বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:০৫ অপরাহ্ন

দুর্গম পাহাড়ি জনপদ জুরাছড়িতে একদিন

  • আপডেট সময় বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

আধুনিক সভ্যতা ছেড়ে আদিমতা খুঁজে পাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম লেকের পাড় ঘেঁষে পাহাড়ের ডানায় গড়ে ওঠা দুর্গম পাহাড়ি জনপদ জুরাছড়ি। দক্ষিণ এশিয়ার বড় লেকের পাড়ে ছোট-বড় আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পাহাড় বাহারি রঙের নৌকা, জল সবুজের মিতালি ভেদ করে ছুটে চলা এ লেকের একপাশে আছে গাঢ় সবুজ বন গাছ-গাছালি, ফুল-ফল, হরেক প্রজাতির প্রাণের আবাস। আবার লেকের অথৈ জলে নানা প্রজাতির মাছ আর জলজ জীববৈচিত্র্যের সমারোহে ঘোর লাগা আনন্দে ভাসতে ভাসতে ক্লান্তিহীন আমাদের নৌকা ছুটছে জুরাছড়ির পথে।

১০টি উপজেলা নিয়ে এশিয়ার সর্ববৃহৎ ১১ হাজার ১২২ বর্গকিলোমিটারের কৃত্রিম হ্রদ আর সবুজে আচ্ছাদিত পাহাড়ে ঘেরা ভারতের সীমান্তবর্তী এ জেলা। রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত ও চট্টগ্রাম থেকে ৬৫ কিলোমিটার (৪০ মাইল) উজানে কর্ণফুলি নদীর ওপর নির্মিত একটি বাঁধের কারণে গড়ে উঠেছে কাপ্তাই হ্রদ নামে পরিচিত কৃত্রিম জলাধার। যার পানি ধারণক্ষমতা ৫২ লাখ ৫১ হাজার একর (২১ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর)। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের আমলে ১৯৫৭ সালে কাপ্তাই বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৯৬২ সালে শেষ হয়। বাঁধের সঞ্চিত পানি ব্যবহার করে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এটি।

জুরাছড়ি উপজেলা রাঙ্গামাটি সদর থেকে ৫৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত স্থানীয় চাকমা ভাষায় যার ‘জুর’ অর্থ ঠান্ডা আর ‘ছড়ি’ অর্থ চড়া। উপজেলা সদরের দক্ষিণে সব নদীর উজানে জুরাছড়ি নামক একটি ছড়া রয়েছে। এ ছড়ার পানি খুবই ঠান্ডা। এ জুরাছড়ি ছড়ার নামেই এ উপজেলার নামকরণ হয়েছে জুরাছড়ি। এর উত্তরে বরকল, দক্ষিণে বিলাইছড়ি পূর্বে ভারতের মিজোরাম সীমান্ত এবং পশ্চিমে জেলা সদর উপজেলা। এলাকার একমাত্র যোগাযোগমাধ্যম নৌপথ। উপজেলায় পৌঁছার আগেই রাস্তার মাথা নামক স্থান থেকে উপজেলা সদরের সড়ক সংযোগ রয়েছে। তাছাড়া উপজেলা থেকে কয়েকটি পাড়ায় যাতায়াতের জন্য রয়েছে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল। উপজেলা থেকে বেশিরভাগ পাড়ায় যাতায়াতের একমাত্র উপায় হচ্ছে পায়ে হাঁটা বা নৌপথ।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ভোর হতেই হেমন্তের ২য় সকালে শীতের আগমনী বার্তার হালকা কুয়াশা ভেদ করে আসা মিষ্টি রোদের উষ্ণতায় দুই ভ্রমণবন্ধু প্রলয় বাপ্পী আর সাংবাদিক সমীর মল্লিককে সাথে নিয়ে দুই মোটরবাইকে রওয়ানা হলাম দীঘিনালা থেকে। দীঘিনালা থেকে খাগড়াছড়ি হয়ে মহালছড়ি পৌঁছে চা বিরতি শেষে আবার ছুটে চলা। প্রায় তিন ঘণ্টার মোটরবাইক জার্নিতে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা সবুজে ঘেরা ৯০ কিলোমিটার সড়কপথ পেরিয়ে রাঙ্গামাটি সদরে পৌঁছে সময় দুপুর বারোটায়।

