বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩৩ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রে বহিষ্কারের ভয়ে চাকরি ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা

  • আপডেট সময় বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য সীমাহীন সম্ভাবনার দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। সেখানে তাঁরা বিশ্বমানের শিক্ষা ও উচ্চ বেতনের চাকরির সুযোগ খুঁজে পেয়েছেন। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে অনেকের জন্য আমেরিকায় সেই স্বপ্ন এখন এক কঠিন পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই কঠিন যে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা দলে দলে পার্টটাইম চাকরি ছাড়ছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভিসা প্রত্যাখ্যানের সংখ্যা বৃদ্ধি, কর্মস্থলে কঠোর তদারকি এবং ওয়ার্ক পারমিটের অনিশ্চয়তায় অনেক ভারতীয় শিক্ষার্থী তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য এফ-১ শিক্ষার্থী ভিসা দেওয়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়েছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ৬৪ হাজার ৮টি ভিসা দেওয়া হয়েছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ৩৮ শতাংশ কম।
কোভিড-১৯ মহামারির পর শিক্ষার্থী ভর্তি বৃদ্ধির ধারার এটি প্রথম বড় পতন। শিক্ষার্থীদের আরও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে সংকুচিত কর্মসংস্থানের বাজার। যুক্তরাষ্ট্র চাকরির বাজার এখন স্থানীয় কর্মীদের বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং নতুন অভিবাসন ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা প্রান্তিক অবস্থানে চলে যাচ্ছেন।
অনেক শিক্ষার্থী মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তাঁর ‘স্থানীয়করণ’ নীতির কারণে নিয়োগকর্তাদের পক্ষে ভিসা স্পনসর করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে বসবাসরত সাই অপর্ণা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে বলেন, ‘চাকরি পাওয়া এখন সত্যিই কঠিন হয়ে গেছে। কখনো ভাবিনি, পরিস্থিতি এতটা খারাপ হবে।’
অপর্ণা যুক্তরাষ্ট্রে ইনফরমেশন সিস্টেমসে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন এবং এক বছর ধরে চাকরির সন্ধান করছেন, কিন্তু কোনো সফলতা পাননি। তাঁর মতোই যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত বেশ কয়েকজন ভারতীয় শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, তাঁরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বাড়তি তদারকির মুখে পড়ছেন। ইউনিফর্ম পরিহিত কর্মকর্তারা তাঁদের কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে ছাত্রদের পরিচয়পত্র বা ওয়ার্ক পারমিট যাচাই করছেন, বিশেষ করে যাঁরা ‘অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিংয়ের’ আওতায় কাজ করছেন।
অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিংয়ের প্রথমে এক বছরের জন্য অনুমোদিত হয় এবং এর আওতায় শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাজ করতে পারেন। এফ-১ ভিসাধারীদের শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু প্রবাসী শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য অনেক সময় এই সীমাবদ্ধতা লঙ্ঘন করেন।
সম্প্রতি ক্যাম্পাসের বাইরে খণ্ডকালীন চাকরির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বিষয়ে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত এক ভারতীয় শিক্ষার্থী টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমার কর্মস্থলে (একটি রেস্টুরেন্ট) কিছু কর্মকর্তা এসে স্টাফদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। তাঁরা আমার কলেজের পরিচয়পত্র দেখতে চান। ভাগ্যক্রমে, আমি তখন বাথরুম থেকে বের হচ্ছিলাম, তাই বললাম, শুধু সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতেই এসেছি। আমার নিয়োগকর্তাও আমাকে সমর্থন করেন। কিন্তু অভিজ্ঞতাটি এতটাই ভয়ংকর ছিল যে আমি পরদিনই চাকরি ছেড়ে দিই।’

নিউ জার্সিতে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স করা আরেক শিক্ষার্থী জানান, তিনি স্থানীয় একটি গ্যাস স্টেশনে কাজ করার সময় কর্মকর্তারা তাঁর ভিসার অবস্থা ও শিক্ষার্থী পরিচয়পত্র নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার নিয়োগকর্তা আমার নিজের শহর তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা থেকে এসেছেন। তিনি কর্মকর্তাদের জানান, আমি তাঁর দূরসম্পর্কের আত্মীয় এবং জানুয়ারির শিক্ষার্থী ব্যাচে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি।’

অনেক শিক্ষার্থী এখন কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে তাঁদের চাকরি ছাড়ছেন; কারণ, তাঁদের মাথার ওপর সর্বদা নির্বাসনের আশঙ্কা ঝুলছে। এ বিষয়ে অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইনামপুদি প্রশান্ত বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই ঝুঁকি নিতে পারি না। কারণ, অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ কর্মকর্তারা সর্বদা নজরদারি চালাচ্ছেন এবং আমাদের জানা আছে, তাঁরা কোনো অজুহাত শুনতে রাজি নন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে কাজের চেষ্টা করা মানেই বড় বিপদে পড়া, এমনকি নির্বাসিত হওয়ার আশঙ্কা।’
এই পরিস্থিতি, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের নারসারাওপেতের একটি কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া মঞ্জুষা নুথি বলেন, ‘আমার বাবা একজন কৃষক, আমি আর তাঁর কাছে টাকা চাইতে পারি না। খুব কষ্ট করে ন্যূনতম খরচে চলার চেষ্টা করি।’
নুথি আগে এফ-১ ভিসায় থাকার কারণে গ্যাস স্টেশনে খণ্ডকালীন কাজ করতেন, সম্প্রতি ব্যাপক অভিযানের কারণে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ব্যাংকঋণ ৩০ লাখ রুপি, আর এই পরিস্থিতিতে কীভাবে তা পরিশোধ করব, জানি না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com