প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান হিসেবে সাউথ আফ্রিকা বা দক্ষিণ আফ্রিকার সুনাম বিশ্বজুড়েই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অ্যাডভেঞ্চার উপভোগ করতে দারুণ এক গন্তব্য হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। তিনদিকেই সাগর দ্বারা বেষ্টিত এই দেশের ৩ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত উপকূলীয় এলাকা।
দক্ষিণ আফ্রিকায় গেলে আপনি দেখতে পাবেন গভীর নীল সমুদ্রের একেবারে তলদেশ থেকে উঠে আসা হাঙরদের। বৈচিত্র্যে ভরপুর এই দেশে আরও আছে- দুর্দান্ত সব ন্যাচারাল রিসোর্ট, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতিতে ভরপুর শহরসমূহ, আকর্ষণীয় আঙুর বাগান, আরও আছে দারুণ সব সমুদ্রসৈকত।
আঙুর চাষের জন্য খুবই উপযোগী আবহাওয়া ও মাটি আছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। এ কারণেই এটি বিশ্বের প্রথম সারির একটি মদ উৎপাদনকারী দেশ। আগুলহাস উপকূলীয় এলাকা থেকে অরেঞ্জ রিভার ভ্যালি সর্বত্রই দেখা মিলবে চমৎকার সব আঙুর বাগানের।
বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল ও জৌলুসপূর্ণ সাফারি ক্যাম্পগুলোর অবস্থান দক্ষিণ আফ্রিকায়। ন্যাশনাল পার্ক ও প্রাইভেট ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারিগুলোর একটু বাইরে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন ও পরিবেশ সচেতন লজ। তাঁবু খাটানো ক্যাম্পগুলো নির্জন ও পর্যটকবান্ধব। তাই এসব জায়গায় আপনি পাবেন অত্যধিক সেবা ও আতিথেয়তা।
প্রকৃতির একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সুরক্ষিত এসব লজ হলো আধুনিক সুবিধাদির গ্রাম্য সংস্করণ, বহুমাত্রিক সংস্কৃতির বুশ ডিনার ও আরামদায়ক স্পা ট্রিটমেন্টের এক সমন্বয়। দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বিচিত্র বন্য জীবনের মধ্যে বৃহৎ পাঁচটি (সিংহ, লোপার্ড, হাতি, গণ্ডার ও মহিষ) পাওয়া যায় এখানে। এছাড়া এই অঞ্চলে আছে বিপুলসংখ্যক নজরকাড়া উদ্ভিদ।
আপনি কি কখনো প্রেসিডেন্টের মতো বসবাস করতে চেয়েছেন? জবাবটা হ্যাঁ-সূচক হলে স্যাংচুয়ারি ম্যান্ডেলা হোটেল হলো আপনার জন্য সঠিক জায়গা। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার জোহানেসবার্গস্থ বাসবভনকে সম্প্রতি একজাতীয় বুটিক হোটেলে রূপ দেওয়া হয়েছে।
২৭ বছরের কারাবাস শেষে নেলসন ম্যান্ডেলা প্রথমে এখানেই বসবাস করেছিলেন। ‘প্লেস অব রিফ্লেকশ’ নামে পরিচিত স্যাংচুয়ারি ম্যান্ডেলা হোটেলের নয়টি রুমই কিংবদন্তি এই নেতার জীবনকে স্মরণ করে। এখানে আছে অভিজাত বাগানসমূহ ও একটি রেস্টুরেন্ট যেটির মেন্যুগুলেতে ম্যান্ডেলার পছন্দের প্রতিফলন আছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার নয়নাভিরাম উপকূলীয় এলাকা ও দৃশ্যমান দ্বীপগুলোকে আবিষ্কার করার জন্য একটি বিলাসবহুল ইয়টের চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে? এ দেশের সমুদ্র উপকূলে আপনি আপনার সুবিধামতো দিন অথবা রাতের চুক্তিতে ইয়ট রিজার্ভ করতে পারবেন।
এ এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। সকালে এককাপ সুস্বাদু কফির সাথে একটানা আটলান্টিক মহাসাগরের ৩৬০ ডিগ্রি দৃশ্যাবলী অবলোকন, চাঁদের আলোয় ঝলমলে সাগরের পানি দেখতে দেখতে ডিনার- সবকিছুর নির্যাস পাবেন দক্ষিণ আফ্রিকান ইয়টে।
আপনি যদি সঠিক সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান ও বিস্ময়কর কিছু উপভোগ করতে চান তাহলে এই দেশের বিলাসবহুল ট্রেনগুলো আপনার প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে যাবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনটি জনপ্রিয় বিলাসবহুল ট্রেন আছে- দ্য ব্লু ট্রেন, রোভোস রেল ও শোঙ্গোলোলা এক্সপ্রেস।
এসব ট্রেনের আভিজাত্য বুঝতে পারবেন সেগুলোর চোখ জুড়ানো আভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা, ভেতরের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, চমকপ্রদ সব খাবার-দাবার ও পরম যত্নে সাজানো স্যুইটগুলো থেকে। চাইলে এসব ট্রেনে আপনি ব্যক্তিগত কর্মচারীও রাখতে পারবেন।
এর সঙ্গে আপনার প্রতিটি প্রয়োজন মেটানোর জন্য সদা প্রস্তুত কর্মীবাহিনী তো আছেই। এসব ট্রেনে ভ্রমণকালে পর্যটকরা ভিন্ন স্বাদের আরাম-আয়েশ তো পাবেনই, এর সঙ্গে দেখবেন বিস্ময়কর সব দৃশ্যাবলী। বিখ্যাত সব আকর্ষণীয় জায়গায় থামানোর পাশাপাশি এই ট্রেন ভ্রমণ আপনাকে ভিন্ন স্বাদের দক্ষিণ আফ্রিকান অভিজ্ঞতা উপহার দেবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণে গিয়ে সাদে থাকুন কয়েকদিন। তালে রাজকীয় অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন। পুরো দক্ষিণ আফ্রিকায় আছে অসংখ্য প্রাসাদ, যেগুলোর আছে চমৎকার ইতিহাস। এসব ঐতিহাসিক স্থাপনায় এখন আছে আবাসন ও খাওয়া-দাওয়ার খুবই ভালো ব্যবস্থা। আপনার ভ্রমণকে আরামদায়ক, রাজকীয় আর অভিজাত করতে চাইলে আরও যেতে পারেন-
১. কনরাড ক্যাসল, নিসনা, ওয়েস্টার্ন কেপ,
২. ক্যামলট ক্যাসল, হিলক্রেস্ট, কাওয়াজুলু নাটাল,
৩. ক্যাসল ইন ক্লারেন্স, অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট,
৪. ডেসটিনি ক্যাসল, ক্লারেন্স, অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট ও
৫. ফ্লাইক্যাচার ক্যাসল, ড্রাকোনসবার্গ।