এ যেন সবুজের বিছানা। সবুজের চাদরে মোড়ানো সমুদ্রের বিশাল চর আর মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ। রূপ বৈচিত্র্য ঘেরা এই স্থানের নাম বাড়বকুণ্ড সমুদ্রসৈকত। চট্টগ্রামে যে কয়েকটি সমুদ্রসৈকত আছে এর মধ্যে সবচেয়ে নির্জন ও প্রশান্তিময় সৈকত বলা হয় এটিকে।
প্রকৃতির স্নিগ্ধতা আর পরম শান্তির এই স্থানটির সৌন্দর্য হয়তো অনেকেরই অজানা। তবে বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্থানটির বিভিন্ন ছবি, ভিডিও পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। নানা কারণে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে সৈকতটি।
অন্যান্য সমুদ্রসৈকতের তুলনায় বাড়বকুণ্ড সমুদ্রসৈকতে সারাবছর মানুষের ভিড় তুলনামূলক কম থাকে। কোলাহলমুক্ত এমন প্রাকৃতিক নির্জন পরিবেশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের যে কোনো স্থান থেকে আপনাকে প্রথমে বাড়বকুণ্ড নামার বাজারে এসে নামতে হবে।
চট্টগ্রাম নগরের অলংকার মোড় থেকে ৮ নং সীতাকুণ্ডগামী লোকাল বাস জনপ্রতি ৩৫ টাকা ভাড়ায় নামিয়ে দেবে বাড়বকুণ্ড নামার বাজার। বাড়বকুণ্ড নামার বাজার হতে ৩ মাইল পশ্বিমে এই সমুদ্রসৈকতের অবস্থান। বাজার থেকে লোকাল সিএনজিতে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায় যেতে পারবেন এখানে। তবে রিজার্ভ নিতে চাইলে ৮০-১০০ টাকা ভাড়া পড়তে পারে কিংবা দরদামের মাধ্যমে ভাড়া কম-বেশি হতে পারে।
শীত ও বর্ষা মৌসুমে বিচিত্র সৌন্দর্য ধারণ করে সমুদ্রসৈকতটি। বর্তমানে শীত মৌসুমে অতিথি পাখির ঝাঁক, সবুজে ঘেরা বিস্তীর্ণ সমুদ্র পাড়, জেলেদের মাছধরার দৃশ্য, সন্ধ্যার পর সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে বাতাসের হু-হু আওয়াজ, সুন্দর আকৃতির ঝাউ বাগানের দৃশ্য, নানা ধরনের পাখির কিচিরমিচির শব্দে মনে হবে এ এক অন্যরকম রূপকথার জগৎ।
বেড়িবাঁধ থেকে দাঁড়িয়ে দেখা সমুদ্রসৈকতের দৃশ্য ছবির মতোই সুন্দর। যত কাছে যাওয়া যায় ততই এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় দর্শনার্থীরা। সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার পথে সারি সারি মাছ ধরার লালবোট, জেলেদের জালবুননের দৃশ্য, কর্মব্যস্ত মাঝি-মাল্লাদের গানের সুর, ফুল-ফলের গাছ, বকের ছোটাছুটি, জোয়ারের সময় সমুদ্রের বিশাল ঢেউ পর্যটকদের অন্যরকম প্রশান্তি এনে দিবে।
বিকেল হলেই এই সমুদ্রে সবুজ ঘাসের চরে অনেক তরুণ ফুটবলসহ নানা খেলাধুলায় মেতে ওঠে। শহুরে যান্ত্রিক জীবনকে ছুটি দিয়ে দূর দূরান্ত থেকে অনেক পর্যটক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে তাঁবুতে রাত্রিযাপনের জন্য ছুটে আসেন এই সমুদ্রসৈকতে।
বর্তমানে কুয়াশার চাদরে মোড়ানো শীতের সকালে সূর্যোদয় আর নরম সূর্যের আলোর নরম স্পর্শ নিতে চাইলে ভ্রমণপিপাসুদের এখানে আসতেই হবে। তাছাড়া সমুদ্রের শান্ত ঢেউয়ের সঙ্গে সূর্যের লুকিয়ে পড়া অর্থাৎ গোধূলি বেলায় সূর্যাস্ত এই সমুদ্র সৈকতের পরিবেশকে আরো রোমাঞ্চকর করে তোলে।