বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:১৬ পূর্বাহ্ন

দক্ষিণ কোরিয়া

  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

দক্ষিণ কোরিয়া (দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারিভাবে পরিচিত নাম: দ্য রিপাবলিক অব কোরিয়া) পূর্ব এশিয়ার একটি উন্নত দেশ, যা প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। দেশটি কোরীয় উপদ্বীপের দক্ষিণাংশে অবস্থিত এবং উত্তরে উত্তর কোরিয়ার সাথে সীমান্ত ভাগ করে। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী হলো সিওল, যা বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম ও আধুনিক মহানগরী।

ভূগোল ও জলবায়ু

দক্ষিণ কোরিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান পূর্ব এশিয়ায়, এবং এটি জাপান সাগর ও হলুদ সাগরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। দেশটির মোট আয়তন প্রায় ১,০০,৩৬৩ বর্গকিলোমিটার। দেশটি প্রধানত পাহাড়ি অঞ্চল নিয়ে গঠিত এবং এখানে কয়েকটি বড় সমতলভূমিও রয়েছে, যা কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার জলবায়ু চারটি প্রধান ঋতুর মধ্যে বিভক্ত:

  • বসন্ত (মার্চ-মে) – হালকা ও মনোরম আবহাওয়া।
  • গ্রীষ্ম (জুন-আগস্ট) – উষ্ণ ও আর্দ্র, কখনও কখনও বৃষ্টিপাত হয়।
  • শরৎ (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) – মনোরম তাপমাত্রা এবং প্রকৃতি রঙিন হয়ে ওঠে।
  • শীত (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) – শীতল ও তুষারপাতপূর্ণ।

ইতিহাস ও সংস্কৃতি

দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। এটি গোগুরিয়ো, বাকজে ও শিলা নামক তিনটি রাজ্যের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল। ১৯১০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দেশটি জাপানের উপনিবেশ ছিল, এবং ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি স্বাধীনতা লাভ করে। তবে, ১৯৫০-১৯৫৩ সালে কোরিয়ান যুদ্ধের ফলে দেশটি উত্তর ও দক্ষিণ ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।

দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়। এখানে বৌদ্ধ ও কনফুসিয়ান ঐতিহ্যের গভীর প্রভাব রয়েছে। তায়ekwondo নামক কোরিয়ান মার্শাল আর্ট বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়।

এছাড়াও, কোরিয়ান খাবার যেমন কিমচি, বুলগোগি, ত্তবোক্কি ও রাময়ন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়।

অর্থনীতি ও প্রযুক্তি

দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অর্থনীতির দেশ। দেশটি প্রযুক্তি ও অটোমোবাইল শিল্পে শীর্ষস্থান দখল করেছে। বিশ্বখ্যাত কোরিয়ান কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • স্যামসাং (Samsung) – স্মার্টফোন ও ইলেকট্রনিকস।
  • এলজি (LG) – ইলেকট্রনিকস ও গৃহস্থালী সামগ্রী।
  • হুন্ডাই ও কিয়া (Hyundai & Kia) – বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি।

দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হলো রফতানি শিল্প, অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিকস, এবং বিনোদন খাত

কে-পপ ও বিনোদন

বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনোদন শিল্প বিশেষভাবে কে-পপ (K-pop), কে-ড্রামা এবং কোরিয়ান সিনেমার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

  • বিটিএস (BTS), ব্ল্যাকপিংক (BLACKPINK), এক্সো (EXO) এবং টোয়াইস (TWICE)-এর মতো কে-পপ ব্যান্ড বিশ্বব্যাপী সংগীতপ্রেমীদের মন জয় করেছে।
  • জনপ্রিয় কোরিয়ান নাটক যেমন Crash Landing on You, Squid Game, Vincenzo, Goblin ইত্যাদি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত হয়েছে।

পর্যটন ও দর্শনীয় স্থান

দক্ষিণ কোরিয়ায় রয়েছে অসংখ্য পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান:

  • সিওল (Seoul) – আধুনিকতার সাথে ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ, যেখানে রয়েছে গেয়ংবকগুং প্রাসাদ, নামসান টাওয়ার ও মায়ংডং মার্কেট
  • বুসান (Busan) – দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বন্দর শহর এবং সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত।
  • জেজু দ্বীপ (Jeju Island) – প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আগ্নেয়গিরির জন্য প্রসিদ্ধ।
  • গ্যাংওন প্রদেশ (Gangwon Province) – ২০১৮ সালের শীতকালীন অলিম্পিকের আয়োজক এবং স্কিইংয়ের জন্য জনপ্রিয়।

শিক্ষা ও জীবনধারা

দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বে অন্যতম সেরা। এখানে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটি রয়েছে।

কোরিয়ানরা অত্যন্ত পরিশ্রমী, এবং তারা প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাত্রার সাথে অভ্যস্ত। দেশটিতে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, উচ্চমানের স্বাস্থ্যসেবা ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে।

উপসংহার

দক্ষিণ কোরিয়া একটি ব্যস্ত, প্রযুক্তিনির্ভর এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ। এটি তার অর্থনীতি, প্রযুক্তি, বিনোদন ও ঐতিহ্যের কারণে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার চমৎকার সংমিশ্রণে গঠিত এই দেশটি আগামী দিনে আরও উন্নতির শিখরে পৌঁছাবে বলে আশা করা যায়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com