শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৪৪ অপরাহ্ন

হার্ভার্ডের এমবিএ–পড়ুয়ারা চাকরি পাচ্ছেন না, বদলে যাচ্ছে বাজার

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫

কয়েক দশক ধরে আইভি লিগ (ব্রাউন, কলাম্বিয়া, কর্নেল, ডার্টমাউথ, হার্ভার্ড, প্রিন্সটন, পেনসিলভানিয়া ও ইয়েল) থেকে এমবিএ করা মানেই চাকরির বাজারে সোনালি টিকিট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চাকরি মেলে যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায়। উচ্চশিক্ষার এই আট প্রতিষ্ঠানের অন্যতম সেরা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ফরচুনের করা বিজনেস স্কুলের একটি তালিকায় ৯৮টি মার্কিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেরাদের মধ্যে সেরা হার্ভার্ড। তবে ২০২৪ সালে এসে হার্ভার্ডের এমবিএ আর কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। কারণ, সম্প্রতি দেখা গেছে, হার্ভার্ডের স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্বের হার দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। বিশ্বখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ‘ফোর্বস’ এমন একটি প্রতিবেদন ছাপিয়েছে।

সবার ধারণা, বড় বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করলে সহজে মেলে চাকরি। হার্ভার্ডের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক প্রতিবেদন তা বলছে না। এক প্রতিবেদনে ‘ফোর্বস’ জানিয়েছে, হার্ভার্ড থেকে গত বছর এমবিএ ডিগ্রি নেওয়া ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনো কোনো চাকরি পাননি। এসব শিক্ষার্থী তিন মাস আগে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। আর ২০২২ সালের স্প্রিং সেমিস্টারের এমবিএ করা ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনো চাকরি পাননি। হার্ভার্ডের বিজনেসের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে আগে বলা হতো ‘আমাদের চাকরি নেই নয়, আমাদের চাকরির প্রয়োজন নেই’—এটি বদলানোর সময় কি এসে গেল?

ফোর্বস বলছে, এমবিএ–পড়ুয়াদের কম চাকরি পাওয়া সমস্যাটির অন্যতম একটি কারণ হলো কর্মী ব্যবস্থাপনা বা কর্মের ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন ঘটে যাওয়া। করোনা মহামারির পর অটোমেশন শুরু হওয়া, হোম অফিস ও গিগ কর্মসংস্থান মডেলের মতো প্রবণতাগুলো বেড়ে গেছে।

তবে পরিসংখ্যান সব সময় সঠিত তথ্য না–ও দিতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি সত্যি না–ও হতে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, হার্ভার্ডের শিক্ষার্থীরা চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করেন না, তাঁরা চাকরির বাজারও তৈরি করেন। অনেক ক্ষেত্রে এই উদ্যোগী স্নাতকেরা নতুন নতুন উদ্যোগ ও ব্যবসায় যুক্ত হন, বিনিয়োগ খোঁজেন এবং তাঁদের স্বপ্নের পেছনে ছোটেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা আসলে উদ্যোক্তা এবং অনেকেই হয়ে যাচ্ছেন অর্থনীতির স্রষ্টা।

শুধু হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল (এইচবিএস) থেকে এমবিএ করা শিক্ষার্থীরাই নন, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এমবিএ শেষ করা চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীরাও হিমশিম খাচ্ছেন চাকরি পেতে।

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট এবং অ্যালামনাই রিলেশনস কর্মকর্তা ক্রিস্টেন ফিটজপ্যাটরিক বলেন, ‘আমরাও চাকরির বাজারের খারাপ অবস্থার বাইরে নই। হার্ভার্ডে যাওয়া মানেই চাকরির বাজারে কোনো পার্থক্য গড়ে দেবে না।’ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, যাঁরা চাকরির বাজারে নিজেদের প্রত্যাশা বা চাহিদা কমিয়েছেন, তাঁরা চাকরি পেয়ে গেছেন। কিন্তু যাঁদের প্রত্যাশা বেশি, তাঁরা এখনো বেকারই রয়ে গেছেন। তবে এখান থেকে যাঁরা পাস করেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই উচ্চপদস্থ পরিবার থেকে এসেছেন। ফলে কয়েক মাস বেকার থাকলেও তাঁদের যে খুব বেশি সমস্যা হবে, তা বলা যায় না। আর চাকরি এখন পাননি মানে যে পরেও আর পাবেন না, এমনটি নয়।

