ভারতীয় বংশোদ্ভূত তুলসি গ্যাবার্ড মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হয়েছেন। তুলসি বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলে বেশ আলোচিত। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও কথা বলেছেন এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, গ্রুপ ও পেজ থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে।
ভিডিওটিতে তুলসি গ্যাবার্ডকে বলতে শোনা যায়, ‘দুই সপ্তাহ আগের একটি কথা শুনে আমার খারাপ লেগেছে যে মুসলিমদের নামাজের সময় জড়ো হওয়ার কারণে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি ইসকন মন্দিরে আক্রমণ করা হয়েছিল। জুন মাসে আইএস বাংলাদেশে একজন হিন্দু পুরোহিত, আশ্রমের কর্মী এবং একজন খ্রিষ্টান গ্রোসাকের হত্যার দাবি করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু ছাড়াও খ্রিষ্টান, মধ্যপন্থী মুসলিম, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, মানবতাবাদী এবং অন্যান্য ধর্মের সংখ্যালঘুরা পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, কাশ্মীর ও ভুটানে হামলার শিকার এবং নিহত হয়েছে। তাই আমাদের প্রশ্ন এমন সহিংসতা ও পাগলামোর কারণ কী…’ (বাংলায় অনূদিত)
‘ফরিদ ঢালি (Farid Dhali)’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ৩৩ মিনিটে প্রকাশিত পোস্টটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘বাংলাদেশ এর বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বললেন… মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড’ (বানান অপরিবর্তিত)
সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ওই ভিডিওটি ১২ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং পোস্টটিতে এক হাজার রিঅ্যাকশন পড়েছে। পোস্টটিতে ২৩টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ২৩০ বার। এই পোস্টের কমেন্টে অনেকে এটিকে গুজব বলে উল্লেখ করেছেন। আবার কেউ কেউ সত্য মনে করেছেন। কাজী নাকিবুল ইসলাম (Kazi Nakibul Islam) লিখেছেন, ‘ইনশা আল্লাহ জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আমেরিকা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বাংলাদেশ এবং হুসাইন সাদ্দাম (Hussain Saddam) নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।
ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেসের (ইসকন) অফিশিয়াল সংবাদ সংস্থার ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রকাশিত হয়। এই ভিডিওর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে থাকা তুলসি গ্যাবার্ডের লাল পোশাক, পেছনের দেয়াল এবং মাইক্রোফোনের অবস্থানের মিল পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলছেন দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সঙ্গে ২০১৬ সালের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলছেন দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সঙ্গে ২০১৬ সালের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভিডিওটির ডেসক্রিপশন থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসকনের ৫০তম বার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে তুলসি গ্যাবার্ড প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এই ভিডিওর ৩ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর কথা শুনতে পাওয়া যায়। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগের একটি কথা শুনে আমার খারাপ লেগেছে যে মুসলিমদের নামাজের সময় জড়ো হওয়ার কারণে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি ইসকন মন্দিরে আক্রমণ করা হয়েছিল। জুন মাসে আইএস বাংলাদেশে একজন হিন্দু পুরোহিত, আশ্রমের কর্মী এবং একজন খ্রিষ্টান গ্রোসাকের হত্যার দাবি করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু ছাড়াও খ্রিষ্টান, মধ্যপন্থী মুসলিম, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, মানবতাবাদী এবং অন্যান্য ধর্মের সংখ্যালঘুরা পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, কাশ্মীর এবং ভুটানে হামলার শিকার এবং নিহত হয়েছে। তাই আমাদের প্রশ্ন এমন সহিংসতা ও পাগলামোর কারণ কী…’ (বাংলায় অনূদিত)
ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেসের (ইসকন) অফিশিয়াল সংবাদ সংস্থার ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই তথ্য ও ভিডিও পাওয়া যায়।
আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির উইমেনস পলিটিক্যাল কমিউনিকেশন আর্কাইভের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তুলসি গ্যাবার্ড ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে হাওয়াইয়ের দ্বিতীয় কংগ্রেশনাল জেলার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অর্থাৎ তিনি সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন না।
সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলছেন দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি পুরোনো। প্রকৃতপক্ষে ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসকনের ৫০তম বার্ষিকীর উদ্যাপন অনুষ্ঠানে তুলসি গ্যাবার্ড প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে দেওয়া ভাষণের ভিডিও সাম্প্রতিক দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে।