সড়ক পথে ছেঁড়া দ্বীপ থেকে বাংলাবান্ধার দূরত্ব প্রায় ৭৮০ কিলোমিটার। বিভিন্ন পথ ঘুরলে তা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় এক হাজার কিলোমিটারে। এই দীর্ঘ পথ হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন জাফর সাদেক। মূলত নিরাপদ সড়ক বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপ থেকে তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা পর্যন্ত হেঁটে ভ্রমণ করেন তিনি।
রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা জাফর সাদেক নেশায় একজন অভিযাত্রী। তিনি সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতে অভিযানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই পদযাত্রা করছেন। ইতিমধ্যে তিনি ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বত এলব্রুস এবং আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমানজারোসহ হিমালয়ের বেশ কিছু শৃঙ্গে অভিযান করেছেন।
জাফর সাদেক
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ১৬.১ কিলোমিটার সমুদ্র পথ সাঁতরে পাড়ি দেওয়ার মাধ্যমে পদযাত্রা অভিযানের শুরু করেন জাফর। আজ বিকেলে বাংলাবান্ধা পৌঁছাতে তাঁর সময় লেগেছে ২১ দিন। এ সময় পাড়ি দিয়েছেন প্রায় এক হাজার কিলোমিটার পথ। এ সময় তিনি পাড় হয়েছেন ১৩টি জেলা।
জাফর সাদেক
প্রথম দিন ছেঁড়া দ্বীপ থেকে টেকনাফের শাহপরী দ্বীপ পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার পথ হাঁটা এবং সাঁতারের মাধ্যমে পাড়ি দিয়ে এক রাত সেন্টমার্টিনে বিশ্রাম নেন জাফর। ছুটির দিনগুলো কাজে লাগিয়ে ১১ দিনে ঢাকার আবদুল্লাপুর পৌঁছান তিনি। রোজা, তাপপ্রবাহ বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে কয়েক মাস বিরতি দিতে হয় এ যাত্রায়। পরে গত ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে পুনরায় পদযাত্রা শুরু করে ১০ দিনে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বাংলাবান্ধা পৌঁছান ৩০ ডিসেম্বর।
জাফর সাদেক
এই জনবহুল দেশে মহাসড়কগুলো যেন এক মরণফাঁদ। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। এই দীর্ঘ পদযাত্রায় মহাসড়কের বিশৃঙ্খলা নিয়ে নানান শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। জাফর জানিয়েছেন, মহাসড়কের পাশে সার্ভিস লেন থাকলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এতে স্থানীয় মানুষের চলাচলের সুবিধার সঙ্গে মহাসড়ক থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণও সম্ভব হবে।
জাফর সাদেক
দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি বলে মনে করেন জাফর। তিনি জানান, সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য অনেক কারণ আছে। সড়ক-মহাসড়ক পরিকল্পনাহীনভাবে নির্মাণ তার মধ্যে একটি। এ ছাড়া নির্দিষ্ট লেন ধরে গাড়ি না চালানো, রাস্তার বিপজ্জনক বাঁক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি ইত্যাদি অনেক কিছুই দুর্ঘটনার কারণ। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যেভাবে দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে তা যদি দ্রুত রোধ করার ব্যাপারে বাস্তবমুখী ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়, সেটি মহামারি আকারে দেখা দেবে।