আগে থেকেই অপেক্ষায় থাকা সাংবাদিক দুই বন্ধু আরমান খাঁন ও প্রান্ত রনির সাথে দেখা করে সবাই মিলে রাঙ্গামাটি শহরের ঐতিহ্যবাহী ও সুস্বাদু খাবারের দোকান গ্রীন ভ্যালিতে লেকের কাতলা মাছ আর নানা রকমের ভর্তা দিয়ে দুপুরে চমৎকার আহার সেরে রওয়ানা হলাম রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট। কারণ দেড়টায় জুরাছড়ির শেষ লঞ্চ।

ঠিক টাইম দেড়টার লঞ্চে রওয়ানা হলাম সুবলং হয়ে জুরাছড়ির পথে। প্রথমে কড়া দেখে লঞ্চের ভেতরে বসলেও নীলাভ জলরাশি সাথে হেলে থাকা সবুজ পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য দেখার লোভে লঞ্চের ছাদেই নিজেদের জন্য জায়গা করে নিলাম। দোতলা লঞ্চের ছাদে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে এগিয়ে চলেছি। জেলার সঙ্গে উপজেলাগুলোর যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এ দোতলা লঞ্চগুলো। তাছাড়া কেউ রিজার্ভ নিয়ে যেতে চাইলে স্পিড বোট ও বার্মিজ বোট নামের স্থানীয় কিছু ডিঙ্গি নৌকা পাওয়া যায়।

দুর্গম পাহাড়ি জনপদ জুরাছড়িতে একদিন

সাধারণত বর্ষার শেষে, শরৎ এবং হেমন্তের মাঝামাঝি পর্যন্ত লেকের পানিতে চারিদিকে টইটুম্বুর থাকে। লেকের বুক চিড়ে এগিয়ে চলেছে আমাদের লঞ্চ। পানকৌড়ি, সারস, বালিহাঁসসহ অসংখ্য পাখির ঝাঁক ঠেলে লঞ্চ চলছে সুবলং বাজারের দিকে। লঞ্চ চলার আশপাশে বালুখালী, নির্বান নগরের বৌদ্ধমূর্তি, মাস্টারপাড়া, স্বাগতম বরকল, হাজাছড়া পাহাড়ি গ্রাম আর দ্বীপ পেরিয়ে সুবলং বাজারে কিছুক্ষণের যাত্রা বিরতি।

ছোট পাহাড় আর দ্বীপে মোড়ানো কিছুটা পথ যেতেই আলাদা হয়ে যায় বরকল আর জুরাছড়ির পথ। বাঁক নিতেই সবুজ পাহাড় যেন আমাদের অভ্যর্থনা জানালো। জুরাছড়ির দিকে লঞ্চ ঢুকতেই চোখে পড়ল বাচ্চাসহ বিচরণ করছে এক ঝাঁক রাজহাঁসের দল। মাছ ধরার মৌসুমে লেকজুড়ে ছোট ছোট নৌকায় চরে জাল ফেলছে নিবন্ধনকৃত জেলেরা। বিশাল জলরাশির বুকে ছোট ডিঙ্গি নৌকা ভেসে চলেছে। গ্রামের বাসিন্দারাও নৌকায় যাতায়াত করে। জলবেষ্টিত হওয়ায় প্রায় প্রত্যেক পরিবারই নিজস্ব নৌকা ব্যবহার করে থাকেন।

পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে হেমন্তের কুয়াশা বিকেলের মিষ্টি হাওয়ায় গা ভাসিয়ে আনন্দের পথচলা। যাত্রীদের ওঠানামার জন্য লঞ্চ থামছে বিভিন্ন ঘাটে। পুরো আকাশ যেন নেমে এসেছে লেকের পানিতে। জলের বাগান দেখলাম এই প্রথম। লেকের স্বচ্ছ পানির নিচে সবুজের এক ভিন্ন জগত। বড় বড় শ্যাওলার বন পানির নিচে।

