বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৫ অপরাহ্ন

ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নিয়ে বাংলাদেশিদের উদ্বেগের কারণ নেই

  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

গত ১২৮ বছরে আমেরিকায় কোনো প্রেসিডেন্ট এত বড় ম্যান্ডেট পাননি। ইলেকটোরাল, পপুলার ভোট, সাতটি সুইং স্টেট…সবগুলো জায়গায় ডোনাল্ড ট্রাম্প সাফল্য পেয়েছেন। এ জায়গা থেকেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের অভিষেক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

ট্রাম্পের এবারের ম্যান্ডেট খুব স্পষ্ট। দুটি জিনিসের প্রতি ভোটারদের সম্মতির ওপর এত বড় বিজয় এসেছে। একটা হচ্ছে শান্তি। আরেকটা হচ্ছে যুদ্ধ থামানো। জো বাইডেনের সম্মতিতে দুটি যুদ্ধ চলছিল। গাজা যুদ্ধ থামানোতে ট্রাম্প সরাসরি নেতানিয়াহুকে চাপ দিয়েছেন। ফাঁস হয়ে যাওয়া ফোনালাপে তা শোনা গেছে। এটা প্রথম ম্যান্ডেটের প্রতিফলন বলা যায়। ট্রাম্প তাঁর ভাষণে বলেছেন—‘আই ওয়ান্ট টু বি আ পিস বিল্ডার অ্যান্ড স্টপ অল ওয়ার’। এখন দেখার বিষয় ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও তা কতটা কার্যকর হয়।

এখানে বলে রাখা দরকার, বিগত দুটি বিষয়েই বিগত ডেমোক্রেটিক সরকারও বলা শুরু করেছিল। ফলে এটা যে ট্রাম্প সরকারের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছু নয়। কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই যে রিপাবলিকান সরকার বাংলাদেশে একটা নির্বাচিত সরকার দেখতে চাইবে যত দ্রুত সম্ভব।

আরেকটা যে কারণে ট্রাম্প ম্যান্ডেট পেয়েছেন, তা হলো ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’। এই ভাষার মধ্যেই বোঝা যাচ্ছে আমেরিকা এখন আর ‘গ্রেট’ নেই। এর মানে আমেরিকার ডিক্লাইন, মানে ক্ষয় হয়েছে। ভাষণে ট্রাম্প বলেছেন—‘ডিক্লাইন অব আমেরিকা উইল স্টপ টুডে’। আমেরিকার মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা হয়েছে এই যুদ্ধ, বিভিন্ন জায়গায় সামরিক ঘাঁটি চালু রাখতে গিয়ে।

আমেরিকার নিজের ভেতরেই ঘুণ ধরে গেছে। অবকাঠামো খাত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেশের ভেতরে ম্যানুফেকচারিং খাত নেই, চলে গেছে বাইরে। ভাষণে ট্রাম্প স্বাস্থ্য খাতের কথা বলেছেন। এসব জায়গায় ট্রাম্প বড় পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন। সেই দিকে একটা বড় পরিবর্তন হলো আমেরিকার মিত্ররা আর বিনা খরচে কিছু পাবে না। তাদের ব্যয় করতে হবে।

এর মধ্যে আছে ন্যাটো। ইউরোপকে ট্রাম্প বলেছেন, ন্যাটোর খরচে তাদের ব্যয় ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। আমেরিকার ওপর ভরসা করে বছরের পর আর চলা যাবে না। এটা স্পষ্ট বোঝা যায়, ইউরোপ যদি ৫ শতাংশ ব্যয় বাড়ায়, তাহলে তারা আরও সক্রিয় অংশীদার হবে। কেবল আমেরিকার অনুগত হয়ে থাকবে না। এখানে প্রতিরক্ষায় তাদের ক্ষমতা বাড়া মানে আমেরিকার কথার বাইরে নিজেদের মতো সক্রিয় হওয়ার সুযোগ হবে। এর মানে, এই ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’–এর মধ্য দিয়ে পৃথিবী যে আবার মাল্টিপোলার ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে, তা ট্রাম্প গ্রহণ করে নিচ্ছেন।