চাকরি পাওয়া কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো চাকরিদাতারা নতুন উপায়ে লোক খুঁজে নিচ্ছেন। মানে নতুন বাজারের উত্থান হচ্ছে। এখন অনেক ক্ষেত্রে বা কখনো কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চাকরির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় না। প্রয়োজন অনুসারে খুঁজে নেওয়া হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ পর্যন্ত চাকরির সুযোগগুলো আগের ঐতিহ্যবাহী আবেদনের পরিবর্তে নেটওয়ার্কিং ও রেফারেলের (অন্যের মাধ্যমে আদিষ্ট হয়ে) মাধ্যমে পূরণ করা হয়। এমবিএ–পড়ুয়ারা ক্যাম্পাস নিয়োগ কর্মসূচির ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল, তাই নতুন এ পরিবর্তনের ধারায় ধাতস্থ হতে পারেননি। আরেকটি কারণ আছে, তা অভ্যন্তরীণভাবে নিয়োগ ও পদোন্নতি।

বিভিন্ন কোম্পানি গত দেড় বছরে নির্বাহী (এক্সিকিউটিভ) পদসহ উচ্চ ব্যবস্থাপনার পদগুলো সংকুচিত করেছে বা বাদ দিয়েছে। এসব কারণেও এমবিএ–পড়ুয়াদের জন্য বাজার উল্লেখযোগ্যভাবে সংকুচিত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে নতুন চাকরি যোগ না হওয়া তো আছেই। আর এমবিএ দক্ষতার প্রয়োজনীয়তার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক সেবা হোল্ডিং সংস্থা জেপি মরগান জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চাকরির বাজার উচ্চমাত্রায় থেকে শেষ হয়েছে। ২ লাখ ৫৬ হাজার নতুন চাকরি এ মাসে যুক্ত হয়েছে। আপাতদৃষ্টে চাকরির বাজার শক্তিশালীই বলে মনে হচ্ছে। ডিসেম্বরে অর্থনীতির অবস্থা ভালোই ছিল। তবে এমবিএ শিক্ষার্থীরা কেন চাকরির বাজারের এমন অস্বস্তিতে পড়লেন, তা জানা নেই।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার কমে আসছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রতিভার ঘাটতিও রয়েছে, পরিস্থিতি আসলে জটিল। প্রযুক্তি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বন্ধ থাকায় চাকরির বাজারে তীব্র প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে অন্যদের তুলনায় শীর্ষ পর্যায়ের এমবিএ স্নাতকদের ওপর প্রভাবটা পড়েছে বেশি।

ফোর্বস বলছে, এমবিএ–পড়ুয়াদের কম চাকরি পাওয়া সমস্যাটির অন্যতম একটি কারণ হলো কর্মী ব্যবস্থাপনা বা কর্মের ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন ঘটে যাওয়া। করোনা মহামারির পর অটোমেশন শুরু হওয়া, হোম অফিস ও গিগ কর্মসংস্থান মডেলের মতো প্রবণতাগুলো বেড়ে গেছে। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিবেচনা করেছে, দুর্বলতার জায়গাগুলোতে মনোনিবেশ করছে এবং সাধারণ ব্যবসায়িক জ্ঞানের চেয়ে সুনির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত দক্ষতার ওপর বেশি জোর দিচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী এমবিএ প্রোগ্রামগুলো যদিও এখনো মূল্যবান, তবু কোম্পানিগুলোর এই নতুন অগ্রাধিকারের সঙ্গে পুরোপুরি খাপ খাওয়াতে পারছে না বা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়তো হচ্ছে না।

আজকের প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে অভিযোজনের যোগ্যতাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যদিও শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, অনেক নিয়োগকর্তা আনুষ্ঠানিক ডিগ্রির চেয়ে দক্ষতাগুলোর ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। জেন–জি চাকরিপ্রার্থী, ব্যবসায়ী এবং ভবিষ্যতের ব্যবস্থাপকদের জন্য কিছু পরামর্শ থাকল, যা তাঁদের ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা বাড়াবে।

ছবি: সংগৃহীত

১. নিজের দক্ষতা বিকাশ করুন

অভিযোজন যোগ্যতা, ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এবং সমস্যা সমাধানের মতো সাধারণ দক্ষতাকে মূল্য দেন নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। এসব গুণ প্রায়ই প্রযুক্তিগত দক্ষতার চেয়ে বেশি কাজের, বিশেষ করে নেতৃত্ব বা কৌশলগত ভূমিকার জন্য।

প্রথম আলো

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com