সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন

অফিসে পৌঁছাতে বিমান ব্যবহার করেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

প্রতিদিন সকালে উঠে আমরা কেউ হয়তো বাসে, কেউ মেট্রোরেলে, আবার কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে করে অফিসে যাই। কিন্তু কল্পনা করুন, কেউ যদি প্রতিদিন বিমানে চড়ে অফিস করেন! শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী র‍্যাচেল কৌর সপ্তাহে ৫ দিন এই কাজটিই করেন।

দুই সন্তানের জননী র‍্যাচেল কৌর এয়ারএশিয়ার ফিনান্স অপারেশন বিভাগের সহকারী ম্যানেজার। বর্তমানে পরিবারসহ বসবাস করছেন মালয়েশিয়ার পেনাং রাজ্যে। তিনি প্রতি কর্মদিবসে পেনাং থেকে কুয়ালালামপুরে বিমানে চড়ে অফিস যান এবং কাজ শেষে আবার বাড়ি ফিরে আসেন।

সম্প্রতি চ্যানেল নিউজ এশিয়ার (সিএনএ) সঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে “সুপার কমিউটার” খ্যাত র‍্যাচেল কৌর জানিয়েছেন যে, বিমানে অফিসে যাওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়ন করা শুধু সম্ভবই নয়, বরং অর্থনৈতিকভাবেও সুবিধাজনক। এই ভ্রমণ তাকে তার সন্তানদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছে।

জানা গেছে, তিনি যখন প্রথম এয়ারএশিয়ার চাকরি শুরু করেন তখন তিনি কুয়ালালামপুরে তার অফিসের কাছাকাছি একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। সপ্তাহে মাত্র একবার পেনাংয়ে তার পরিবারের কাছে যেতেন। তবে সন্তানদের থেকে এত দূরে থাকা তার জন্য কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। এতে তার জন্য কাজ ও পারিবারিক জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল।

কৌর জানান, ২০২৪ সালের শুরুর দিকে তিনি প্রতিদিন ফ্লাইটে যাতায়াতের সিদ্ধান্ত নেন। অবাক করার মতো বিষয় হলো এই নতুন রুটিনই তাকে তার পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনকে আরও ভালোভাবে সামলাতে সাহায্য করেছে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, “আমার দুটি সন্তান আছে। একজনের বয়স ১২, আরেকজনের ১১। তারা বড় হচ্ছে আর এই সময়ে একজন মায়ের তাদের পাশে থাকা প্রয়োজন। এই বিমান ভ্রমণের কারণে আমি প্রতিদিন রাতে তাদের সঙ্গে থাকতে পারছি।”

কৌর তার দৈনন্দিন রুটিন সম্পর্কে জানিয়েছেন, প্রতিদিন ভোর ৪টায় ঘুম থেকে ওঠেন, ৫টার মধ্যে বাড়ি থেকে বের হন এবং গাড়ি চালিয়ে পেনাং বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে তিনি স্থানীয় সময় ৬ টা ৩০ মিনিটের ফ্লাইটে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

সকাল ৭ টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে তিনি অফিসে পৌঁছে যান। কাজ শেষ করে রাত ৮টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসেন। প্রতিদিন তার ভ্রমণের মোট দূরত্ব প্রায় ৭০০ কিলোমিটার এর বেশি।

তবে কৌর জানিয়েছেন সপ্তাহে ৫ দিন তিনি বিমান যোগে অফিসে আসলেও তার খরচ আগের তুলনায় কমেছে। আগে তিনি বাসা ভাড়া এবং অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৪৭৪ ডলার (প্রায় ৫৭,০০০ বাংলাদেশি টাকা) ব্যয় করতেন। কিন্তু এখন তার মাসিক যাতায়াত ব্যয় কমে ৩১৬ ডলার (প্রায় ৩৮,০০০ বাংলাদেশি টাকা) হয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, ফ্লাইট চলাকালীন সময় তিনি গান শোনেন এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেন। বিমান থেকে নামার পর মাত্র ৫-১০ মিনিট হাঁটলেই তিনি তার অফিসে পৌঁছে যান।

তিনি বলেন, “চারপাশে সহকর্মীরা থাকলে কাজ করা সহজ হয়। আপনি সরাসরি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।”

তিনি আরও জানান, অফিসে থাকাকালীন তিনি পুরোপুরি কাজে মনোনিবেশ করেন, আর বাসায় ফিরে পুরো সময়টা সন্তানদের সঙ্গে কাটান।

তবে প্রতিদিন এত সকালে ঘুম থেকে ওঠা যে কষ্টকর সেটি স্বীকার করেন কৌর। কিন্তু দিনের শেষে যখন তিনি তার সন্তানদের মুখ দেখতে পান তখন সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায় বলে মনে করেন তিনি।

সকল চ্যালেঞ্জের পরেও র‍্যাচেল কৌর তার এই ব্যতিক্রমী রুটিন বজায় রেখেছেন। তিনি জানান, যখন মানুষ তার দৈনন্দিন রুটিন সম্পর্কে শোনে, তখন অনেকেই তাকে “পাগল” বলে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com