সন্ধ্যার আগেই পৌঁছাই জুরাছড়ির ঘাটে। পথের দুপাশে আদিবাসীদের ঘর, প্রাচীন বৃক্ষ আর সবুজের সমারোহ। দূরে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি পবর্তমালা। রাতে থাকা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা করতে হয়নি। নৌঘাটে নেমে লেকের পাড়ে জেলা পরিষদের নান্দনিক বাংলোয় রাতে থাকার বন্দোবস্ত হলো। ঘাটে রয়েছে পাহাড়ের আসল স্বাদের খাবার হোটেল। মেজাংয়ে রাতের চমৎকার ডিনার সেরে নিলাম। সুসাদু পাহাড়ি রান্নার প্রকৃত স্বাদ নিতে চাইলে এ হোটেলের বিকল্প নেই।

শহুরে কোলাহলমুক্ত রাতের জুরাছড়িতে নেমে এসেছে সুনসান নীরবতা। পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় জুরাছড়ির রাতের সৌন্দর্য ছিল রূপকথার গল্পের মতো। রাজ্যজুড়ে নেমে এসেছে জ্যোৎস্নার দল। পাহাড় ঘেরা দূরের এক জনপথকে যেন জাপটে ধরেছে একদল নক্ষত্র। ভরা পূর্ণিমায় চাঁদের আলোয় লেকের পানিতে বিকিরণে সৃষ্টি হয় অন্যরকম অনুভূতি। ভোরেই ঘুম ভেঙে দেখলাম চাষি আর জেলেরা নিজেদের নৌকায় করে রওয়ানা হচ্ছেন গন্তব্যে। এখানে মেয়েরাও নৌকা চালাতে পারদর্শী।

সকাল সকাল ভ্রমণবন্ধুদের সাথে নিয়ে রওয়ানা হলাম দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সিংহ শয্যা বৌদ্ধমূর্তিটি দেখার উদ্দেশ্যে। উপজেলা সদরের স্বল্প দূরত্বে হওয়ায় খুবই দ্রুত পৌঁছে গেলাম। ১২ একর পাহাড়ি ভূমির ওপর সুবলং শাখা বৌদ্ধ বিহারের সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবেই। বিহারে ঢুকতেই চোখে পড়বে অসাধারণ কারুকার্যের নান্দনিক গেট, উঁচু ওয়াচ টাওয়ার, সাজানো ফুলের বাগানে প্রজাপ্রতির খেলা আর সামনের দিকে তাকাতে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সিংহ শয্যা বৌদ্ধমূর্তি।

দুর্গম পাহাড়ি জনপদ জুরাছড়িতে একদিন

বিহার পরিচালনা কমিটিসহ শ’খানেক নর-নারী স্বেচ্ছাশ্রমে বিহারের আশপাশে পরিষ্কার আর ধোয়া-মোছার কাজে ব্যস্ত সবাই। আমাদের দেখে বিহার পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য পরিচয়পর্ব শেষ করে অভ্যর্থনা জানিয়ে বললো, ‘বসেন, আমরা সবাই একসাথে নাস্তা কবরো।’ আমরা এদিক ওদিক ঘুরে বিহারের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। কিছুক্ষণ পর সবার সাথে আমাদেরও স্থানীয় নাম রসপুরী নাস্তা এনে হতে ধরিয়ে দিলো। আমরা খেতে বেরিয়ে পড়লাম। তাদের আন্তরিক অভ্যর্থনায় আমরা সবাই মুগ্ধ হলাম।

৪ নং দুমদুম্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শান্তি রাজ চাকমা জানান, ধ্যানরত এত বড় বৌদ্ধমূর্তি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম। তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও এর চেয়ে বড় শুয়ে থাকা গৌতম বুদ্ধের মূর্তি নেই। ৯ এপ্রিল ২০১৩ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালে এলাকাবাসীর উদ্যোগে কায়িক শ্রমে বৌদ্ধমূর্তিটির পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হয়। এ ছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে আগত সহস্রাধিক পূণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেন নির্মাণ কাজে।