আমেরিকা যেহেতু এখন আর মহান নেই, তাই এই ক্ষয় থামানো সম্ভব কেবল অংশীদারত্বের মাধ্যমে। এমনই একটা কাঠামো তৈরি করতে চাচ্ছেন তিনি। ইউরোপকে এখন ব্যয় করতে হবে। যা এত দিন তাদের পক্ষ হয়ে আমেরিকা করে আসছিল। এর কিছু নজির দেখা গেছে। ক্ষমতা গ্রহণের পরই ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তহবিল বন্ধ করে দিয়েছেন।

তাঁর দাবি, এখানে আমেরিকা অনেক বেশি ব্যয় করে। অন্যরাও তো উন্নত হয়েছে, তারা দেবে না কেন? ব্যয় বেশি করলে কর্তৃত্বও বেশি থাকবে। মানে চীন তো এখন অনেক ধনী, তারা দেবে না কেন? চীন সেখানে ব্যয় বাড়ালে চীনের কর্তৃত্বও তো বাড়বে। তাহলে পরোক্ষভাবে হলেও তিনি মেনে নিচ্ছেন যে পৃথিবী আবার বহুমাত্রিক হতে যাচ্ছে। এখন এসবের কতটা ঘটবে, তা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে জনগণের ম্যান্ডেট স্পষ্ট। শান্তি ও আমেরিকাকে আবার ‘গ্রেট’ করা।

আর ট্রাম্প ফেরায় অভিবাসন প্রসঙ্গে বোধ হয় বেশি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসা হিস্পানিক অভিবাসন ঠেকানো। হিস্পানিক অভিবাসন বেড়েছে আমেরিকায়। অনেকে মনে করেন, শিগগিরই হয়তো হিস্পানিকরা হবে আমেরিকার বৃহত্তর ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ। ট্রাম্প রীতিমতো ‘বে অব মেক্সিকো’র নাম বদলে ‘বে অব আমেরিকা’ করতে চাচ্ছেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে চাচ্ছেন। বৈধ অভিবাসন বন্ধ করার কথা তিনি বলছেন না। আমেরিকা অভিবাসন ছাড়া টিকতে পারবে না। এই জায়গা থেকে বাংলাদেশের বিশেষ উদ্বেগের কারণ নেই। আমাদের বেশির ভাগই বৈধ অভিবাসন। বৈধ অভিবাসন পদ্ধতি থাকলে অবৈধ অভিবাসন কোনো দেশ ঠেকাতে চাইতেই পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন হওয়ার আগে ও পরে বাংলাদেশকে নিয়ে ট্রাম্পের দুটি টুইট করেছেন। একটা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বিষয়ে। এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। বিগত সরকার ক্ষমতা থাকার সময়েও এ বিষয় আমেরিকার সরকার বিবেচনায় রেখেছিল। আরেকটা বিষয় যা টুইটে আছে, তা হলো যে ট্রাম্প নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে যাচ্ছেন। এটা স্পষ্ট। রিপাবলিকান সরকার বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন চাইবে। ভারতে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত এ কথা আগেই বলেছেন।

ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্ষমতায় থাকলে হয়তো তারা কিছুটা নমনীয় হতেও পারত নির্বাচন করার সময়ের ব্যাপারে। তবে আমেরিকার নতুন প্রশাসন বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন চাইবে।

এখানে বলে রাখা দরকার, বিগত দুটি বিষয়েই বিগত ডেমোক্রেটিক সরকারও বলা শুরু করেছিল। ফলে এটা যে ট্রাম্প সরকারের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছু নয়। কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই যে রিপাবলিকান সরকার বাংলাদেশে একটা নির্বাচিত সরকার দেখতে চাইবে যত দ্রুত সম্ভব।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com