১৫-২০ বছর আগে যখন এখনকার মতো মোবাইল-ক্যামেরা ছিল না, তখন ছবি তুলতে হলে স্টুডিওতে যেতে হতো। আর স্টুডিওতে ছবি তোলার ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে বিভিন্ন দেশের কত সুন্দর ছবি থাকত, দেখলেই মনে হতো যদি একবার যেতে পারতাম! সিডনির অপেরা হাউসের ছবি এমনই এক বিখ্যাত ছবি। এটা প্রায় বেশিরভাগ স্টুডিওতে ব্যবহার করা হতো। আমার মনে হয় আপনাদেরও অনেকের এমন মনে হতে পারে। চলুন তাহলে আমার গল্পের মাধ্যমে আপনাদের নিয়ে যাই সিডনিতে। সিডনি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের রাজধানী। প্রায় ৫০ লাখ মানুষের বসবাস এই সিডনিতে।
সিডনি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন এবং বড় শহর। অনেক ব্যয়বহুল শহর। প্রযুক্তির শহরও বলা চলে সিডনিকে। অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় কোম্পানির প্রধান অফিস সিডনিতে। বিশাল বিল্ডিং দেখলেই বোঝা যায় সিডনি একটা ব্যবসায়িক শহর। মনে হচ্ছিল যেন আমি নিউইয়র্কের রাস্তা ধরে হাঁটছি। বহুমুখী সংস্কৃতির শহর সিডনি। একদিকে চায়না মার্কেট, হাঁটলে মনে হবে চীন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে হাঁটলে মনে হবে ইউরোপের রাস্তায় ঘুরছেন অথবা কখনও ভিয়েতনাম গিয়ে থাকলে মনে হবে ভিয়েতনামিজ ভাষায় কেউ ডাকছে, আবার এমনও হতে পারে বাংলায় কেউ বলছে, ‘কিরে বন্ধু, কেমন আছিস?’ বহু দেশ, বহু ভাষার মানুষ সিডনিতে মিলেমিশে থাকে।
এ এক অদ্ভুত উদাহরণ সহনশীলতার। জ্ঞানের শহর সিডনি। মানুষ যখনই ভ্রমণ করে বাসে কিংবা ট্রেনে, তখনই অনেকেই বই পড়তে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে যদি কখনও মনে হয় বই পড়বেন, দেখবেন রাস্তায় ফ্রি গ্রন্থাগার রয়েছে। বই নিয়ে পড়ে আবার ওইখানে ফেরত দিতে পারবেন। যদি এমন হতো, আমাদের দেশে রাস্তায় এ রকম বইয়ের গ্রন্থাগার থাকত? সিডনিতে আসা মানেই সিডনি ডার্লিং হারবারে বেড়াতে আসা। এখানেই সিডনির অনেক বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানের অবস্থান। যেমন সিডনি হারবার ব্রিজ, সিডনি অপেরা হাউস।
১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সিডনি অপেরা হাউস পৃথিবীর অন্যতম এবং বিখ্যাত বিল্ডিং। সিডনি অপেরা হাউসের ভেতরের সৌন্দর্য তো আরও সুন্দর। তবে রাতের বেলা সিডনি অপেরা হাউস না দেখলে কেমন যেন একটা না দেখার তৃষ্ণা থেকে যায়।
সিডনি হারবার ব্রিজ বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান। ১৯২৩ সালে কাজ শুরু হয়ে ১৯৩২ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। এই ব্রিজটি ১৩৪ মিটার উঁচু ও এক হাজার ১৪৮ মিটার লম্বা। এটি তৈরি করতে গিয়ে কিছু লোক প্রাণ হারান। আপনি চাইলে ব্রিজের ওপর থেকে সিডনির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
সিডনি যাবেন আর বন্ডি বিচ যাবেন না, সেটা কী করে হয়? শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে অপরূপ এই বিচ। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে করেই যেতে পারেন। বড় বড় ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ না করার লোভ আপনি সামলাতে পারবেন না। আর এখানে এসে একটা সেলফি না তুললে কি হয়? সিডনির প্রত্যেকটা বিচেই আপনি পিকনিক করতে পারবেন। ইলেকট্রিক চুল্লিতে বারবিকিউ করা যাবে। বিশুদ্ধ পানি পান এবং টয়লেটের সুব্যবস্থাও আছে। আপনি চাইলে কিছু মশলা আর মুরগি কিনে নিয়ে যেতে পারেন। নিজের মতো বারবিকিউ করে সমুদ্রের পাড়ে বসে খেতে পারেন। বাসার বাইরে যদি এত সুন্দর ব্যবস্থা থাকে তাহলে আনন্দের আর শেষ কোথায় বলুন।
সিডনিতে খাবারেরও বৈচিত্র্যের শেষ নেই। কোন দেশের খাবার খেতে চান? চায়না, ভিয়েতনামিজ, ইতালিয়ান, জার্মানি, আরব দেশের খাবার নাকি বাংলাদেশের? সিডনি এলে মনে হবে সারাবিশ্ব ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এক জায়গায় এত দেশের খাবারের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ খুব কম শহরেই পাওয়া যায়।
পাহাড় দেখতে আমরা কে খুশি না হই? কিন্তু সেটা যদি নীল পাহাড় হয়, তাহলে তো মজার শেষ নেই। এখানে এলে আপনি নীল পাহাড় দেখার সুযোগ পাবেন। সিডনি থেকে গাড়ি করে এক থেকে দেড় ঘণ্টার ড্রাইভে নীল পাহাড়ে যাওয়া যায়। নীল পানির সমুদ্র, নীল পাহাড় আর নীল আকাশ যদি ভ্রমণের সঙ্গী হয়, তাহলে এর চেয়ে আনন্দদায়ক ভ্রমণ আর কী হতে পারে? তবে নীল কাপড়ের জামা-কাপড় পরে এসব জায়গা ঘুরে বেড়ালে কিন্তু দারুণ লাগবে। অস্ট্রেলিয়ার লোকজন কফি সংস্কৃতিতে আবদ্ধ। মিটিং করবেন তো কফি, বেড়াতে গেলেন কফি, আড্ডা দেবেন কফি। কফিপাগল অস্ট্রেলিয়ানরা। তবে অনেক মজার কফির স্বাদ নিতে ভুলবেন না। আপনি বেড়াতে এলে যদি দেখা হয়ে যায়, এক কাপ কফি খাওয়াব আপনাকে।