ফরিদপুর সদরের ডোমরাকান্দিতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে সূর্যমুখীর দুটি বাগানে ফুটেছে হাজারো সূর্যমুখী। দূর থেকে দেখলে মনে হয় দুটি হলুদের গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন এই সৌন্দর্য দেখতে বিভিন্ন বয়স, শ্রেণি ও পেশার শত শত সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ ফুল দেখতে ভিড় জমাচ্ছে এ বাগানে।
মূলত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করার জন্য চার মাসের জন্য করা হয়েছে এ দুটি বাগান। দুটি বাগানের একটি দুই দশমিক ৬০ একর এবং অপরটি দুই দশমিক ৪০ একর। সব মিলিয়ে দুটি জমির পাঁচ একর জায়গায় এ ফুলের আবাদ করা হয়েছে।
গত ১৮ থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত বপণ করা হয়েছে বারি সূর্যমুখী-৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের বীজ। বর্তমানে বীজ থেকে হওয়া গাছের প্রায় প্রতিটি গাছে ফুল ফুটেছে। পরিপক্ক হয়ে যাওয়ার পর আগামী ৮ মার্চ থেকে বীজ সংগ্রহ করা শুরু হবে। তার আগ পর্যন্ত থাকবে ফুলের সৌন্দর্য।
ফরিদপুর শহর থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে শহরতলীর ডোমরাকান্দিতে এ বাগান দুটি অবস্থিত। দিনভর সূর্যমুখীর এ বাগানে ভিড় করছে শত শত মানুষ। সাধারণত ভিড় বাড়ে বিকেলে এবং ছুটির দিনে। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ আসেন পরিবার পরিজন নিয়ে। আবার প্রেমিক-প্রেমিকারাও আসেন এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
সম্প্রতি এক বিকেলে সরেজমিনে সূর্যমুখী বাগানে ঘুরে দেখা যায়, শত শত মানুষের ভিড়ে বাগানটির রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষের। মানুষ যেন বাগানের ভেতর গিয়ে বা পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে গিয়ে বাগান নষ্ট না করে এবং ফুলে হাত না দেয় এজন্য সার্বক্ষণিক হ্যান্ডমাইক ও হুইসেল বাজিয়ে নিষেধ করছে রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত মালিরা।
বিএডিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ১৭ বছর এখানে সূর্যমুখীর চাষাবাদ হচ্ছে। তবে শুরুতে এ চাষের পরিধি ছিল খুবই সামান্য ও পরীক্ষামূলক। বর্তমানে বিশাল এলাকাজুড়ে সূর্যমুখীর বাগান করা হচ্ছে।
ফরিদপুরের সদরপুর এলাকার গৃহবধূ সুমাইয়া ইসলাম (২৮) তার ছোট বোন সুরাইয়া ইসলামকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন এই সূর্যমুখী বাগান। তিনি বলেন, অনেক আগে এই সূর্যমুখী বাগান সম্পর্কে জেনেছিলাম বান্ধবীদের কাছে। আসবো আসবো করে আর আসা হয়ে ওঠেনি। এবার আসলাম। ঘুরে দেখে ভালো লাগছে।
সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রমজান বিশ্বাস (২৪) বলেন, বন্ধুদের নিয়ে এর আগেও দুইবার এই বাগান ঘুরে গিয়েছি। আজ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনবার এলাম। সামনে আরও দুই একবার আসব। শহরের কাছাকাছি হওয়ায় ছুটি পেলেই মানুষ এখানে চলে আসছে।
বিএডিসির কর্মকর্তারা জানান, এখানে এক একর জমিতে সাতশ থেকে আটশ কেজি বীজ উৎপন্ন হয়। এক একর জমি চাষ করতে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়।
বিএডিসির বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলতি বছর উৎপাদিত বীজ কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে বিতরণ করা হবে। এ বছর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মোট ৯ দশমিক ৮ হেক্টর জমিতে (২৬ দশমিক ৮৫ একর) জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করা হয়েছে। গত বছর আবাদ করা হয়েছিল ৬ হেক্টর (১৬.৪৪ একর) জমিতে।