায় অর্ধশতাধিক ছাতা ও বেঞ্চির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ছনের তৈরি একাধিক গোলঘর, বৈঠকখানা, দোলনা, হ্যামোক, স্থাপন করা হয়েছে সৈকতে। পাশাপাশি পর্যটকদের সুরক্ষায় লাইফজ্যাকেটের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এই সৈকতটির নাম দেওয়া হয় ‘মনপুরা দখিনা হাওয়া সি-বিচ’। নাম নিয়ে শুরু হয় নানা সমীকরণ। ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। কারও এটা পছন্দ আবার কারও ওটা। অবশেষে সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের মুখে শ্রম্নতিমধুরতা পায় ‘মনপুরা দখিনা হাওয়া সি-বিচ’।

এতসব আলোচনা-সমালোচনা ‘দখিনা হাওয়া সি-বিচ’কে পৌঁছে দেয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর প্রচারের ফলে বৈশ্বিক মহামারি করোনা উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসতে শুরু করেন ভ্রমণবিলাসী মানুষ।

সেই থেকে সৈকতটিকে সাজাতে আরও বেশি তৎপরতা বেড়ে যায় উদ্যোক্তাদের। আনুষ্ঠানিকভাবে সমুদ্রসৈকতটি উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেলিনা আক্তার চৌধুরী। তারপর থেকে এই সুমদ্রসৈকত পরিদর্শনে আসা শুরু করেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা।

একে একে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, হাইকোর্টের বিচারক, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা জজ, জেলা পুলিশ কমিশনার, ইউএনওসহ দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা সৈকতটি পরিদর্শনে আসেন।

প্রতিনিয়ত শত শত দর্শনার্থী ভিড় জমালেও সৈকতটির উন্নয়নে সরকারিভাবে তেমন কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। তবে সমুদ্রসৈকতটিকে সরকারিভাবে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা করে মন্ত্রণালয়ের অধীনে দৃশ্যমান উন্নয়নের দাবি এলাকাবাসীর।

এ ব্যাপারে মূল উদ্যোক্তা দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলহাজ অলিউলস্নাহ কাজল বলেন, ‘মনপুরা দখিনা হাওয়া সি-বিচ’র সৌন্দর্যবর্ধনে স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সরকারি অনুদানে সি-বিচের পাকা গেট নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়া পর্যটন সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।’ সি-বিচটিকে সরকারিভাবে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করে দ্রম্নত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেলিনা আক্তার চৌধুরী বলেন, ‘দখিনা হাওয়া সি-বিচে বর্তমানে ব্যক্তিগতভাবে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে। আমরা চাই সরকারিভাবে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা করে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজকে এগিয়ে নেওয়া হোক। সরকার নজর দিলে এটি কক্সবাজার, কুয়াকাটার মতো পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com