৪টি ইউনিয়ন নিয়ে জুরাছড়ি উপজেলা। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জুরাছড়ি উপজেলার জনসংখ্যা ২৬ হাজার ৯৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৪ হাজার ১৯৭ জন এবং মহিলা ১২ হাজার ৭৩৫ জন। এটি একটি পাহাড়ি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত উপজেলা। উপজাতিদের মধ্যে চাকমাদের সংখ্যা বেশি। এ ছাড়া মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখোয়া উপজাতির বসবাস রয়েছে এ উপজেলায়। মোট জনসংখ্যার ৩.২৬% মুসলিম, ০.৬৩% হিন্দু, ৯৫.৬০% বৌদ্ধ এবং ০.৫২% খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। হাতেগোনা কিছু ব্যবসায়ী আর সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া তেমন বাঙালি বসতি নেই ওখানে।

এবার ফেরার পালা; উদ্দেশ্য দুপুর দেড়টার লঞ্চে রাঙ্গামাটি ফেরা। আগে থেকেই দুপুরে লাঞ্চের জন্য বলে রাখা মেজাং হোটেলে গিয়ে দেখি অবাক করা কাণ্ড, হরেক রকমের পাহাড়ি ঐতিহ্যবাহী খাবারের টেবিল ভর্তি সাথে লেকের মাছ প্রকৃত স্বাদে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে নিমিষেই হারিয়ে গেছে ভ্রমণের সব ক্লান্তি। এ যেন ষোলোকলা পরিপূর্ণ। হ্রদ আর পাহাড় বেষ্টিত জুরাছড়ির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবে যে কেউ। এমন দুর্গম প্রান্তিক পাহাড়ে সব সময় খুঁজে পাওয়া যায় বুনোগন্ধ আর নীরবতা। দুর্গমতায় আধুনিক কৃত্রিমতা ছেড়ে আদিমতা খুঁজে পাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম লেকের কুল ঘেঁষে পাহাড়ের ডানায় গড়ে ওঠা এই পাহাড়ি জনপদ।

অবস্থান কোথায়
দেশের সর্ববৃহৎ জেলা রাঙ্গামাটির দুর্গম উপজেলার মধ্যে এটি অন্যতম। উপজেলা হলেও, অন্যতম ব্যবসায়িক কেন্দ্র যক্ষ্মা বাজার বেশ ছোট। এ বাজারে হাতেগোনা কয়েকটি দোকান। তারই একপাশে উপজেলা পরিষদ অফিস পাড়া। জুরাছড়িতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকলেও ভ্রমণপিপাসুদের কাছে খুব একটা পরিচিত জায়গা নয়। অনেকের কাছে রাঙ্গামাটিতে বেড়ানোর জায়গা বলতে সুবলং ঝরনা, ঝুলন্ত সেতু কিংবা নৌকায় চড়ে কাপ্তাই লেকে ঘুরা ফেরা! অথচ কাপ্তাই লেকের কোলজুড়ে বসে থাকা জুরাছড়ির সৌন্দর্যর পুরোটাই প্রাকৃতিক। এখানে মানুষের হাতে তৈরি কৃত্রিম সৌন্দর্য নেই।

দুর্গম পাহাড়ি জনপদ জুরাছড়িতে একদিন

যা দেখে মুগ্ধ হবেন
লেকের বুকে ছোট ছোট দ্বীপ আর সবুজ পাহাড় বেষ্টিত জুরাছড়ির সৌন্দর্যে মুগ্ধ করবে প্রকৃতিপ্রেমী যে কাউকে। এমন দুর্গম প্রান্তিক পাহাড়ে সব সময় খুঁজে পাওয়া যায় বুনোগন্ধ আর নীরবতা। পায়ে হেঁটে বা মোটরবাইক ভাড়া করে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড় কিংবা নৌকা নিয়ে লেকের নীলাভ জলরাশির ওপর ভেসে চলা। সব মিলিয়ে অসাধারণ এক অনুভূতি আন্দোলিত করে।

দীর্ঘসময় নীলাভ জলরাশিতে ভাসার পর মনে চাইবে পায়ে হেঁটে পাহাড় ঘুরে দেখতে। দূর থেকে মনে হবে খুব সহজেই ওঠা যাবে পাহাড় চূড়ায়। কিন্তু এর ওঠার পথ বেশ খাড়া। ভেজা শরীরেও ঘাম ঝরতে থাকবে। ঘামে ভেজা শরীরে পাহাড়ে দোল খাওয়া হাওয়া নিমিষেই দূর করবে সব ক্লান্তি।

