বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৩ পূর্বাহ্ন

অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত জনবলে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দেবে বিমান

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আর প্রায় আড়াই হাজারের বেশি দক্ষ জনবল দিয়ে থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। আগামী ২০২৫ সালের মাঝামাঝি থেকে শেষ সময়ের মধ্যেই স্বপ্নের থার্ড টার্মিনালের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। ধারণা করা হচ্ছে– থার্ড টার্মিনালের পুরোপুরি সেবা চালু হলে এভিয়েশন খাতে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক হাবে পরিণত হবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের থার্ড টার্মিনালের প্রায় ৯৮ থেকে ৯৯ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা একেবারে শেষ মুহূর্তের কিছু কাজ করছি। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে আমরা পুরোপুরিভাবে থার্ড টার্মিনালে যাত্রীসেবা চালু করতে পারবো।

তিনি বলেন, পুরো বিমানবন্দরে আমরা আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে প্রস্তুত। থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দেবে বিমান বাংলাদেশ। আমি মনে করি, তাদেরও সেই সক্ষমতা রয়েছে। আমরা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারবো।

জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের এয়ারপোর্টগুলোর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা প্রদান করে আসছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা প্রদান করে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই এয়ারলাইন্স। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতকল্পে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন থেকে আইএসএজিও (আইএটিএ সেফটি অডিট ফর গ্রাউন্ড অপারেশন) সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে। এছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আইওএসএ (আইএটিএ অপারেশনাল সেফটি অডিট) সার্টিফায়েড এয়ারলাইন্স এবং বিমান ট্রেনিং ডিভিশনের রয়েছে ইউরোপিয়ান ইএএসএ পার্ট-১৪৭ সার্টিফিকেশন; বিমান ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের রয়েছে সিভিল এভিয়েশনের পার্ট-১৪৫ সার্টিফিকেশন; বিমান ক্যাটারিং ডিভিশনের রয়েছে ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট সার্টিফিকেট ফ্রম ইউকেএএস অ্যাক্রেডিটেড আইএসওকিউএআর, ইউকে; বিমানের কার্গো ডিভিশনের রয়েছে আরএ-থ্রি (রেগুলেটেড এজেন্ট থার্ড কান্ট্রি) সার্টিফায়েড ফর কারগো হ্যান্ডলিং এবং এসিসি-থ্রি (এয়ার কারগো অর মেইল ক্যারিয়ার অপারেটিং ইনটু দ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ফ্রম এ থার্ড কান্ট্রি এয়ারপোর্ট) সনদ।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব সার্টিফিকেশনের নিয়মিত অডিট সম্পন্ন করে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। অত্যাবশ্যকীয় সকল মানদণ্ড অনুসরণ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নিরবচ্ছিন্নভাবে উল্লেখিত সার্টিফিকেশনগুলোর অডিট সফলভাবে সম্পন্ন করছে।

সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স শুধু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন ১৭০টি আগমনী ও বহির্গামী যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা প্রদান করছে। যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ছাড়া প্রায় ২০টি কার্গো ফ্লাইটে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা প্রদান করছে। সেই সকল ফ্লাইটগুলো থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সার্ভিস প্রদানের ক্ষেত্রে প্রশংসাও পাচ্ছে।

জানা যায়, গত একবছরে বিমান ১২ মিলিয়নের বেশি ব্যাগেজ হ্যান্ডেলিং দিয়েছে এবং যথাসময়ে ব্যাগেজ বিমানবন্দরের অভ্যন্তরের ব্যাগেজ বেল্টে দেওয়ার হার ছিল ৯০ শতাংশের বেশি। এছাড়াও গত একবছরের বিমান অনুমানিক আড়াই লাখ মেট্রিক টন রফতানি কার্গো এবং প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন আমদানি কার্গো হ্যান্ডেলিং করেছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, থার্ড টারমিনালের হ্যান্ডেলিং কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিমান আরও দেড় হাজারের মতো জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া করছে। বর্তমানে বিমানের গ্রাউন্ড সাপোর্ট দেওয়ার জন্য অত্যাবশ্যকীয় মটরাইজ ইক্যুইপমেন্ট (পুশ কার্ট, জিপিইউ, এয়ার কুলিং ইউনিট, প্যাসেঞ্জার স্টেপ, রেম্প কোচ, ওয়ার কার্ট, ফ্লাশ কার্ট, টো-ট্যাক্টর, অ্যাম্বুলেন্স লিফট, ক্রেন, ট্রান্সপোর্টার, হাই-লোডার, এয়ার স্টার্ট ইউনিট, বেল্ট লোডার ইত্যাদি) রয়েছে ২১৭টি এবং নিকটতম সময়ে আরও শতাধিক ইক্যুইপমেন্ট সংযোজিত হতে যাচ্ছে। এসব ইক্যুইপমেন্টের মূল্য শত শত কোটি টাকা। থার্ড টার্মিনালে বোর্ডিং ব্রিজের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং বিল্ট ইন ইলেক্ট্রিসিটি ও এয়ার কুলিং সিস্টেম থাকায় বিমানের প্যাসেঞ্জার স্টেপ, গ্রাউন্ড পাওয়ার ইউনিট ও এয়ার কুলিং ইউনিটের ব্যবহার কমে যাবে।

তিনি বলেন, গ্রাউন্ড হান্ডলিংয়ে প্যাসেঞ্জারদের ব্যাগেজ ও কার্গো এয়ারক্রাফট থেকে টারমিনালে আনা নেওয়ার জন্য বিমানের রয়েছে প্রায় ১১শ নন–মটরাইজড ইক্যুইপমেন্ট (যেমন ট্রলি, ডলি, প্যালেট, ইউএলডি ইত্যাদি)। নিকট ভবিষ্যতে আরও তিন শতাধিক নন–মটরাইজড ইক্যুইপমেন্ট কেনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এছাড়া কার্গো বিভাগের নিজস্ব হ্যান্ডেলিং ইক্যুইপমেন্ট রয়েছে ৪শ’র বেশি।

বোসরা ইসলাম বলেন, বিগত বছরগুলোতে জাইকা বিমানের প্রায় ১২০০ গ্রাউন্ড স্টাফের বিশেষ গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সংক্রান্ত ট্রেনিং দিয়েছে। এছাড়া বিমান ট্রেনিং সেন্টার থেকে আরও ১৪০০ জন গ্রাউন্ড স্টাফকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

বিমানের কর্মকর্তারা বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল ও অত্যাধুনিক ইক্যুইপমেন্টের মাধ্যমে ফ্লাইটগুলো সেবা দিয়ে আসছে এবং বিদেশি মুদ্রা অর্জন করছে।

যাত্রী হয়রানি বন্ধে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রয়েছে জিরো টলারেন্স নীতি। কারও বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ পেলেই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরে লাগেজ হারিয়ে ফেললে বা অন্য কোনও অভিযোগ থাকলে বিমানের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডে যোগাযোগ করতে পারছেন যাত্রীরা। এছাড়া বিমান কল সেন্টার ১৩৬৩৬-এ কল করে বাসায় বসেও সেবা নেওয়া যাচ্ছে।

কর্মকর্তারা বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের বর্তমান সক্ষমতা থার্ড টার্মিনালে আরও বেশি বাড়বে। কেননা ১ নম্বর এবং ২ নম্বর টার্মিনালের স্থানের অপ্রতুলতা এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অভাব থার্ড টার্মিনালে থাকবে না। সেক্ষেত্রে বর্তমানে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে বিমান যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে তা অনেকাংশে কমে যাবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com