সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে প্রয়াত রতন টাটার উইল, যার পরেই অনেক তথ্যও সামনে এসেছে। সেই উইল প্রকাশ্যে আসতেই সামনে এসেছে এক চমকপ্রদ ঘটনা। দেখা গিয়েছে সেই উইল অনুসারে প্রায় ৫০০ কোটির বেশি মূল্যের সম্পত্তি রতন টাটা এমন একজনকে দিয়ে গিয়েছেন যার কথাও কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। সূত্রের খবর রহস্যময় সেই ব্যক্তির সঙ্গে রতন টাটা সম্পর্ক ৬০ বছরের বেশি পুরনো। যদিও এই বিষয়ে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশিত হয়নি। জানেন কে সেই রহস্যময় ব্যক্তি? রতন টাটার সঙ্গে তাঁর কীসের সম্পর্ক ছিল?
রতন টাটার উইলে ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি যাকে দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি হলেন মোহিনী মোহন দত্ত। জামশেদপুরের বাসিন্দা মোহিনী মোহন দত্ত বাস্তবে ভ্রমণ ব্যবসায়ী। উইলটি দেখার পর টাটা পরিবারের সদস্যরাও বেশ হতবাক হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, ট্রাভেল এজেন্সি স্ট্যালিয়নের মালিক হলেন দত্ত এবং তার পরিবার। ২০১৩ সালে তাজ গ্রুপ অফ হোটেলের অংশ তাজ সার্ভিসেসের সঙ্গে একীভূত হয় এই স্ট্যালিয়ন।এর আগে থমাস কুকের পূর্বের সহযোগী প্রতিষ্ঠান টিসি ট্রাভেল সার্ভিসেসের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন মোহিনী।
কী ভাবে পরিচয় রতন-মোহিনীর?
রতন টাটার ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, মোহিনী রতন টাটার দীর্ঘদিনের সহযোগী ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা এমনকি ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও মোহিনীকে চেনেন। ইকোনমিক টাইমসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, মোহিনী দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। উইলের নির্বাহক, রতন টাটার সৎ বোন শিরিন এবং দিনা জেজিভয়ও কোনও মন্তব্য করেননি। দারিয়াস খাম্বাট্টাও কোনও মন্তব্য করেননি। উইলের চতুর্থ নির্বাহক, মেহলি মিস্ত্রি, ইকোনমিক টাইমসকে এই বিষয়ে কিছু জানাননি। সূত্রের খবর মোহিনী মোহন দত্তের দুই কন্যার মধ্যে একজন ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৯ বছর টাটা ট্রাস্টে কাজ করেছেন। এর আগে তিনি তাজ হোটেলেও কাজ করতেন।
টাটা গ্রুপের সূত্রে খবর মোহিনী টাটা পরিবারের বহুদিনের ঘনিষ্ঠ। ২০২৪ সালের অক্টোবরে রতন টাটার শেষকৃত্যের সময় জানা যায় মোহিনীর সঙ্গে রতন টাটার পরিচয় যখন টাটার বয়স ২৪ বছর তখন থেকে। জামশেদপুরের ডিলার্স হোস্টেলে তার এবং রতন টাটার প্রথম দেখা হয়েছিল। মোহিনী বলেন, “তাঁরা ৬০ বছর ধরে একে অপরকে চেনেন।” ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মুম্বইয়ের এনসিপিএ-তে অনুষ্ঠিত হওয়া আরএনটি জয়ন্তী উদযাপনেও মোহিনী আমন্ত্রিত ছিলেন।
রতন টাটার সম্পত্তির মধ্যে কী আছে?
রতন টাটার বেশিরভাগ সম্পদ সমাজ কল্যাণের কাজে দান করা হয়েছে। তাঁর সৎ বোনেরা, তাঁদের অংশ দান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে এই উইল সামনে আসায় টাটা মহলে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। জীবনের শেষদিকে রতন টাটা তাঁর সম্পদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দান করার জন্য দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন – রতন টাটা এন্ডোমেন্ট ফাউন্ডেশন এবং রতন টাটা এন্ডোমেন্ট ট্রাস্ট। বিভিন্ন সূত্র অনুসারে, টাটা গ্রুপের হোল্ডিং কোম্পানি টাটা সন্সে রতন টাটার সরাসরি ০.৮৩ শতাংশ অংশীদারিত্ব ছিল এবং তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৮,০০০ কোটি টাকা।
আর কী আছে টাটার সম্পত্তির মধ্যে?
সূত্র মতে, রতন টাটার সম্পদের পরিমাণ উপরে উল্লিখিত সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি। টাটা সন্সের শেয়ার ছাড়াও, রতন টাটার কাছে ফেরারি এবং মাসেরতি সহ বহু বিলাসবহুল গাড়ির সংগ্রহ রয়েছে। দামি ছবি, বিভিন্ন স্টার্টআপ কোম্পানির শেয়ার এবং অনান্য আরও শেয়ারে বিনিয়োগ রয়েছে। রতন টাটার ব্যক্তিগত বিনিয়োগ তত্ত্বাবধানকারী রতন টাটা অ্যাসোসিয়েটস, FY23 পর্যন্ত ১৮৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, কিন্তু এই বিনিয়োগগুলি তাদের মূল অধিগ্রহণ খরচে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বিনিইয়োগের সময় থেকে এই সম্পদের বর্তমান বাজার মূল্য বহুগুণ বেড়েও গিয়ে থাকতে পারে। রতন টাটার সম্পদ কেবল তখনই বণ্টন করা সম্ভম যদি উইলটি শীঘ্রই প্রোবেটের জন্য জমা দেওয়া হয় এবং হাই কোর্ট কর্তৃক সেই সমন্ধে শংসা দেয়। আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।