পাহাড় শিখরে উঠতে উঠতে দেখা যাবে দূরের ঢেউ খেলা পাহাড়ের সারি। যেন প্রকৃতির অন্যরকম মায়াবী রূপ। প্রাকৃতিক কাপ্তাই হ্রদের বুকে দ্বীপরাশি। পাহাড়ের বুকে দাঁড়িয়ে আদি বনজ সম্পদ জারুল, চাপালিশ, গর্জন, বটবৃক্ষ বিলিয়ে যায় অকৃত্রিম ভালোবাসায়। তাছাড়া অসংখ্য ঝিড়ি ঝরনার মিলনমেলা।

সবচেয়ে বড় বৌদ্ধমূর্তি
সুবলং শাখা বন বিহারে শ্রদ্ধেয় বনভান্তের স্মৃতি রক্ষার্থে আছে সাধনানন্দ মহাস্থবির (বনভান্তে) কমপ্লেক্স। এখানে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সিংহ শয্যা বৌদ্ধমূর্তি। অনেকে মনে করেন, এটি দক্ষিণ এশিয়ায়ও সবচেয়ে বড় ‘শুয়ে থাকা’ বৌদ্ধমূর্তি। ১২৬ ফুট লম্বা সিংহশয্যা গৌতম বুদ্ধের মূর্তিটি দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন।

৪ নং দুমদুম্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শান্তি রাজ চাকমা জানান, ধ্যানরত এত বড় বৌদ্ধমূর্তি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম। তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও এর চেয়ে বড় শুয়ে থাকা গৌতম বুদ্ধের মূর্তি নেই। ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালে এলাকাবাসীর উদ্যোগে কায়িক শ্রমে বৌদ্ধমূর্তিটির পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হয়। এ ছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে আগত সহস্রাধিক পূণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেন নির্মাণ কাজে।

কোথায় রাত্রি যাপন
জুরাছড়ি রাতযাপনের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে জেলা পরিষদের নান্দনিক সৌন্দর্যের একটি বাংলো রয়েছে। আগে থেকেই যোগাযোগ করে নিতে পারেন। এটি সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। থাকার বিড়ম্বনা নিতে না চাইলে সকালে গিয়ে বিকেলের লঞ্চে ফিরতে হবে রাঙ্গামাটির পথে। ফেরার পথে মনে হবে, দুর্গমতা কীভাবে ঢেকে রাখে তার প্রকৃতির গোপন সৌন্দর্য। এ সৌন্দর্যের নিবিড় ডাকে সাড়া দিলে জীবনটা হয়ে উঠবে উপভোগ্য।

যেভাবে যেতে হবে
রাঙ্গামাটি শহর হয়েই যেতে হয় জুরাছড়িতে। জেলার রিজার্ভ বাজার থেকে লঞ্চে করেই জুরাছড়ি যেতে হয়। প্রতিদিন দুটো লঞ্চ আসা-যাওয়া করে। সকাল সাড়ে ৭টায় ও দুপুর দেড়টায় আরেকটি লঞ্চ জুরাছড়ির উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ফেরার লঞ্চের সময় জুরাছড়ি থেকে একই সময়ে লঞ্চ ছেড়ে আসে।

দুর্গম পাহাড়ি জনপদ জুরাছড়িতে একদিন

খাওয়া-দাওয়া
আধুনিক কোনো রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠেনি জুরাছড়িতে। তবে আপনি যদি পাহাড়ি খাবারের আসল স্বাদ নিতে চান; লঞ্চ থেকে নেমেই সিঁড়ি ঘাটে হোটেল মেজাং সবচেয়ে ভালো ও সুস্বাদু খাবার পাবেন। বিকল্প হিসেবে উপজেলা কমপ্লেক্সের পাশে মোহম্মদ আলী হোটেলে খাবার রয়েছে।

প্রয়োজনীয় তথ্য
যদি সাঁতার না জানেন, তবে পানিতে নামবেন না। লেকের পানি বেশ গভীর। প্রয়োজনে লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করতে পারেন। লেকের পানি খুবই স্বচ্ছ ও নীলাভ। পানিতে কোনো বোতল, প্যাকেট, প্ল্যাস্টিক ইত্যাদি ফেলবেন না। প্রকৃতিকে সুন্দর রাখুন। প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করুন।

প্রবীর সুমন

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com