রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৫২ পূর্বাহ্ন

বসন্ত, ভ্যালেন্টাইন’স

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

নব্বইয়ের দিকের বসন্ত বরণের থেকে এখনকার আয়োজনের অনেক পার্থক্য আছে।

তখন সারা শহর যেন হলদে আলোয় ঝলমল করত। খুব ভোরবেলায় হলুদ পাঞ্জাবি আর কলাপুরি স্যান্ডেল পরে ছেলেরা অপেক্ষা করতো দশটা টকটকে লাল গোলাপ নিয়ে। কখনও শাহবাগে মৌলি ক্যাফের সামনে, আবার কখনওবা নিউমার্কেটের লাইট কনফেকশনারির সামনে।

মেয়েদের দেরি হত আসতে। কোনো বছর আধ ঘণ্টা আবার কোনো বছর এক ঘন্টারও বেশি। শাড়ি পরতে হত যে।

বাসন্তী শাড়ি। সাথে মিলিয়ে চুড়ি আর ফুলের গয়না। সময় তো লাগবেই। ছেলেদের অপেক্ষায় কোনো আপত্তি নেই।

প্রাণ ভরে প্রেয়সীকে দেখার এই ক্ষণ তো বছরে একবারই পাওয়া যায়। বসন্তের প্রথম দিন।

ঢাকা শহরে সে সময় বসন্ত আসতো আর কোনো হাঁক ডাক ছাড়াই দিনটা হয়ে যেত ভালোবাসা দিবস।

আমরা জানতাম ক্যালেন্ডারের পাতায় সেটা ১৩ ফেব্রুয়ারি। দশটি টকটকে লাল গোলাপ হাত বদল হত গভীর ভালোবাসায়।

কীভাবে যেন সেই শহরটা বদলে গেল। হলদে রং হটিয়ে রক্তিম লাল রংয়ে ছেয়ে গেল ঢাকা শহর। বসন্ত উদযাপন মলিন হল। ভালোবাসার জন্যে বিশেষ দিন হল ঢাকায়- ভ্যালেন্টাইন’স ডে। লাল রংয়ের ভালোবাসা দিবস।

আজ এ শহর বড্ড আধুনিক। ভালোবাসতেও যেন সবাইকে ঝা চকচকে আধুনিক হতেই হবে।

গত দুই দশকে এই শহর বদলেছে। বদলেছে ভালোবাসার নিয়ম। হ্যাঁ, আজ নিয়ম মেনে ভালোবাসতে হয়।

ভ্যালেন্টাইনের আগে তাই নামকরণ হয়েছে আরও কয়েকটি দিনের। এখন আর লাল গোলাপ নয়, জায়গা করে নিয়েছে টেডি, চকোলেট, হাগ আর কিস ডে।

টেডি, চকলেট কি আগেও ছিলো না? অবশ্যই ছিল।

নব্বই দশকের শুরুতে এই শহরে ভালোবাসার হরেক উপহার ফেরি করতো হলমার্ক অথবা আর্চিস গ্যালারি।

তখন কৈশোর চলে। ধানমন্ডি, গুলশান আর বনানী জুড়ে শুধুই হলমার্ক আর আর্চিস। কী কী পাওয়া যেত?

অবশ্যই চোখ ধাঁধানো সব কার্ড। এই দুইটা দোকানের কার্ড ছাড়া আবার ভালোবাসার উপহার হয় নাকি। সাথে ওই দোকানেরই ছোট ছোট স্যুভনির। আর চকলেট বক্স। ব্যাস হয়ে গেল ভালোবাসার উপহার।

ভালোবাসার উপহার হিসেবে আরেকটা প্রচলিত উপহার ছিল গানের ক্যাসেট।

নিউমার্কেটের ক্যাসেটের দোকান তো ছিলোই, আরও ছিলো এলিফ্যান্ট রোডের গীতালি, গানের ডালি।

আর ইংরেজি গানের ভক্ত হলে তো এলিফ্যান্ট রোডের কবির ভাইয়ের রেইনবো আর তার পাশের রিদম।

তবে এর বাইরেও ছিলো আরও একটা উপহার; সেটা হল বই।

বসন্তের ভালোবাসা দিবসের সময়টায় চলতো বইমেলা। সেখান থেকে বই কিনে অপেক্ষা করা কবে আসবে ১৩ তারিখ!

বইমেলা ছাড়াও নিউমার্কেট ও সোবহানবাগের জ্ঞানকোষ তো ছিলোই।

আজ হলমার্ক নেই, আর্চিস নেই, জ্ঞানকোষ নেই এই শহরে। বদলে আছে অনলাইন অর্ডার। যেখানে পাওয়া যায়, ডায়মন্ডের রিং, ব্রান্ডের পারফিউম বা মেইকআপ সেট।

বিদেশি ফুল আর চকোলেটও আজ অনলাইনে। তখনকার ছোট্ট ঢাকায় প্রেমিক প্রেমিকারা সারা শহর ঘুরে বেড়াতো হুড তোলা রিক্সায়।

আজ ঢাকা শহরে হুড তোলা রিক্সায় যুগল সমারোহ নেই। বরং নেট দুনিয়াতে পাওয়া যায় পাঁচ তারকা হোটেলে নাইট প্যাকেজের ভ্যালেন্টাইন অফার।

গত দুই দশকে ঢাকার হলদে বসন্ত থেকে লাল ভ্যালেন্টাইনে পাড়ি জমিয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com