মালয়েশিয়ার রেস্টুরেন্ট মালিকদের সংগঠনগুলো দেশটির সরকারকে অনুরোধ করেছে যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এবং সম্প্রতি ভারত থেকে আগত অভিবাসীদের সার্ভিস সেক্টরের আওতায় রেস্টুরেন্টে নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়। বর্তমানে দেশটিতে নতুন বিদেশি কর্মী নিয়োগের নিষেধাজ্ঞার কারণে ২৫ হাজারেরও বেশি রেস্টুরেন্টে কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই মালয়েশিয়ার কৃষি, নির্মাণ, কারখানা এবং সেবাখাত বিদেশি শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীল। মূলত বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমার থেকে আসা অভিবাসীরাই এই খাতের অন্যতম চালিকাশক্তি। তবে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে সরকার বিদেশি শ্রমিকদের উপর নির্ভরতা কমাতে এবং স্থানীয়দের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে দেয়।
ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে মালয়েশিয়ার মুসলিম রেস্টুরেন্ট মালিকদের সংগঠন (পিআরইএসএমএ) এবং মালয়েশিয়ান ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট মালিকদের সংগঠন (পিআরআইএমএএস) এর উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, কর্মী সংকটের কারণে অনেক রেস্তোরাঁ তাদের সেবা সীমিত করতে বাধ্য হয়েছে।
এদিকে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, পেরেশাতুয়ান পেঙ্গুসহ রেস্তোরান মুসলিম মালয়েশিয়া (পিআরইএসএমএ) -এর প্রেসিডেন্ট জাওয়াহির আলী তাইব খানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘যদি সরকার অনুমতি দেয়, আমরা বৈধ কাগজপত্রধারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়োগ দিতে প্রস্তুত। তবে, তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে এখনও কোনও স্পষ্ট সরকারি নীতি নেই।’
পেরেশাতুয়ান পেঙ্গুসহ রেস্তোরান মুসলিম মালয়েশিয়া (পিআরইএসএমএ) মালয়েশিয়ার ১২ হাজারের বেশি ‘মামাক’ রেস্টুরেন্টের প্রতিনিধিত্ব করে। এই রেস্টুরেন্টগুলো সাশ্রয়ী মূল্যের জনপ্রিয় স্থানীয় খাবার সরবরাহ করে এবং বেশিরভাগই ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় মালয়েশিয়ানরা সাধারণত এই চাকরিগুলো নিতে আগ্রহী নয়, যদিও এখানে বিনামূল্যে খাবার, আবাসন সুবিধা এবং প্রতিযোগিতামূলক বেতন প্রদান করা হয়।’
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট ও ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে জানিয়েছে, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ায় নথিভুক্ত বিদেশি কর্মীর সংখ্যা ২.৪৭ মিলিয়ন, যা দেশটির মোট শ্রমশক্তির ১৫ শতাংশ। দেশটির কর্মসংস্থানের সীমা অতিক্রম করায় সরকার নতুন শ্রমিক গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
অন্যদিকে, দেশটির অভিবাসী শ্রমিক সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক সরবরাহে দুর্নীতি এবং ঋণের দায়ে দাসত্বের অভিযোগে সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করা হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-এর তথ্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়ায় ১ লাখ ৯২ হাজার শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী রয়েছেন, যাদের ৬০ শতাংশই রোহিঙ্গা। তবে বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করা হয়, কারণ অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে মালয়েশিয়ায় এসেছে। জাওয়াহির আলী তাইব খান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে অভিবাসী কর্মীদের বয়সসীমা ৪৫ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কারণ, অনেক অভিজ্ঞ কর্মী এখনও কাজ করতে সক্ষম এবং আগ্রহী।
শুধু রেস্টুরেন্ট নয়, মালয়েশিয়ার ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও এই সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। টেক্সটাইল দোকান, স্বর্ণকারের দোকান, সেলুন ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের ব্যবসাতেও শ্রমিক সংকটের প্রভাব পড়েছে। সিতিয়াওয়ান, পেরাকের কমিউনিটি নেতা গণেশান শোনমুগাম বলেন, ‘মালয়েশিয়ার ভারতীয় মালিকানাধীন শিল্পগুলোর জন্যও বিদেশি শ্রমিকদের সহায়তা দরকার, বিশেষত ভারতের কর্মীদের।’
মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমাদ জাহিদ হামিদি বলেন, “সরকার এই সমস্যাটি সম্পর্কে সচেতন এবং বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার মালিকদের অনুরোধ পর্যালোচনা করছে যাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগের নীতি শিথিল করা যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করি শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে, কারণ রেস্তোরাঁগুলো মারাত্মক কর্মী সংকটের সম্মুখীন।’
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট আরো জানিয়েছে, তবে, এই প্রস্তাবের বিরোধিতাও দেখা যাচ্ছে। অনেক মালয়েশিয়ান নাগরিক অনলাইনে মন্তব্য করেছেন যে, রোহিঙ্গাদের চাকরি দেওয়া হলে জননিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধির সমস্যা তৈরি হতে পারে।একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী আজমান রহিম মন্তব্য করেছেন, “এটি আরও বেশি রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়ায় আসতে উৎসাহিত করবে … শিগগিরই আমাদের আরও বেশি শরণার্থীর দায়িত্ব নিতে হবে।’