সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:৫৭ অপরাহ্ন

শেখ আকিজ উদ্দিন

  • আপডেট সময় সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫
ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল। ছোট বেলায় বহুবার পড়া এই কথাটি হুবহু ফলে যায় দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আকিজের কথা।
তাদের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। তবে গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দিন আট দশক আগে যখন ব্যবসা শুরু করেছিলেন, তখন তা ছিল বালুকনার মতই।
বাবা মফিজউদ্দিনের ছিল নারকেল ও ধান-চালের ব্যবসা। আকিজের বয়স যখন ১২, বাবা শাসন করলে অভিমানে ১৭ টাকা নিয়ে উঠে পড়েন কলকাতাগামী ট্রেনে। সেখানে রাতে থাকতেন শিয়ালদহ স্টেশনে। সেখানেই শুরু হয় ব্যবসা জীবন। এরপর যতগুলো কাজে হাত দিয়েছেন, ফলিয়েছেন সোনা।
একদিন বড় বাজারে গিয়ে দেখলেন নিলামে কমলালেবু বিক্রি হচ্ছে। আড়াই টাকায় কিনলেন চার টুকরি। প্রথম দিনে লাভ ১০ পয়সা। এক মাস ব্যবসা করে জমাল ৩০০ টাকা। একদিন এক হোটেলমালিক আকিজকে তার হোটেলে নিয়ে গেলে তিনি ছেড়ে দেন কমলালেবুর ব্যবসা।
সে সময় কলকাতায় চার চাকার ঠেলাগাড়িতে এক ধরনের দোকান ছিল বেশ জনপ্রিয়। তাতে সব কিছুর দামই সাড়ে ছয় আনা। এমন একটি দোকান দিলেন আকিজ। এক বছর চলার পর বিনা অনুমতিতে দোকান বসানোয় ধরে নেয় পুলিশ। ৩ দিন জেল খেটে ৫ টাকা জরিমানা দিয়ে ইতি টানেন এই ব্যবসার।
পরে পেশোয়ারি ব্যবসায়ীর সঙ্গে আকিজ চলে যান আফগানিস্তানের পেশোয়ারে। আবার নামেন ফল ব্যবসায়। সাড়ে ৪ হাজার টাকা জমার পর দিল্লি হয়ে ফেরেন কলকাতায়। শুরু হয় সবজির ব্যবসা। ১৯৪৫ সালে আট হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন আকিজ। তিন মাস পর মারা যান বাবা, তার এক বছর পর মা।
বাবার ব্যবসার হাল ধরেন আকিজ। শুরু করেন ‘আকিজ বিড়ি’। দুই বছরের মধ্যে মূলধন দাঁড়ায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
এক শীতের রাতে আগুনে পুড়ে যায় দোকানটি। গ্রামবাসী সেটি নির্মাণ করে দিলে তোলেন নতুন মালামাল।
এরপর কেবল বেড়েছে ব্যবসা। ১৯৫৪ সালেই যশোরের নাভারনে গিয়ে শুরু করেন ধান ব্যবসা। খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের এক কর্মকর্তার উৎসাহে নামেন পাট ব্যবসাতে। ১৯৬২ সালে খুলনার দৌলতপুরে খোলেন পাটের আড়ত। তখন ধান-চালের ব্যবসা বন্ধ করে শুরু করেন ডাল ও গুড়ের কারবার। ১৯৫৬ সালে আকিজ সপরিবারে চলে আসেন ঢাকার সাভারে। স্বাধীনতার পরে কাগজের বিড়ি আনেন আকিজ। ১৯৭৪ সালে আনেন ফিলটার বিড়ি। ১৯৭৬ সালে ঢাকায় ছাড়েন তা।
পরের বছর সরকারের থেকে ৮০ লাখ টাকায় কিনে নেন টঙ্গীর ঢাকা টোব্যাকো ফ্যাক্টরি। বাজার মাত করে তাদের কে-টু ব্র্যান্ড সিগারেট। পরে ৭৫ লাখে কেনেন এশিয়ান টোব্যাকোর কারখানা। যশোরের নাভারনে শুরু করেন জর্দা ফ্যাক্টরি।
১৯৮০ সালে দেন ইটভাটা। ১২টি ট্রাক নিয়ে শুরু করেন পরিবহন ব্যবসা। কেনেন যাত্রীবাহী ও মালবাহী লঞ্চ।
নব্বইয়ের দশকে শুরু হয় ভারী শিল্প। আসতে থাকে সিমেন্ট, সিরামিক, খাদ্যপণ্য, বস্ত্রকল, প্লাস্টিক, পার্টিকেল বোর্ড ব্যবসা।
আকিজ গ্রুপের অধীনে এখন কোম্পানির সংখ্যা ২৬টি। কাজ করেন ৩৫ হাজার কর্মী। ৭৭ বছর বয়সে ২০০৬ সালে সেখ আকিজ উদ্দিন যখন মারা যান, তখন তার ব্যবসা ছিল ৫ হাজার কোটি টাকার। সন্তানেরা সেটাকে উন্নীত করেছেন ১৪ হাজার কোটিতে।
টাকা পয়সা করলেও সাধারণ বেশভুষা ছাড়েননি আকিজ। তার প্রিয় ছিল সাদা পাঞ্জাবি। পরতেন মোটা ফ্রেমের চশমা। চালাতেন ভেসপা নামে মোটর সাইকেল। ছেলে সেখ বশির উদ্দিনের ভাষায়, ‘বাবা ছিলেন ধনী কোম্পানির গরিব মালিক।’
আকিজ উদ্দিনের সন্তান ১৫ জন। ১০ ছেলে ও ৫ মেয়ে। ছেলেরা সবাই যোগ দিয়েছেন ব্যবসায়। এক ছেলে সংসদ সদস্যও।
জাপানের কাছে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকায় তামাক ব্যবসা বেচে আকিজ গ্রুপ ৭২৫ কোটি টাকায় কিনেছে জনতা জুট মিল। মালয়েশিয়ায় তাদের আছে এমডিএফ বোর্ডের কারখানাও।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com