উত্তর কোরিয়া, সরকারি নাম “গণতান্ত্রিক জনগণ共和国 কোরিয়া” (Democratic People’s Republic of Korea – DPRK), পূর্ব এশিয়ার একটি রহস্যময় ও বিতর্কিত দেশ। এটি কোরিয়ান উপদ্বীপের উত্তর অংশে অবস্থিত এবং দক্ষিণে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে সীমান্ত ভাগ করে। পূর্ব দিকে জাপান সাগর এবং পশ্চিম দিকে হলুদ সাগর অবস্থিত।
উত্তর কোরিয়ার মোট আয়তন ১,২০,৫৩৮ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ২.৬ কোটি। রাজধানী ও বৃহত্তম শহর পিয়ংইয়াং। দেশটির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে হ্যামহাং, চংজিন, এবং নাজিন।
১৯১০ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত কোরিয়া ছিল জাপানের উপনিবেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোরিয়া দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—উত্তর অংশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে এবং দক্ষিণ অংশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে চলে যায়। ১৯৪৮ সালে কিম ইল-সাং উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা নেতা হিসেবে ক্ষমতায় আসেন এবং ১৯৫০-৫৩ সালের কোরিয়ান যুদ্ধের পর উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বিভাজন স্থায়ী হয়ে যায়।
উত্তর কোরিয়া একটি একদলীয় কমিউনিস্ট শাসনব্যবস্থার দেশ, যেখানে কিম পরিবারের নেতৃত্ব অটল রয়েছে। বর্তমান নেতা কিম জং-উন ২০১১ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন।
উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি মূলত রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত এবং কৃষি, ভারী শিল্প ও সামরিক খাতের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির অর্থনীতি সংকটপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং দেশটি বিশ্বের অন্যতম পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র। ২০০৬ সাল থেকে এটি একাধিক পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
উত্তর কোরিয়ার জনগণের জীবনযাত্রা কঠোর নিয়ন্ত্রণের আওতায় থাকে। সাধারণ জনগণের জন্য ইন্টারনেট ও আন্তর্জাতিক সংবাদপত্র নিষিদ্ধ, এবং ভ্রমণের স্বাধীনতা সীমিত। খাদ্য সংকট এবং দারিদ্র্য দেশটির অন্যতম প্রধান সমস্যা।
উত্তর কোরিয়া সাধারণত চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বেশ উত্তপ্ত। এটি বিভিন্ন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনায় বসেছে, তবে এখনও অনেক আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার পর্যটন শিল্প সীমিত হলেও কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
উত্তর কোরিয়া একটি অনন্য ও রহস্যময় দেশ, যেখানে রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলের পাশাপাশি কঠোর নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান। ভবিষ্যতে দেশটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবে এবং রাজনৈতিক পরিকাঠামো কতটা পরিবর্তিত হবে, তা দেখার বিষয়।